ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ
যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপির সমন্বয়ে যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে তার রূপরেখা শিগগিরই ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
আজ শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভার তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা রায়ের কারণে তারা (সরকার) মনে করছে যে, আমাদের জাতীয় ঐক্যের যে আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছে এটা ব্যাহত করবে। আমি বলব, এই রায়কে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করে, উপেক্ষা করে, এই রায়কে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্যের আন্দোলন চলবে। আমরা অতি শিগগিরই এর একটা রূপরেখা দেবো, জাতীয় ঐক্যের আন্দোলনের কাঠামো ঘোষণা করবো। জাতীয় ঐক্যের রূপরেখার ওপর ভিত্তি করে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন, এই সরকার পরিবর্তনে আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করবো। জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স কক্ষে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলায় তারেক রহমানের সাজা বাতিলসহ নির্দলীয় সরকারের অধীনের নির্বাচনের দাবিতে এই আলোচনা সভা হয়।
সংগঠনের চেয়ারম্যান কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহহিল মাসুদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. আব্দুল কুদ্দুস, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক এস এম হাসান তালুকদার, অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, ড. দেলোয়ার হোসেন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, জাতীয় ঐক্যে আমরা মনে করি, সরকার বাধ্য হবেন সংলাপে আসতে। সরকার যত কথাই বলুক না কেনো, যত পোষ্টার লাগাক না কেনো, যত ট্রেন জার্নি, যত পদযাত্রা করুক, যত নির্বাচনী প্রচারনা করুক, যতই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিক না কেনো অবশ্যই তাদের সংলাপে আসতে হবে। প্রতিদিনই তারা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। বিভিন্ন পেশার মানুষজনকে খুশি করার জন্য তারা নানারকমের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এমনকি যারা অবসরপ্রাপ্ত ১০০% পেনশন ভোগী ছিলেন অর্থ উঠিয়ে নিয়েছেন তাদেরও আবার নতুন করে পেনশন দিচ্ছেন যদি কিছু ভোট পাওয়া যায়। এই ভোট পাওয়ার জন্য কাওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই ভোট পাওয়ার জন্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে দিচ্ছে, সাংবাদিকদেরকে কিছু দিচ্ছে কালকের খবরের কাগজে দেখলাম। মনে করছেন এরাই বোধ হয়। এদের ৮০ ভাগ মানুষ যে যদি ভোট কেন্দ্রে যায় ভোটটা যে নৌকাতে দেবে না- এটা তো তারা জানে না।
খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়া আসবে না উল্লেখ করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্ত করা সম্ভবপর হবে না। কেনো হবে না? কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীন নেই। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ‘ এ ব্রোকেন ড্রিম’ বইটা এখন আমি পড়ছি। সেখানে উনি বার বার করে বলছেন কী করে রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধান বঙ্গভবনে মিটিং করে তাকে ডেকে নিয়ে রায় দেয়া বা পরিবর্তন করার জন্য বলেছেন সেকথা এসকে সিনহা লিখেছেন। অর্থাৎ যেখানে প্রধান বিচারপতিকে প্রভাবিত করতে পারে সরাসরিভাবে সরকার প্রধান তাহলে সেদেশে কিভাবে আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিশ্বাস করতে পারি। এই স্বাধীনতা তো নাই। সেজন্য বেগম জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথে, এই রাজপথেই তার মুক্তি আনতে হবে। এখন আপনারা সকলে প্রস্তুতি নিন। সময় এসে গেছে যে মাঠে নেমে এই দাবি আদায় করতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ‘ড্র্যাকুলিয়ান’ মওদুদ আহমদ বলেন, এই নির্বাচনের আগে গণমাধ্যমের কন্ঠ স্তব্ধ করার জন্য, গণমাধ্যম যাতে সরকারের সমালোচনা না করতে পারে, তারা যাতে স্বাধীনভাবে তাদের কর্তৃব্য পালন করতে না পারে সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে সরকার। ৭/৮ টা ধারা আছে যা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান পরিপন্থি। বিশেষ করে ৩২ এবং ৪৭ ধারা। ৩২ ধারা অনুযায়ী আপনি যদি সরকারের তথ্যের সূত্রের ওপর ভিত্তি করে খবর ছাপান- সরকারের দুর্নীতি, অপকর্ম, অনিয়মের খবর ছাপান তাহলে আপনাদের ১৪ বছরের সাজা ও ২৫ লাখ টাকার জরিমানা হবে। এটা একটা ড্র্যাকুলিয়ান আইন। সম্পূর্ণভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে স্তব্ধ করার জন্য এই আইন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ৪৭ ধারা অনুযায়ী পুলিশকে সীমাহীন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। রক্ষীবাহিনীর সময়ে এই ধরনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিলো। আদালতের বিনা আদেশে, বিনা পরোয়ানায় পুলিশ যেকোনো বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে। শুধু তাই নয়, যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে কোনো মামলা ছাড়া। পুলিশ আপনার বাড়ি থেকে কম্পিউটারসহ ইলেক্ট্রনিক সব কিছু নিয়ে যেতে পারবে তাদের কোনো তালিকা দিতে হবে না। আমরা কোন দেশে আছি এখন? আজকে দূঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সাংবাদিকদের মধ্যে এই নিয়ে সংঘবদ্ধ ঐক্য দেখি না। আমি সাংবাদিক ভাইদের আহবান জানাবো যে, আপনারা আপনাদের নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য এই আইন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করুন, যাতে সরকারকে বাধ্য করুন যাতে এই আইন বাতিল করা হয়। আমরা তো বলেছি, আমরা ক্ষমতায় গেলে ৭ দিনের মধ্যে এই আইন বাতিল করব।