ক্রাইমবার্তা রিপোটঃসবাইকে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছি বাংলার জনগণের জন্য। আসুন সবাই একসঙ্গে কাজ করে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’ শনিবার (৬ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসবভন গণভবনে লায়ন ও লিও মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে পালন করার পাশাপাশি ২০৪১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্বাধীনতা আগে পাকিস্তানের সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বৈষম্যের পরিসংখ্যানগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতির পিতা সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি এই দেশকে স্বাধীন করেছেন। আর স্বাধীন করেছেন বলেই আজকে আমরা জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব যেমন করতে পারছি এবং উচ্চপদে যেতে পারছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেকোন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়ী হওয়ার মতো যোগ্যতা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। কাজেই এই ধারা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে, সেটাই আমি চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার জীবনটাকে উৎসর্গ করেছি বাংলার জনগণের জন্য। এখানে আমার নিজের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। শুধু একটা জিনিসেই চাই, যে দেশকে আমার পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, যে স্বপ্নটা তার ছিল বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশকে সেভাবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা আমাদের এখানকার করণীয় বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সস্মান পাচ্ছে, স্বীকৃতি পাচ্ছে। এই সম্মানটা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। এই সম্মানটা যেন ধরে রাখতে পারি, আপনাদের কাছে সেই সহযোগিতা কামনা করি। আমাদের সবাই একসঙ্গে কাজ করে এই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।’ তিনি বলেন, ‘দেশটাকে উন্নত করতে হলে আমি মনে করি, আমাদের সব দিক থেকে এগিয়ে যেতে হবে। যেন আমাদের এই দেশ কোনোমতে পিছিয়ে না যায়। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা কেন কারো থেকে পিছিয়ে থাকবো? যে জাতি দেশের জন্য রক্ত দিতে পারে, সে জাতি কখনও পিছিয়ে থাকতে পারে না। পিছিয়ে ছিলাম একটি কারণে ১৯৭৫’এ জাতির পিতাকে হত্যার পর অবৈধভাবে যারা ক্ষমতাদখল করেছিল, স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় বসেছিল জাতির পিতা হত্যাকারীদের যারা পুরস্কৃত করেছিল, বিচার করতে দেয়নি। যারা দুর্নীতিবাজ ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী দেশের উন্নয়নে তারা কখনও মনোনিবেশ করতে পারে না।’
সমুদ্রসীমা জয় করার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা। এই সীমায় যে আমাদের অধিকার আছে ৭৫’র পরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা কেউ কখনও দাবি তোলে নাই। জাতির পিতা ৭৪সালে সমুদ্রসীমা আইন করে যান। কিন্তু ৭৫’র পরে অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারীরা এই বিষয়টা নিয়ে কোনও কাজই করেনি। আমি সরকারে আসার পরে এটা নিয়ে কাজ শুরু করি। এরপর ৮বছর ক্ষমতায় ছিলাম না। ২০০৯ সালে সরকারে এসে আমরা আবারও উদ্যোগ নেই এবং আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।’
ভারতের সাথে স্থলসীমা চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫’র পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, কেউ এই বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনাও করেনি। বোধহয় সাহসই পায়নি। কারণ অবৈধ ক্ষমতাদখলকারীদের সাহস একটু কম থাকে। কিন্তু আমরা তা বাস্তবায়ন করেছি।’ সরকার আন্তরিকভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে উন্নয়নের এ যাত্রায় দেশের সব নাগরিককে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কাউন্সিল চেয়ারপারসন লায়ন মো. আমিনুল ইসলাম লিটন এমজেএফ, সাবেক আন্তর্জাতিক পরিচালক শেখ কবীর হোসেন প্রমুখ।