ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহত্তর ঐক্যের সূচনা ঘটছে এর মধ্য দিয়ে। দাবি আদায়ে এখন থেকে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে দলগুলো।
রোববার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে বৈঠকের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান যুক্তফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, যুক্তফ্রন্ট, ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে আলোচনা করেছি। উদ্দেশ্য একটাই, বর্তমান স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এক মঞ্চে দাঁড়ানো। একসঙ্গে আন্দোলন করার ব্যাপারে আজকে (রোববার) নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করব।’
পাঁচ দফা দাবি প্রসঙ্গে আ স ম রব বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং ইভিএম বাতিল করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে আ স ম রব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব দলের সঙ্গে ঐক্য হবে। ঐক্য হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে, বিএনপির সঙ্গে আলাদাভাবে কারা থাকছে, তা তাদের বিবেচনার বিষয় নয়। খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটাও দাবির মধ্যে আছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী, কোটার দাবিতে আন্দোলনকারী, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি দিতে হবে। জামায়াতের বিষয়ে বিকল্পধারার আপত্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিকল্পধারার মহাসচিব ছাড়াও যুক্তফ্রন্টের নেতারা বৈঠকে ছিলেন, সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা হবে। দাবি আদায় করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সবাই মিলে আন্দোলন করা হবে। পাঁচ দফার মধ্যেই খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয় আছে।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপির নেতারা। ওই সময় থেকেই বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর বিভিন্ন সময় নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ রোববারের বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতারা।
বৈঠকে ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন না। বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠক উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মওদুদ আহমদ ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। যুক্তফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিকল্পধারার আবদুল মান্নান, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও আ ব ম মোস্তাফা আমীন। এ ছাড়া বৃহত্তর ঐক্য গঠনে শুরু থেকে কাজ করা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লা চৌধুরী বৈঠকে অংশ নেন।