ঘুষ গ্রহণে দুদকের মামলা জামিন ছাড়াই বহাল তবিয়তে নাজমুল হুদা দম্পতি: আদালতের রায় বাতিল করায় সিনহার বিরুদ্ধে মামলা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ গ্রহণের মামলায় দীর্ঘদিন ধরে জামিন ছাড়াই বহাল তবিয়তে রয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা। ইতিমধ্যে আদালত নাজমুল হুদা দম্পতির ‘জামিন বহাল না’ থাকার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের নজরে এনেছেন। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তদন্তাধীন এ মামলায় জামিন না নিলে তদন্ত কর্মকর্তা চাইলে যে কোনো সময় নাজমুল হুদা দম্পতিকে গ্রেফতার করতে পারেন বলে দুদকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র  নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক আইনজীবী  বলেন, তদন্তাধীন মামলায় কোনো আসামি জামিন না নিলে তদন্ত কর্মকর্তা চাইলে যে কোনো সময় তদন্তের স্বার্থে ওই আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেন। জামিন ছাড়া কোনো আসামির বহাল তবিয়তে থাকার সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী তাদের (ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা) জামিন নেয়া উচিত। জানতে চাইলে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ  বলেন, রাজনীতির সঙ্গে আইন-আদালতের কোনো সম্পর্ক নেই।

আদালতের আদেশ অনুসারে কোনো আসামি জামিন না নিয়ে থাকলে তাকে আমরা ‘পলাতক’ বলে থাকি। আর পলাতক কোনো আসামি আইনের সুবিধা পেতে পারে না। আদালতের মাধ্যমে যতক্ষণ পর্যন্ত জামিন না নেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার আদালতে বা কোনো থানায় মামলা দায়েরেরও কোনো সুযোগ নেই। জামিন ছাড়া কোনো আসামিরই বহাল তবিয়তে থাকার আইনগত কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে এ মামলায় জামিন প্রসঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। বুধবার মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘আমি এটা (জামিন প্রসঙ্গ) নিয়ে এখন আলোচনা করতে পারব না।’ মামলার নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ মার্চ এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। ওই দিন ঢাকা মহানগর হাকিম প্রণব কুমার তার আদেশে বলেন, ‘অদ্য তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ধার্য আছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ঢাকার ক্রিমিনাল মিস পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর ৮৬/২০১৭ ও ৮৭/২০১৭ সংক্রান্তে গত ০৭/০৬/২০১৭ তারিখের আদেশে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ক্রিমিনাল মিস মামলা নম্বর ১৫৭৩৯/০৮ এবং ২৪৪০৯/২০০৯ সংক্রান্ত ২৩/০৩/২০১৬ তারিখে প্রচারিত জাজমেন্টে আসামি সিগমা হুমা ও ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার পক্ষে মামলার কার্যক্রম কুয়াশ (Quash) করে প্রদত্ত আদেশ সেট-এসাইড (Set-Aside) করা হয়েছে। আসামিপক্ষে নিয়োজিত বিজ্ঞ কৌঁসুলিকে অবহিত করা হোক।’

আদেশে আরও বলা হয়, ‘অদ্য আসামিপক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেই। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, আসামি নাজমুল হুদা সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল মিস মামলা নম্বর ১২৩৭/২০০৯ সংক্রান্তে ২৮/০১/২০০৯ তারিখের আদেশে তিন মাসের জামিনপ্রাপ্ত হন। পরে ২২/০৪/২০০৯ তারিখের আদেশে জামিন এক বছর বর্ধিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল মিস মামলা নম্বর ২৩৪০৯/২০০৯ সংক্রান্তে ০৭/০৭/২০১৪ তারিখের আদেশে মামলার কার্যক্রম রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয় এবং ২৩/০৩/২০১৬ তারিখের আদেশ কুয়াশ করা হয়। এরপর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ক্রিমিনাল মিস পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর ৮৭/২০১৭ সংক্রান্তে ০৭/০৬/১৭ তারিখের আদেশে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত কুয়াশ আদেশ সেট-এসাইড করা হয়।

