জাফর ইকবাল : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত ও একতরফা দশম সংসদ নির্বাচনের ৫ বছর পূর্ণ হতে মাত্র তিন মাস (৯০ দিন) বাকি আছে। সেই হিসাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাউন ডাউন শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ এখনো তৈরিই হয়নি। সারাদেশে একতরফা প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে সরকারি দল আ’লীগ ও তাদের মিত্ররা। ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড আর বিলবোর্ডে শোভা পাচ্ছে শুধুই নৌকার প্রচারণা। অন্যদিকে বিরোধীরা ব্যস্ত মামলা হামলা আর নির্যাতন মোকাবিলায়। বিরোধীরা সভা-সমাবেশও করতে পারছেনা। জোটের শীর্ষ নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। তাকে হাস্যকর মামলায় দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস ধরে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত দলগুলো বলছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেনা। এছাড়া নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, ইসি পুনর্গঠন, বিরোধী নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহারসহ রয়েছে বেশ কিছু দাবি দাওয়া। সরকারি দল বলছে, সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীনদের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেউই নির্বাচন ঠেকাতে পারবেনা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি জোট ও বিরোধী জোট যেভাবে নিজেদের বক্তব্যে অটুট সেখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আরো গভীর হচ্ছে। শহরে এমনকি গ্রামে সবাই একবাক্যেই বলছে দেশে নির্বাচন হবে বলে মনে হয়না। তাই এ মুহূর্তে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না আসলে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়। ক্ষমতাসীন দল সভা-সমাবেশে যাই বলুক তাদের ভেতরে ভেতরে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারে থাকলে সব সময় মনে করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা বোধহয় চিরদিনের জন্য সরকারে আছি। রাজনীতি একটি গতিশীল বিজ্ঞান। কিচ্ছু করতে পারবেন না। এক মিনিটের ব্যবধানে আপনারা বাধ্য হবেন সংলাপে বসতে, বাধ্য হবেন আমাদের দাবি মেনে নিতে। তার কারণ যদি জোর করে আপনারা মনে করেন সরকারে থাকবেন এবার সেটা সম্ভবপর হবে না। আমি বলেছি তো আমাদেরকে ঘরে বন্দী রেখে আপনারা এককভাবে নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। আর মনে করছেন যে, আপনারা সফল হবেন। আপনাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েস অব আমেরিকাকে এক ইন্টারভিউতে বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য খুব সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। কথাটা সত্য নয়। বাংলাদেশে কোনো সাধারণ নির্বাচন করার ন্যূনতম পরিবেশ এখন নেই। বরং বলব, এই পরিবেশকে সুপরিকল্পিতভাবে সরকার নষ্ট করার জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। যার কারণে শুধু রাজনীতি নয়, সারাদেশের ওয়ার্ড লেভেল পর্যন্ত আমাদের যত সক্রিয় কর্মী-নেতা যারা আছেন তাদের সবাইকে ধড়পাকড় করছে। এমনকী রাজধানীর হাতিরঝিল একটা মামলায় আমাকেসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের সকল নেতাকে আসামী করা হয়েছে। কাল্পনিক, ভুঁতড়ে, মিথ্যা, যে ঘটনা ঘটেনি তাকে সাজিয়ে একটা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের ভোটের যে ন্যূনতম পরিবেশ থাকুক সেটা সরকার চায় না। কেন চায় না? তাদের উদ্দেশ্য খুব খারাপ। তারা আগের মতো একটা নির্বাচন করতে চান, একদলীয়ভাবে একটা নির্বাচন করতে চান, বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে চান। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, বাংলাদেশের মাটিতে এটা আর কোনোদিন হতে দেয়া হবে না।
জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার নেত্রী এডভোকেট সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। যদি সত্যিকার অর্থেই তারা মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেন, তাহলে তারা জনগণকে বিপদে ফেলবেন কেন?
আর সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এবার সবার দাবি হওয়া উচিৎ একটাই, ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’। অপরদিকে সুজন সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমদ মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনে এ মুহূর্তে জনগণের আন্দোলনে নামা উচিৎ। সেই সাথে ইভিএম সংযুক্ত করে আরপিও সংশোধনের সমালোচনা করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, আইনকে অস্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে। এসব কিছ্ ুকরা হচ্ছে নির্বাচন বানচালের জন্যই।
সূত্র মতে, রাজনীতিতে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। যদিও ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- কেউ নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। বর্তমান সরকারের অধীনেই সংবিধান অনুযায়ী যথা সময়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিপরিষদ ছোট করার ও সংযোজন-বিয়োজনের আভাস দেয়া হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন আদৌ হবে কি না- এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও সংশয় আছে। এর পেছনে নানা কারণও আছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদিও জোর দিয়ে বলা হচ্ছে- ‘নির্বাচন ঠেকানোর ক্ষমতা কারো নেই। উত্তরপাড়া থেকে এখন আর কেউ আসবে না। উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের অধীনে ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনে যায়নি বিএনপি-জামায়াতসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। একতরফা নির্বাচন বর্জন করেছিল তারা। এমন নির্বাচন হলে এবারও সেই নির্বাচনে যাবে না ক্ষমতার সুবিধাভোগী নয়, এমন রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে এক তরফা নির্বাচন ঠেকাতে সংবিধান প্রণেতা ডা. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যমঞ্চ তৈরি হয়েছে। তারা যেকোনো মূল্যে নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা আদায় ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এমন পরিবেশ নিশ্চিত না করে কোনো নির্বাচন করার চেষ্টা বন্ধ করার আল্টিমেটামও দেয়া হয়েছে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যমঞ্চ থেকে। ড. কামালের আহ্বানে ২২ সেপ্টেম্বরের এই ঐক্যমঞ্চে বিএনপিসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। যা আগে কখনো দেখা যায়নি। এরশাদের সময় বৃহৎ দুটি জোট হয়েছিল। এর বাইরে জামায়াত ও জাতীয় পার্টি ছিল। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ ও সরকারের ক্ষমতার সুবিধাভোগী ছাড়া সবাই ঐক্যবদ্ধ এবং একমঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও জড়িত থাকার গুঞ্জন আছে। এমনকি বিভিন্ন এনজিও, বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ীরাও ডা. কামালের সঙ্গে আছেন বলে জানা যাচ্ছে। যা সরকারের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বিএনপি বলছে, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে শেখ হাসিনার অধীনে এ দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কারাগারে আদালত বসিয়ে বিচার ও চিকিৎসার নামে তেলেসমাতি চলছে বলেও দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা ৫ দফা দাবি দিয়েছেন। কিন্তু এর কোনোটিই মানতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ সরকার। এর আগে ড. কামাল বলেছেন, ‘নির্বাচন নাও হতে পারে। নির্বাচনের পরিবেশ নেই।’ অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে প্রার্থী হতে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার বাধ্যবাধকতা ইস্যুতে আদালতে একটি রিট আবেদন হয় ২০১৪ সালে, যা আজও নিষ্পত্তি হয়নি। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না করতে নির্দেশনা চেয়ে এরই মধ্যে উচ্চ আদালতে নতুন আরেকটি রিট আবেদন করা হয়েছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ, সংশয় ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে নির্বাচন নিয়ে। অনেকের মুখেই প্রশ্ন আদৌ নির্বাচন হবে তো?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকারে উপদেষ্টা নিয়োগে আইনগত কোনো বাধা নেই। কিন্তু কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দিবে না। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কোনো দাবিও ক্ষমতাসীনরা মানবে না বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের গুরুত্বপূর্ণ আরও ৩টি কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। একটি হচ্ছে, দেশে মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মির্জা ফখরুলের আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা। দ্বিতীয়ত, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পেছনে বড় একটি শক্তি এবং সবশেষ কারণ হলো, এসকে সিনহার ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের সঙ্গে ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে যে বৈঠক করে এসেছেন তা সরকারের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। আর বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ঠেকাতে সব ধরনের প্রচেষ্টা করেও তা বন্ধ করতে পারেনি সরকার। বাধ্য হয়ে সরকার বর্তমানে জাতীয় ঐক্য ইস্যুতে নমনীয় নীতি অনুসরণ করছে। যদিও বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা ও গণগ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। গত একমাসে বিরোধী নেতাকর্মীদের নামে চার হাজারের অধিক গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে এখনো হাস্যকর মামলা দেয়া হচ্ছে। এসব কোনোভাবেই নির্বাচনের লক্ষণ হতে পারেনা।
এছাড়া সরকারের জন্য এ মুহূর্তে অন্যতম গাত্রদাহ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার আত্মজীবনীমূলক বই (এ ব্রোকেন ড্রিম) প্রকাশ। সরকারের সঙ্গে তার বিরোধের নেপথ্যের কারণ, তাকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা, সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে নানামুখী চাপ দিয়ে দেশত্যাগ করানো এবং অসুস্থ সাজানোর পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে খোলামেলা লিখেছেন এসকে সিনহা তার বইয়ে। যা নতুন করে জাতীয় ও রাজনৈতিক আলোচনার ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইংরেজিতে প্রকাশিত ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’ এখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও বেশ আলোচিত হচ্ছে। ফলে বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের প্রশ্ন ও বিতর্ক ফের সামনে এসেছে। তাছাড়া, সদ্য সমাপ্ত সংসদ অধিবেশনে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সড়ক পরিবহণ আইনসহ রেকর্ড সংখ্যক বিল পাস হয়েছে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ও সরকারের শেষ সময়ে এসে এমন কর্মকা- ক্ষমতাসীনদের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর নির্বাচনের আগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে বলেই বিশ^াস অভিজ্ঞ মহলের। কিন্তু সরকারের এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। ফলে নির্বাচনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, চলতি অক্টোবর মাসেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন। তবে তারা আবার ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। সংবিধান মতে ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে তিন মাস আগে তফসিল ঘোষণার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অক্টোবরের ৫ দিন অতিবাহিত হলেও তফসিল ঘোষণা নিয়ে ইসির কোনো উদ্বেগ দেখা যাচ্ছেনা। ফলে যথা সময়ে এমনকি একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ গত বছরের প্রথম দিকে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের বৈঠকে নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বার বার। সবাইকে নিজ যোগ্যতায় আগামী নির্বাচনে পাস হয়ে আসতে হবে। দলীয় প্রধান হিসেবে তিনি কারো দায়িত্ব নেবেন না বলেও কঠোর হুঁশিয়ারি দেন ওই সময়। এমনকি নির্বাচনী ইশতেহারও তৈরির আগাম প্রস্তুতি চলছিল। অথচ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও সেই তৎপরতা এখন আর নেই। নির্বাচনের বছরে তাদের প্রস্তুতিতে ভাটা পড়েছে। যদিও দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী এখনো জনসভায় নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে, নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা ও বর্তমান এমপি-মন্ত্রী। নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় থাকার পক্ষে অনেকে। তাদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের মতো তাদেরকে ‘যেনতেনভাবে’ ক্ষমতা ধরে রাখার সুযোগ করে দেবেন। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে- তাও জানা নেই আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের। সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো যেনতেন একটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে চায় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির বেশিরভাগ নেতাই সেটা চাচ্ছেন। তারা আশা করছেন, তাদের নির্বাচনী তরী পার করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আ’লীগে নির্বাচন নিয়ে অনিহার আরেকটি কারণ হলো বিদেশীদের সমর্থন না পাওয়া। সরকার যেভাবে চাচ্ছে তাতে কেউই মত দিচ্ছেনা। এমনকি আ’লীগের বন্ধু বলে পরিচিত ভারত এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইছে। দেশটি বলছে, তারা বংলাদেশের নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। গত ২২ এপ্রিল আ’লীগের একটি দল ভারত সফরে যায়। সূত্র বলছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এই সফর ‘সুপার ফ্লপ’ হয়েছে। কারণ, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আমন্ত্রণে এই সফরের কথা বলা হলেও সফরে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বিজেপি প্রধান অমিত শাহ’র সাক্ষাৎ পাননি। গুঞ্জন আছে, ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় নির্বাচন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ স্বীকৃতি না দিলেও ভারত সমর্থন দেয়। কিন্তু সেই ভারত আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ না দেখানোয় আওয়ামী লীগ হতাশ এবং কিছুটা ক্ষুব্ধ বলে রাজনৈতিক একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যা তাদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে বেড়েছে অস্বস্তি। আরেক প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্ভবত দীর্ঘকাল এমনটি হয়নি। গত ৯ বছর ধরে আমেরিকাকে শুধু গালাগালি দিয়েই চলছিল দলটি। বিশ্বেও সবচেয়ে শক্তিশালী এই দেশটিও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে। এছাড়া যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমলওয়েলথ সবাই একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছে। সেইসাথে সরকারের উপর বেশ চাপও রয়েছে। ফলে যেনতেন নির্বাচন দিতে পারবেনা বলেই আ’লীগ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনেকটা চাপে রয়েছে।
Check Also
সাতক্ষীরা পৌর ৪ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর আমীরের শপথ
মাসুদ রানা, সাতক্ষীরা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা শহর শাখার পৌর ৪ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর …