প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন নেতার হতাশা#কোটার দাবিতে শাহবাগে অবরোধ চরম জনদুর্ভোগ#সরকার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততিদের আন্দোলনে নামিয়েছে বিএনপি

ক্রাইমবার্তা রিপোট: কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেছেন, কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমরা হতাশ। বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে যে আন্দোলনটি শুরু করেছিলাম, তাতে একটি বারও কোটার বাতিল চাইনি। বিশ্বগণমাধ্যমেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে আমরা কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করে আসছি। কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে আমরা ৫ দফা দাবিও দিয়েছিলাম।

নুরুল হক আরো বলেন, মন্ত্রিপরিষদ কেবিনেট থেকে একটি সিদ্ধান্ত আসলো যে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা থাকবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বললেন এটা আংশিক সিদ্ধান্ত। আমরা বারবার বলেছি সকল ধরনের সরকারি নিয়োগে বিদ্যমান  বৈষম্যমূলক ও অসামঞ্জস্য কোটাকে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন কোটা আন্দোলন করেছে সেজন্য বাতিল করা হয়েছে। আর যদি কারো কোটার প্রয়োজন হয়, আবার আন্দোলন করলে বিবেচনায় নেয়া হবে। এতে বুঝা যাচ্ছে আন্দোলনের জন্য উসকে দেয়া হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি না যে সরকার আন্তরিকভাবে ছাত্রদের দাবি আমলে নিয়েছে কি না। তারপরও আমরা সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাবো ছাত্রসমাজ কারো প্রতিপক্ষ নয়।

আমরা তো কোটা সংস্কার চেয়েছিলাম। ৭ মাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। আন্দোলন বন্ধ করার জন্য আমাদেরকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দেয়া হলো। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করা হলো। আমরা তারপর বলেছি যে ছাত্রসমাজ ৩টি দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবি, ৫ দফার আলোকে প্রজ্ঞাপন ও ছাত্রদের ওপর যারা হামলা করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং ছাত্রদের ওপর যে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার চেয়েছেন বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ৩ অক্টোবর সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোটা যদি না থাকে সংস্কারের প্রশ্ন উঠবে না। আর যদি কারো কোটা চায় তাহলে কোটা চাই বলে আন্দোলন করতে হবে। আর আন্দোলন যদি ভালোভাবে করতে পারে, তখন ভেবে চিন্তে দেখবো কি করা যায়। এরপর যদি কেউ কোন কোটা চায় তাহলে আন্দোলন করতে হবে, বলতে হবে আমি এই কোটা চাই। সেটা আগে বলুক, আন্দোলন করুক। আন্দোলন ছাড়া দেব না।

–0——-

কোটার দাবিতে শাহবাগে অবরোধ চরম জনদুর্ভোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, কোটা বহাল চাইলে আন্দোলন করতে হবে। সেই আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে কোটা পুনর্বহালের দাবিতে । এর আগে বুধবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। তারা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করার সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ করছে। অবরোধের ফলে শাহবাগে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের দাবিতে শাহবাগে দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। আজ শুক্রবার একই স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় তারা। রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক শাহবাগে অবরোধের ফলে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যাল, বারডেম হাসপাতালে আগত রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এছাড়া মতিঝিল থেকে গাবতলী, ধানমন্ডি ও মিরপুর সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো নিউমার্কেট হয়ে চলাচল করছে।

বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় কোটা বাতিলের গ্রেজেট প্রকাশ করে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে। কিন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকবে না। এটা হতে পারে না। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতেও আগের মতো ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকতে হবে। নইলে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’

এদিকে দাবি আদায়ে আগামীকাল শনিবার বিকাল ৩ টায় শাহবাগ মোড়ে মহাসমাবেশ করবে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম আল সনেট এই তথ্য জানিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ সরকারের কাছে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

দাবিগুলো হচ্ছে-১. সামাজিক মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। ২.মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।

৩. ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিসিএসসহ সব চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়ন করতে হবে। ৪. মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। ৫. স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও বংশধরদের চিহ্নিত করে সরকারি সব চাকরি থেকে বহিষ্কার, নাগরিকত্ব বাতিল ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের অনুকূলে ফেরত নিতে হবে ৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷ শাহবাগ থানা পুলিশ জানান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেছেন। আপাতত যান চলাচল বন্ধ। আমরা তাদের চলে যেতে অনুরোধ করেছি।

এদিকে, আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক অলিক ¤্রি বলেন, ‘আগামী তিন দিনের মধ্যে আদিবাসী কোটা ৫ শতাংশ না রাখলে আমরা কঠোর আন্দোলনে নামব।’

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বহুদিন ধরেই আন্দোলন করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাদের দাবি ছিল, কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা। আন্দোলনের মুখে ২ জুলাই গঠন করা হয় কোটা সংস্কার কমিটি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের নেতৃত্বাধীন কমিটি। সচিব কমিটি মোট তিনটি সুপারিশ করেছিল। পরে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন শেষে তা আসে মন্ত্রিসভায়।

শেষে গতকাল সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। তবে সচিব কমিটি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির জন্য কোটা বাতিলের ব্যাপারে কোনো সুপারিশ করেনি। ফলে এ ক্ষেত্রে বর্তমানে যে নিয়ম বহাল রয়েছে, তা-ই থাকবে।

সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, ‘নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সকল নিয়োগ এখন থেকে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে হবে।’ তিনি বলেন, সরকার সময়ে সময়ে সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখতে পারবে এবং তাদের জন্য কোটা নির্ধারণ করতে পারবে।’

কোটা চাই আন্দোলন করলে পুনরায় কোটা বলবদ করা যায় কিনা ভেবে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোটা চাই আন্দোলন করলে ভেবে দেখা হবে। আন্দোলন ছাড়া দিব না। বুধবার গণভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে করা এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সব ধরনের কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল হবে। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে পুরোপুরি বাতিল করাটা কি একটু বেশি হয়ে গেল কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে, তখন ছাত্রছাত্রীদের ডেকে আমরা কথা কলেছি। একজন আমাকে বলেছে, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধার নাতি, কোটা চাই না। আরেক মেয়ে বলেছে, আমরা নারী কোটা চাই না। আমরা যোগ্যতা দিয়ে লড়াই করে চাকরি নিব, কোটা চাই না। তাদের এই আত্মবিশ্বাসকে আমি স্বাগত জানাই। এই কারণেই আমি সংস্কার বাদ দিয়ে কোটা বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছি। এখন যদি আবার কেউ মনে করে কোটা প্রয়োজন। তাহলে কোটা চাই আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করলে ভেবে দেখা হবে। আন্দোলন ছাড়া দিব না।

-0-

কাল্পনিক মামলার বন্যায় দেশকে  ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে – বিএনপি

 

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো কারণ ছাড়াই কাল্পনিক মামলার বন্যায় দেশকে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন প্রতিনিয়ত হামলা-মামলার শিকার। কোনো কারণ ছাড়াই কাল্পনিক মামলার বন্যায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে দেশকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে এই ভোটারবিহীন সরকার। বাড়িঘর থেকে তুলে নিয়ে খালে বিলের কাছে নামিয়ে দিয়ে বলছে চলে যাও। অতপর তাদের পিছন থেকে গুলি করা  হচ্ছে। কোটা সংস্কারের দাবি সরকার  বাস্তবায়িত হতে দেবে না এমন সংশয় প্রকাশ করে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন আন্দোলন করো। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততিদের বসিয়েছেন। সরকার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েই তাদের বসিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

রিজভী অভিযোগ করেন, ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে নিয়ে কোটা বাতিল করা হয়েছে। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বেশ গর্বের সাথে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর আবার সেই কোটা ফেরত আনতে আন্দোলন করতে বলেছেন তিনিই। রিজভী সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা নিয়ে আন্দোলন করার সময় বাতিল চায়নি; তারপরেও সিদ্ধান্ত হয়েছে কোটা তুলেনেওয়ার। আবার এদিকে ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-নাতি-নাতনীদেরকেও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, উপজাতীয়দের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে- এটা দ্বিচারিতা।

তিনি বলেন, সরকার এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে এবং উদ্দেশ্য এটাকে বিভ্রান্ত করা। এটা যাতে বাস্তবায়িত না হয় সরকারই এই ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, উনি কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপারে এতো উৎসাহী? কেন পুলিশকে লাগামছাড়া লাইসেন্স দিয়েছেন পত্রিকায় অফিসে ঢুকে কাগজপত্র সিজ করার এবং গ্রেপ্তার করার- কেন এতো উৎসাহী। অন্য গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের কোনো দৃষ্টান্ত নেই।

রিজভী বলেন, কেউ  মিথ্য তথ্য প্রকাশ করলে তার জন্য প্রচলিত আইনই আছে। প্রধানমন্ত্রী কালকে নিজেও বিসিসির একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করার জন্য তারা সবাই রিজাইন দিয়েছে, সেখানে প্রচালিত আইনই আছে। যিনি মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেন তিনি ক্ষমা চান, প্রয়োজনে রিজাইন করেন। কিন্তু শেখ হাসিনার দেশে নিয়ম তো তা থাকবে না। এখানে সত্য প্রকাশ করলেই তাকে বিপদে পড়তে হবে।

‘হল-মার্কের যে অনুসন্ধানী রিপোর্ট বলুন, ব্যাংকের অর্থ লোপাটের নিউজ বলুন এইগুলো কি মিথ্যা ছিল? মিথ্যা ছিল না। সেগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী খুব ব্যথিত। আরো যেসব মহা দুর্নীতি আছে যার সাথে মহা শক্তিশালীরা জড়িত তা যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্যই সরকারের এই আইন। জনগনকে কন্ঠস্বরকে বন্ধ করার জন্য উনি কফিনের শেষ প্যারেগটি টোকার কাজটি করেছেন।

তিনি বলেন, ভোট দেওয়ার অধিকার- এটা হচ্ছে ভোটারদের; এটা সত্য জিনিস। এই অধিকার এখন ভোটারদের নেই। সাংবাদিকদের সেটা প্রকাশ করার কোনো অধিকার থাকবে না। সেই অধিকার বন্ধ করার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। অর্থাৎ এই সরকারের দুর্নীতি, মেগা দুর্নীতি যাতে প্রকাশ করা না হয় সেজন্য এই আইন করা হয়েছে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর চালানো পুলিশী অত্যাচারের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, কোনো ওয়ার্ডেই তিন জন নেতাকর্মী একসাথে চলাফেরা করতে পারছে না। এর ওপর ক্রমাগত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ির সামনে রাতের অন্ধকারে এসে থামে কালো টিনটেড গ্লাস দিয়ে ঢাকা মাইক্রোবাস। কর্কশ কড়া নাড়ার শব্দে ভেঙে চুরে খান খান হয়ে যায় রাতের নিস্তবদ্ধতা। বাসাবাড়ি তছনছ করে চলে চিরুনী তল্লাশি। তুলে নিয়ে যায় কিশোর, তরুণ, ছাত্রদল, যুবদল এবং অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এমনকি বয়স্ক বিএনপি নেতাকর্মীদেরও। খাল, বিল, নদীধারে মাইক্রো থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে বলে। তারপর গুলি করা হয় পেছন থেকে। তা না হলে কিছুদিনের জন্য, নয়তো চিরদিনের জন্য গুম করে অদৃশ্য করা হচ্ছে। তা না হলে লকআপে চালানো হয় অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন। বিরোধীদলের প্রতি সরকারের নীতি হচ্ছে-বিরোধী নেতাকর্মীদের ধর থেকে মুন্ডু খসিয়ে ফেলার নীতি।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিষয়ে রিজভী বলেন, এই মামলায় কয়েক দফা চার্জশিট দেওয়া এবং বিচার কার্য অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার পর বিচারিক আদালত থেকে চার্জশিট ফিরিয়ে এনে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। যা ছিল বেআইনী ও নজীরবিহীন। এতে মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মামলায় জড়ানো।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল মুফতি হান্নানকে অমানুষিক নির্যাতনের করে তাকে দিয়ে আদালতে তারেক রহমানের নাম বলানো হয়। তারেক রহমানের নাম বলানোর পর মুফতি হান্নান সুযোগ খুঁজছিলো তা প্রত্যাহারের। তা না হলে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে ক্রসফায়ারে মৃত্যুবরণ করতে হবে এই আশঙ্কায় চার্জশিট দাখিলের জন্য প্রহর গুনতে থাকে।

মুফতি হান্নানের চার্জশিট প্রত্যাহারের আবেদন তুলে ধরেন রিজভী। বলেন, অবশেষে ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সেই সুযোগ মুফতি হান্নান পেয়ে যায়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিনের আদালতে মুফতি হান্নান লিখিতভাবে জানান, ২০১১ এর ৪ এপ্রিল কাশিমপুর কারাগার থেকে এনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলগেটে জেল সুপার লিখিত কাগজ স্বাক্ষর করতে বলে। স্বাক্ষর না করলে অশ্লীল গালিগালাজ করে, বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলার কথা বলে। জেল সুপার তৌহিদ হত্যার হুমকি দেয়। দুদিন পর সিআইডির এএসপি ফজলুল কবিরসহ অন্যান্য অফিসাররা এবং আগে থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের রুমে বসে থাকা কাহার আকন্দ মুফতি হান্নানের দিকে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়। সেখানে তারেক রহমান, হারিস চৌধুরী, পিন্টু ও বাবরসহ অনেকের নাম জড়িত করা হয়েছে দেখতে পাই। অতঃপর জবানবন্দীতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে জেলের ভিতরে হত্যা করাসহ রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর রাত ১১টার দিকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বললে আমি অস্বীকার করি। মুফতি হান্নানের উক্তি যে- ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে উপস্থিত করার আগে বিভিন্ন সময় তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। ফজলুল কবির ও কাহার আকন্দ দুজনেই চোখে কালো কাপড় বেঁধে র‌্যাবের কাছে নিয়ে যেতো। এভাবে নির্যাতনের অভিনব কায়দা প্রয়োগ করে মুফতি হান্নানের নিকট থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চালানো হয়।

বুধবার সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচিতে ঠাকুরগাঁও, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, মুন্সিগঞ্জ, ফেনী ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশি হামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানান রিজভী।

সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল হোসেন প্রমুখ।

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের বার্ষিক পরিকল্পনা ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম 

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা জেলা শাখার উদ্যোগে উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্যদের নিয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।