অপর আসামি অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ক্রিমিনাল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর ৩৫০/২০০৮ সংক্রান্তে ৪ ও ৫ আগস্ট ২০০৮ তারিখের আদেশে দুই মাস জামিনপ্রাপ্ত হন। এরপর সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল মিস মামলা নম্বর ১৫৭৩৯/২০১৮ সংক্রান্তে ২০/০৮/২০০৮ তারিখের আদেশে আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত জামিন রুল নিষ্পত্তিকাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয় এবং মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ০৭/০৭/২০১৪ তারিখের আদেশে মামলার কার্যক্রম রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।

এরপর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ক্রিমিনাল মিস পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর ৮৬/২০১৭ সংক্রান্তে ০৭/০৬/২০১৭ তারিখের আদেশে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত কুয়াশ আদেশ সেট-এসাইড করা হয়। অর্থাৎ আসামি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার জামিন সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল মিস মামলা নম্বর ১২৩৭/২০০৯ সংক্রান্তে ২২/০৪/২০০৯ তারিখের আদেশে এক বছর বর্ধিত করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে জামিন বর্ধিতকরণ সংক্রান্ত কোনো আদেশ পাওয়া যায়নি এবং অপর আসামি অ্যাডভোকেট সিগমা হুদার জামিন বর্তমানে বহাল নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হোক। আদেশের অনুলিপি দুদক মহাপরিচালক (তদন্ত) বরাবর প্রেরণ করা হোক।’

সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু দুদক এদিন তা দাখিল করেনি। আর ইতিমধ্যেই আসামি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও অ্যাডভোকেট সিগমা হুদার পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ক্রিমিনাল রিভিউ পিটিশন নম্বর ১৩/২০১৮ ও ১৪/২০১৮ দায়ের করা হয়েছে। আগামী ২৯ অক্টোবর উচ্চ আদালতের আদেশ প্রাপ্তি ও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

মামলার নথিপত্র সূত্রে আরও জানা যায়, যমুনা সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্গানেট ওয়ান লিমিটেডকে নিযুক্ত করা হয়। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা তার স্ত্রীর মালিকানায় পরিচালিত ‘খবরের অন্তরালে’ পত্রিকার হিসাবে জমা দেয়ার জন্য বলেন। মাসিক কিস্তিতে দাবিকৃত টাকা না দেয়া হলে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি নিয়োগ বাতিল করে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দেন।

অবশেষে নিরুপায় হয়ে ব্যাপক ব্যবসায়ী ক্ষতি বিবেচনা করে মাসিক ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ প্রদানের প্রস্তাব করলে নাজমুল হুদা দম্পতি তাতে রাজি হন। এরপর তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্গানেট ওয়ান লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকের কাছ থেকে ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চেকের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালের ১৮ জুন রাজধানীর মতিঝিল থানায় এ অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন মামলাটি দায়ের করেন। যুগান্তর

 

—0———–

হুদা দম্পতির খালাসের রায় বাতিল

এর আগে ১লা ডিসেম্বর ২০১৪ সালের তার বিরুদ্ধ এসকে সিনহার রায় পুরনায় তুলে ধরা হল

  দেখেছেন
স্টাফ রিপোর্টার : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রীকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে পুনরায় এ মামলার শুনানি করার জন্যও আদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

আদালত সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ দেওয়ার আশ্বাসে আকতার হোসেন লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর জাহির হোসেনের কাছ থেকে নাজমুল হুদা ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন।

পরবর্তীতে নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে এ অভিযোগে ২০০৭ সালের ২১ মার্চ দুদক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ধানমণ্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার শুনানি শেষে ২০০৭ সালের ২৬ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত এ মামলায় নাজমুল হুদাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও আড়াই কোটি টাকা জরিমানা এবং তার স্ত্রীকে সিগমা হুদাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে নাজমুল হুদা ও সিগমা হুদা হাইকোর্টে আপিল করেন। আদালত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাইকোর্ট এ মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে খালাসের রায় দেন।

পরে দুদক ও রাষ্টপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে শুনানি শেষে সোমবার হাইকোর্টের রায় বাতিল করে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।