ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট:
প্রসঙ্গত, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) বিরুদ্ধে করা মামলায় অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মানহানিকর অভিযোগ করেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
এ মিথ্যা ও মানহানিকর অভিযোগ প্রত্যাহার ও ক্ষমা চাইতে ৩ অক্টোবর ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের পক্ষে তার আইনজীবী মো. জিয়াউল হক নোটিশ দেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ক্ষমা না চাওয়ায় মামলা করেন সালমা ইসলাম এমপি।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম দৈনিক যুগান্তরের প্রকাশক ও যমুনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক।
এছাড়া তিনি যমুনা বিল্ডার্স লিমিটেড, যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেড, শামীম স্পিনিং মিলস লিমিটেড, যমুনা ডিস্টিলারি লিমিটেড, যমুনা ডেনিমস ওয়েভিং লিমিটেড, যমুনা ফিউচার পার্ক লিমিটেড, শামীম কম্পোজিট মিলস লিমিটেডের পরিচালক। যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ কাজ করেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মানহানিকর অভিযোগ করেন নাজমুল হুদা। এতে সালমা ইসলামের খ্যাতি, সম্মান, মর্যাদা ও ব্যবসায়িক সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ মিথ্যা ও মানহানিকর অভিযোগ প্রত্যাহার ও ক্ষমা প্রার্থনার অনুরোধ জানিয়ে নাজমুল হুদার প্রতি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সালমা ইসলাম। কিন্তু ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নিশ্চুপ থাকায় এবং বিকল্প কোনো উপায় না পেয়ে মানহানিকর মামলা করতে তিনি বাধ্য হয়েছেন।
নাজমুল হুদার কুৎসামূলক ও মানহানিকর বক্তব্যে সালমা ইসলাম ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সমাজে সম্মান ও সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে বাধ্য হয়ে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে তিনি মামলা দায়ের করেছেন।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সালমা ইসলামের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক মন্ত্রী। সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী নাজমুল হুদা বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান।
এ বছর ২৭ সেপ্টেম্বর এসকে সিনহার বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে সালমা ইসলাম সম্পর্কে নাজমুল হুদার অভিযোগ সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক, অনাকাক্সিক্ষত, অনাবশ্যক ও অবাঞ্ছিত। এর মাধ্যমে নাজমুল হুদা সমাজ ও দেশ-বিদেশে সালমা ইসলামের মানমর্যাদা ও সুনামের ক্ষতি করেছেন। একই সঙ্গে ঢাকা-১ আসনের ভোটারদের সম্মানও হানি করা হয়েছে।
নাজমুল হুদার সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, কুৎসামূলক ও মানহানিকর অভিযোগে ক্ষুব্ধ সালমা ইসলাম এর প্রতিকার চেয়ে মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি (চাচা) ও সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে ফৌজদারি মামলা (পেনাল কোড) করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ তার ও তার রাজনৈতিক অভিভাবকের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এমতাবস্থায় অন্য কোনো বিকল্প না পেয়ে সালমা ইসলাম বাধ্য হয়ে দেওয়ানি (কোড অব সিভিল প্রসিডিউর) মানহানি মামলা করেছেন।
সালমা ইসলামের মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, ২৭.০৯.২০১৮ তারিখে ঢাকার শাহবাগ থানায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করেন নাজমুল হুদা। মামলা নং ১৯/৫২৩ শাহবাগ থানা। এতে বলা হয়, এসকে সিনহার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহার খুবই চাতুর্যপূর্ণ ও পূর্বপরিকল্পিত। এছাড়া নাজমুল হুদা এজাহারে অন্যায়ভাবে সালমা ইসলামের নাম জুড়ে দিয়েছেন। যদিও এগুলোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।
সালমা ইসলামের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, নাজমুল হুদার কুরুচি ও কুৎসাপূর্ণ কার্যকলাপের শিকার ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সালমা ইসলাম। মিথ্যা ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে এবং প্রশাসনিক যন্ত্র ও ক্ষমতা ব্যবহার করে সালমা ইসলামের মানহানি করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারের মাধ্যমে সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে তার সুনাম ও ব্যক্তি ইমেজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
নাজমুল হুদার করা মামলার এজাহারের তথ্যগুলো সমাজের সাধারণ মানুষের চোখে সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য তার (নাজমুল) প্রচার করার অধিকার (অথরিটি) নেই। সালমা ইসলামের পরিবারের সদস্য ও যমুনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকদের অবজ্ঞা করতে এজাহারে উদ্দেশ্যমূলক ও মানহানিকর তথ্য জুড়ে দিয়েছেন নাজমুল হুদা।
পানিতে কেরোসিন মিশিয়ে তাতে আগুন দিয়ে নাজমুল হুদা জানাতে চেয়েছেন পানি পুড়ছে। কিন্তু নৈতিকতার দিক থেকে এটি কখনও যৌক্তিক নয় ও সমর্থনযোগ্যও নয়। এ কারণে মানহানির ক্ষতিপূরণ দিতে আইনগতভাবে তিনি বাধ্য।
নাজমুল হুদার বক্তব্য প্রতারণামূলক, মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত। এতে সালমা ইসলামের সুনাম ও মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং আইনের চোখে নাজমুল হুদা দায়ী। মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচারের কৈফিয়ত চাওয়া হলেও নাজমুল হুদা কোনো জবাব না দিয়ে নীরব আছেন। তাকে (নাজমুল হুদা) ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ করা হলেও তিনি অভিযোগ প্রত্যাহার করেননি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানি মামলা করা হয়েছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সালমা ইসলাম সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী। যমুনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক সালমা ইসলাম তার নির্বাচনী এলাকা নবাবগঞ্জ-দোহারসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন।
অথচ নাজমুল হুদার মানহানিকর কার্যকলাপের কারণে তার সুনাম ও মানসম্মান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে, তা টাকার অঙ্কে ক্ষতিপূরণ দেয়া সম্ভব নয়। তবে প্রতীকীভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়া যেতে পারে। এ কারণে ১০ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। নাজমুল হুদার ব্যক্তিগত সম্পত্তি থেকে এ পরিমাণ অর্থ আদায়ে আদালতের কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদ : সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার করা মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মানহানিকর অভিযোগ করায় বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে।
ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার এবং নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়েছে। নবাবগঞ্জ ও দোহারে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারে জোর দাবি জানায়। এছাড়া সালমা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবিতে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে।