ক্রাইমবার্তা রিপোটঃঢাকার ধামরাইয়ে আবুল হাসেম ওরফে হাসমি নামে এক যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় উল্টো খুন হওয়া যুবক ও তাকে হত্যার সময় বাঁচাতে আসা চারজনের নামে চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে।
শ্রীরামপুর গ্রামে এ ঘটনায় তিন দিন পার হলেও হত্যাকারীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে হত্যাকারীদের দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় খুন হওয়া যুবকের সঙ্গে থাকা দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তবে পুলিশ হত্যাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে ধামরাই থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হাসমিকে হত্যা করা হয়। মামলা না করার জন্য হত্যাকারীরা হাসমির পরিবারকে সপরিবারে মেরে ফেলার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ।
এরপর উল্টো হত্যাকারীরা হাসমিসহ তাকে বাঁচাতে যাওয়া অপর তিন যুবকসহ ৪ জনকে আসামি করে ধামরাই থানায় একটি চাঁদাবাজির অভিযোগ করলে পুলিশ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। মামলা নম্বর ৪।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর সহায়তায় খুন হওয়া হাসমির মা থানায় এসে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ২০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ মামলা গ্রহণ করলেও এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি হাসমি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত কাউকে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. ইয়াকুব আলী জীবন শ্রীরামপুর বাজারের মনোহরি ব্যবসা করেন। তার কর্মচারী মো. আব্দুল হালিম বিকাল ৫টার দিকে জানান- শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল হাসেম ওরফে হাসমি বুধবার সকাল ১০টার দিকে আমার কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে।
একথা শুনে ইয়াকুব আলী ক্ষুব্ধ হয়ে আবুল হাসেম হাসমির ফুফাত ভাই মো. শামীম হোসেনকে দিয়ে রাত ৮টার দিকে তাকে বাড়িতে ঢেকে নেন। তার বাড়ি শ্রীরামপুর গ্রাফিকস গার্মেন্ট অ্যান্ড টেক্সটাইল মিলের উত্তর পাশে। হাসমি তার ফুফাত ভাইয়ের কথায় মো. জহিরুল ইসলাম ও নাইম হোসেন নামে দুই যুবককে সঙ্গে নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে যান।
বাড়িতে যাওয়ামাত্র ঘরের ভেতর আটকে রেখে ইয়াকুব আলী, তার ভগ্নিপতি মো. শহীদুল ইসলাম ফরাজি, চাচাত ভাই মো. জাহাঙ্গীর আলম যদু ফরাজি ও হোটেল কর্মী দেলোয়ার হোসেন মিলে হাসমিকে বেধড়ক মারধর করেন।
এ সময় হাসমি জীবন বাঁচাতে দৌড় দিয়ে বাড়ির পাশে একটি পুকুরে ঝাঁপ দেন। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। ওই পুকুরে নেমেই ইয়াকুব আলী জীবন তাকে পুকুরের পানিতে চুবাতে থাকেন।
একপর্যায়ে হাসমির সঙ্গে আসা মো. জহিরুল ইসলাম ও নাইম হোসেন তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গেলে ইয়াকুব আলীসহ তার পরিবারের লোকজন তাদেরকেও মারধর করেন। এরপরই অমানসিক নির্যাতনের শিকার হাসমির মৃত্যু ঘটে।
এ লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো হাসমির সঙ্গে থাকা দুই যুবক মো. জহিরুল ইসলাম ও নাইম হোসেনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে পুলিশ চাঁদাবাজির মামলা নেয় খুন হওয়া যুবক হাসমি ও ওই দুই যুবকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে।
হাসমির মা হাসিনা বেগম বলেন,পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ইয়াকুব আলী, শহিদুল ইসলাম সহু, জাহাঙ্গীর আলম যদু ও দেলোয়ার ওরফে হোটেল দেলোয়ারসহ ওই আসামিরা নৃশংসভাবে খুন করেছে। আমার ছেলে কোনো চাঁদাবাজ কিংবা সন্ত্রাসী নয়। অথচ আমার খুন হওয়া ছেলে বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দেয়া হয়েছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি চাই।
শনিবার এ ব্যাপারে ধামরাই থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা খুন হওয়া হাসমিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলার সত্যতা স্বীকার করে জানান, প্রতিপক্ষ হাসমিসহ ৪ জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করে হাসমির পরিবারের আগেই।
কাজেই এ ব্যাপারে আগে মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি।