ক্রাইমবার্তা ডেস্ক:যুদ্ধ ও সশস্ত্র সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে যৌন নিপীড়নকে হাতিয়ার করার প্রচেষ্টা বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনিস মুকওয়েগে। যুদ্ধে যৌন নিপীড়নের শিকার লাখো মানুষকে চিকিৎসা দিয়েছেন মুকওয়েগে ও তার সহকারীরা। গত প্রায় ১০ বছর ধরে শান্তিতে সম্ভাব্য নোবেলজয়ীর তালিকায় তার নাম আসছিলো। অন্যদিকে ইয়াজিদি তরুণী নাদিয়া সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে নিজেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং অন্য ধর্ষণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। সাহসীভাবে সেইসব ঘটনা বর্ণনা করেছেন তিনি। ২০১৪ সালের আগস্টে জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সদস্যরা ইরাকে অন্য ইয়াজিদি নারীদের সঙ্গে নাদিয়া মুরাদকেও অপহরণ করেছিল। সিনজারের কোচো থেকে তাদেরকে অপহরণ করা হয়। আইএস-এর সদস্যরা নাদিয়ার ছয় ভাই ও মাকে হত্যা করেছিল। তার বোনদেরকেও অপহরণ করে আইএস। ধর্ষণের শিকার হওয়া ও অন্যদের ধর্ষণের শিকার হতে দেখা এ নারী সেই সহিংসতার কথা বর্ণনা করেছিলেন।
শুক্রবার নোবেল কমিটি তাদেরকে পুরস্কারজয়ী ঘোষণা করতে গিয়ে বলে, ‘তারা দুইজনই সাহসীভাবে যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন।’
২৫ বছর বয়সী নাদিয়া মুরাদ শান্তিতে নোবেল পাওয়া দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি। এর আগে, ১৭ বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে শান্তিতে নোবেল পান মালালা ইউসুফজাই। ২০১৪ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
১৯০১ সাল থেকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। তখন থেকে এ পর্যন্ত ৯৯ বার নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হলো। পুরস্কারের ছয়টি ক্যাটাগরির মধ্যে পাঁচটি ক্যাটাগরির বিজয়ী সুইডিশ নোবেল কমিটি ঘোষণা করলেও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা নরওয়ে কমিটি দিয়ে থাকে। এ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন একজন। তিনি হলেন ভিয়েতনামের বিপ্লবী, কূটনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব লি ডাক থো। এ পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তদের মধ্যে ২৪টি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল তার মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে তার উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই বিপুল অর্থ দিয়েই ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান। ১৯৬৮ তে তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি। তবে পুরস্কার ঘোষণার আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন আলফ্রেড নোবেল। আইনসভার অনুমোদন শেষে তার উইল অনুযায়ী নোবেল ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। তাদের ওপর দায়িত্ব বর্তায় আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করা এবং নোবেল পুরষ্কারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা। আর বিজয়ী নির্বাচনের দায়িত্ব সুইডিশ একাডেমি আর নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে ভাগ করে দেওয়া হয়।
প্রতি বছর ছয়টি ক্যাটাগরিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলেও সুইডিশ নোবেল অ্যাকাডেমিতে একটি যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় তৈরি হওয়া অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে এ বছরের সাহিত্যে নোবেল স্থগিত করা হয়। জানানো হয়, ২০১৯ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী নাম ঘোষণার সময় ২০১৮ সালের বিজয়ীর নামও ঘোষণা করা হবে।
সুইডিশ অ্যাকাডেমির তহবিলে পরিচালিত সাংস্কৃতিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ফরাসি আলোকচিত্রী জঁ-ক্লদ আরনল্টের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল গত বছর শেষের দিকে। আরনল্ট হলেন সুইডিশ অ্যাকাডেমির সদস্য ক্যাটারিনা ফ্রস্টেনসনের স্বামী। যৌন হয়রানি নিয়ে সরব হওয়ার আন্দোলন #মি টু ক্যাম্পেইনে অনুপ্রাণিত হয়ে গত নভেম্বরে আরনল্টের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন ১৮ নারী। এরপর আরনল্টের স্ত্রী ফ্রস্টেনসনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠে। তবে ফ্রস্টেনসনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে ভোট দেয় অ্যাকাডেমি। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি থেকে তিন সদস্য ক্লাস অস্টেরগ্রেন,কোজেল ইসেপমার্ক এবং পিটার ইংলুন্ড সরে দাঁড়ান। এরপর এপ্রিলে পদত্যাগ করেন ফ্রস্টেনসন। আর তার কিছুক্ষণ পরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন অ্যাকাডেমি প্রধান দানিয়ুস।
এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম প্রকাশ না করলেও তালিকায় ৩৩১ জনের নাম রয়েছে বলে জানিয়েছিল কমিটি। এরমধ্যে ২১৬ জন ব্যক্তি ও ১১৫টি প্রতিষ্ঠান ছিল। প্রতি বছরের মতো এবারও সম্ভাব্য বিজয়ীদের নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সম্ভাব্য বিজয়ীদের তালিকায় উঠে আসে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা ম্যার্কেল, কংগোর ডাক্তার ডেনিস মুকওয়েজ, কারারুদ্ধ সৌদি ব্লগার রাফি বাদাউইয়েসহ অনেকের নাম।