স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। তিনি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের জাতীয় মহাসমাবেশে তিনি এসব দাবি তুলে ধরেন। পীর সাহেব চরমোনাই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ারও দাবি জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের পর থেকে সেনা মোতায়েন এবং নির্বাচনের দিন তাদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে। পীর সাহেব রেডিও, টিভিসহ সকল সরকারী বেসরকারী গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দেয়ার দাবিসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে হয়রানি বন্ধ এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃত সকল ছাত্রের মুক্তি ও সকল মামলা প্রত্যাহার দাবি করেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা এবং নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। পীর সাহেব জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান। পীর সাহেব উল্লেখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে তিনদফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি হচ্ছে : ১২ অক্টোবর ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল, ১৪ অক্টোবর প্রতিটি জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশ, ১৬ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি পেশ।
গতকাল শুক্রবার বাদ জুম’আ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাইর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী, মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল কাদির, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ ফজলে বারী মাসউদ, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, আল্লামা খালিদ সাইফুল্লাহ, এডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান, কেএম আতিকুর রহমান, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, প্রিন্সিপাল মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, শেখ ফজলুল করীম মারূফ প্রমুখ। মঞ্চ পরিচালনায় ছিলেন আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা নেছার উদ্দিন, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী। জনসমূদ্রে শ্রমিক আন্দোলন, যুব আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন, ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ, শিক্ষক ফোরাম, মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ ও আইনজীবী পরিষদ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মহাসমাবেশ বাদ জুম’আ হওয়ার কথা থাকলেও ফজরের পর থেকেই জনতার ¯্রােত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী ছিল। বাদ জুম’আ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উপচিয়ে নেতাকর্মীদের অবস্থান মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেসক্লাব, দোয়েল চত্বর, পল্টন থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
মহাসমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে পীর সাহেব বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। প্রধান দু’টি রাজনৈতিক জোট নির্বাচনকে সামনে রেখে মুখোমুখি অবস্থানে থেকে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিকদল এবং নাগরিকসমাজের প্রতিনিধিগণ সরকারি দলের প্রতি সংকট সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বললেও সরকার কোন উদ্যোগ নেয়নি। গত ১০ বছরে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন কেউই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না। কিন্তু আগামীতে মানুষ তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন মানবে না। এই অবৈধ সংসদ বহাল রেখে কোন নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না। সংসদ ভেঙ্গে ৯০ দিনের মধ্যে একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চায় দেশবাসী।
পীর সাহেব বলেন, প্রতিহিংসা জিঘাংসা আর ধ্বংসের রাজনীতির অবসান দরকার। ইসলামী আন্দোলন দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। তিনি বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে সকল ধর্মের লোকজন আরো বেশী রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হলে নারীরা সবচেয়ে বেশী সম্মানিত হবেন। নারীরা নিরাপত্তা ও অগ্রাধিকার পাবে।
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি নিয়মতান্ত্রিক গণমুখী রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী হলে ইসলামী আন্দোলন ৩০০ আসনেই হাতপাখা প্রতীকে প্রার্থী দিবে। তাই প্রত্যেক ভোটারের কাছে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন এবং হাতপাখার দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। পীর সাহেব বলেন, ক্ষমতায় গেলে ইসলামী আন্দোলন দেশে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। দুর্নীতি, মাদক উৎখাত করবে। সমঝোতা ও সহনশীল রাজনীতির বিকাশ ঘটবে। শ্রমজীবী মানুষ. সংখ্যালঘু এবং পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষাসহ স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা কায়েম করা হবে। বাংলাদেশকে উন্নতি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্বে একটি উন্নত ও মডেল কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সুদ, ঘুষ ও অপচয় বন্ধ করা হবে।
১০ দফা দাবি
১. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
২. সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে।
৩. বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
৮. তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে।
৫. নির্বাচনে সব দলের জন্যে সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। রেডিও, টিভিসহ সব সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৬. দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।
৮. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
৯. কোটা সংস্কার অন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে গ্রেফতার ছাত্রদের মুক্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
১০. গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …