আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় বেকারত্বের সংখ্যা চরম আকারে ধারণ করেছে। চলতি আশ্বিন-কার্তিম মৌসুমে কাজ না পেয়ে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার বসে আসে। পরিবেশ বিপর্যয়, ধানের পরিবর্তে চিংড়ি চাষ, মিলকার খানা গড়ে না উঠা, আন্তজার্তিক শ্রম বাজারে মান্দা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারায় বেকারত্বেও সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে বিগত এক বছরে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ৮ ভাগ। অন্য দিকে, শ্রমশক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ২ দশমিক ৩ ভাগ। এক বছরে মোট ১৬ লাখ নতুন শ্রম শক্তি যোগ হয়েছে। কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়াতে উপকুলীয় জেলাটি দিন দিন বেকার শ্রমিকের সংখ্যা প্রকট আককার ধারণ করেছে। মাসের ১৫ দিনই কাজ না পেয়ে দারুণ কষ্টে দিনাপতিত করছে অনেকে। কর্মসংস্থানের অভাবে অনেক শ্রমিক এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। আগামি দু মাসও তেমন কাজ হবে না বলে শ্রমিকরা দুচিন্তায়। কয়েক জন শ্রমিকের সাথে কথা বলে এমন তথ্য উঠে এসেছে। হিসাব মতে জেলার ২২ লক্ষ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণী পেষার পাঁচ লক্ষাধীক মৌসুমি বেকার রয়েছে। এদেরকে কর্মসংস্থানের আওয়তায় আনতে পারলে জেলার অবস্থা পাল্টে যাবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
মতলেব গাজী। শহরের সুলতান পুর এলাকায় যার বসবান। ৪০ বছর ধরে তিনি শ্রম বিক্রি করে সংসার চালান। বর্তমানে তার বয়স ৭০ বছর। বয়সভারে ও তিনি স্বাচ্ছন্দে শ্রমের মাধ্যমে প্রতি দিন ২ থেকে ৩ শ টাকা উপার্জন করে সংসার চালান। কিন্তু শহরে শ্রমিকের চাহিদা কম থাকায় বর্তমানে মাসের ১৫ দিনই বেকার হয়ে তাকে বসে থাকতে হয়।
কথা হয় আশাশুনির বুধহাটা গ্রামের ওজিয়ার রহমানের সাথে। এলাকাতে কাজ না পেয়ে শহরের সুলতান পুরে সরকারী জমিতে তার বসবাস। ৩৫ বছর ধরে তিনি শ্রমিক হিসেবে শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। তারও অভিযোগ মাসের বেশির ভাগ সময়ে কাজ না পেয়ে বসে থাকতে হয়।
শ্যামনগর কৈখালি এলাকা থেকে কাজের সন্ধানে সাতক্ষীরা শহরে এসেছেন আবু সাইদ (৫০)। বর্তমানে তিনি শহরের কামাল নগরে থাকেন। সদরের ধুলিহর গ্রামের পরিতোষ (৫০),আশাশুনির সোভানালি এলাকার কামরুল ইসলাম,শ্যামনগরের পরানপুর গ্রামের হাবিবুর থাকে শহরের পলাশপুল এলাকায়,এরা সকলেই শহরের পাকাপুলের মোড়ে প্রতিদিন সকালে ঝুড়ি কোদাল নিয়ে শ্রম বিক্রি করতে আসেন। কথা হয় তাদের সাথে। একটাই অভিযোগ তাদের কাজ চাই। কাজ না পেলে সংসার চালাবো কি করে। আগের মত এখন আর কাজ হয় না। এমন অবস্থা জেলার অনেকেরই। সংশ্লিষ্টরা বলছে ধান উঠতে শুরু করলে মান্দা কেটে যাবে। তখন শ্রমিক সংকট দেখা দেবে।
অর্থনীতির নানা সূচকে বাংলাদেশ চোখে পড়ার মতো সাফল্য দেখালেও বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি তা নিষ্প্রভ করে দিচ্ছে। প্রতি বছর জেলাতে যে পরিমাণ শ্রমশক্তি যুক্ত হচ্ছে কর্মসংস্থানের বাজারে তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে বেকার থাকতে হচ্ছে। দেশে বেকারের সংখ্যা এখন ২৬ লাখ ৮০ হাজার। যা মোট জনসংখ্যার দেড় শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশের মোট বেকার সংখ্যা দুনিয়ার বহু দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপে বেকারত্ব বৃদ্ধির জানান দিয়ে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ১৪ লাখ শ্রমশক্তি যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এ সময় দেশের অভ্যন্তরে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ১৩ লাখ। ফলে এক বছরেই প্রায় এক লাখ বেকার বেড়েছে। সব মিলিয়ে দেশে বেকার সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার। বেকারত্বের হার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার বাড়ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তরুণ বেকারদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিতের হার ছিল ১২ দশমিক ১১ ভাগ। ২০১৬-১৭ অর্থবছর এই হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ভাগে। সংখ্যার হিসাবে ৩ লাখ ৯০ হাজার তরুণ উচ্চশিক্ষিত বেকার রয়েছে যাদের বয়স ৩০ বছরের নিচে। তাদের মধ্যে ১১ দশমিক ২ ভাগ ২ বছরের বেশি সময় ধরে বেকার রয়েছেন। প্রকৃত বেকারের সংখ্যা আরও বিশাল। দেশে উচ্চশিক্ষার হার দ্রুত বাড়লেও সে হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি না পাওয়ায় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের হার বাংলাদেশেই বেশি। ২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা ও ভুটান এ হার কমিয়ে এনেছে। ভারতে স্থিতিশীল রয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বিশ্বজুড়ে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অবস্থা এবং পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি কিংবা আগামী বছরেও হারটি কমবে না। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বেকারের সর্বোচ্চ হারের দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে।
আইএলওর প্রতিবেদন বলছে, ২০১৭ সালে বৈশ্বিক বেকারত্বের হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি বছর বেকারত্বের হার কমে সাড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। তবে কর্মবাজারে কাজ খুঁজতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়বে। ফলে সংখ্যার দিক দিয়ে বেকারত্বের হার গত বছরের চেয়ে বেশি হবে। ২০১৯ সালেও বেকারত্বের হার কমবে
এদিকে সাতক্ষীরা জেলাতে বেকারত্ব কমানে সরকার নানা মুখি উদ্যোগের কথা বলছে।
বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মসংস্থান তৈরীর লক্ষ্যে সাতক্ষীরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা কারিগরি প্রক্ষণ কেন্দ্র বিনেরপোতা, সাতক্ষীরার অধ্যক্ষ মোঃ মুছাব্বেরুজ্জামান জানান, বেকার নারী,পুরুষ ও যুবক যুবতীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিাতে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি সাতক্ষীরা কারিগরি প্রক্ষণ কেন্দ্রের সকল কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারলে বেকারত্ব অনেকাংশ হ্রাস পাবে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন জানান, সাতক্ষীরা জেলাতে বেকারত্ব কমানে সরকার নানা মুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে,যুবউন্নয়ন,সমাজসেবা,ন্যাশনালসার্ভিস সহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া আরো বেকার জনবল স্বালম্বী করতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে।
Check Also
সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন
ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা: ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …