ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ বিএনপিকে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট নামে যে বিরোধীজোট তৈরি হয়েছে – তাদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বি. চৌধুরীর বিকল্পধারার অনুপস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব বলছেন, এখানে কোন ষড়যন্ত্র নেই – তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তেই তারা আসে নি।
তবে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আভাস দেন, জোট গড়ার বৈঠকগুলোতে ‘কিছু বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করে সমস্যা তৈরি করছিল’ বিকল্পধারা।
বিকল্পধারার নেতারা সংবাদ মাধ্যমে আভাস দিচ্ছেন যে জামাতের সাথে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তারা নানা রকম শর্ত দিচ্ছিলেন বলেই ষড়যন্ত্র করে তাদের বাইরে রাখা হয়েছে । এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আলমগীর বলেন, এটা একেবারেই অমূলক।
আলমগীর বলেন, ‘এর পেছনে কোন যুক্তি বা সত্যতা নেই। তারাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তারা আসবেন না। আগের দিনও তাদের সাথে কথা হয়েছে, তাদের দাবি বা বক্তব্য আমাদের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে চলে এসেছে। তারা সবাই একমত ছিলেন। সেখানে কেন তারা নতুন ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছেন আমি জানি না।’
‘আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছিলাম যে কতগুলো বিষয়ে অযথা চাপ তৈরি করে একটা সমস্যা তৈরি করা হয়েছে। যাই হোক আমরা এ বিষয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। আমরা আশা করি তারা ঐক্যে ফিরে আসবেন’ – বিবিসির শাকিল আনোয়ারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন আলমগীর।
বিএনপিকে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন নতুন জোট ঐক্যফ্রন্ট প্রথম যে সংবাদ সম্মেলন করে শনিবার – তাতে ছিলেন না বিকল্প ধারার নেতা ড. বি চৌধুরী। যদিও এর আগে ড. কামাল হোসেনের সাথে বিকল্পধারা ও যুক্তফ্রন্টই শুরুতে জোট গড়েছিল।
বিকল্পধারার নেতা মাহি বি চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্যের কথা বলছিলেন – যাতে বাকি দলগুলো হয়তো আপোষ করেছে, কিন্তু তারা করেন নি।
তিনি বলেন, ‘যেখানে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চক্রান্ত হয়, সেখানে আমাদের যাবার সুযোগ দিলেও তো আমরা যাবো না।’
বিকল্পধারার নেতারা অভিযোগ করছেন যে বিএনপির সাথে জোটের কিছু শর্ত নিয়ে কথা হচ্ছিল, সেখানে কোন ঐকমত্য ছাড়াই হঠাৎ করে এটা ঘোষণা হয়ে গেল – সে ব্যাপারে আলমগীর বলেন, যে কোন ঐক্য করতে হলে একটা জায়গায় এসে পৌঁছাতে হয় – সে জায়গায় তারা পৌঁছে গিয়েছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তারা এখন আওয়ামী লীগের মতোই বলতে শুরু করেছেন যে সবখানেই তারা ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছেন।’ – বলেন আলমগীর।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের একটা অপ্রীতিকর ইতিহাস রয়েছে। সে কারণে বিএনপি তাদের জোটে নিতে খুব একটা আগ্রহী নয় এমন কথা শোনা যায়, এ ব্যাপারটা কতটুকু সত্য?
বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন – ‘এ কথা সঠিক নয় । আমি নিজে বহুবার প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় গেছি। বহুবার তাকে ঐক্যের জন্য অনুরোধ করেছি।’
তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনে তাদের না আসাটা ‘বোধ হয় সঠিক সিদ্ধান্ত হয় নি’।
‘তারা আসলে আমরা আরো বেশি উপকৃত হতাম, আমাদের ঐক্য এবং গণতন্ত্রের আন্দোলন আরো জোরদার হতো। আমরা আশা করি যে তারা এ লক্ষ্যের সাথে জড়িত হবেন’ – বলেন আলমগীর।
আরো পড়ুন : বি. চৌধুরীর প্রশংসা করলেন তথ্যমন্ত্রী
বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে, তাতে যোগ না দেওয়ায় বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে স্বাগত জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের একদিনের মাথায় সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বি. চৌধুরী যা বিশ্বাস করেন, সেই বিশ্বাসে অনড় ছিলেন এবং আছেন। এ কারণেই তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যাননি। এ জন্য তাকে সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানাই।’
শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন জোটের আহ্বায়ক করা হয়েছে গণফোরামের সভাপতি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনকে।
নতুন জোটের পক্ষে সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
এই ঐক্যফ্রন্টে বিকল্পধারা বাংলাদেশেরও যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিকল্পধারা সেখানে যুক্ত না হওয়ার ব্যাপারটি শনিবার সন্ধ্যায়ই সংবাদ সম্মেলনে করে জানিয়ে দেয়।
বিকল্পধারার সভাপতি বি. চৌধুরীর বারিধারার বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর আবদুল মান্নান (অব.) বলেন, ‘আজকের পর থেকে জাতীয় ঐক্যের নামে বিএনপির সাথে কোনো বৈঠকে বসে জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ বিকল্পধারা দেবে না। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গ ত্যাগ করে জাতীয় সংসদে ভারসাম্যের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা বিএনপির পক্ষ থেকে না আসা পর্যন্ত শুধু বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর জন্য বিকল্পধারা দেশে কোনো চক্রান্তের সাথে সম্পৃক্ত হবে না।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। এই সাত দফার মধ্যে কিছু ওমিশন আর কিছু কমিশন আছে। সাত দফার মাধ্যমে ভূতের সরকার নাজিল করতে চায় ঐক্যফ্রন্ট।’
আরো পড়ুন : সংবাদ সম্মেলন করে বি. চৌধুরী যা বললেন
আশা ছাড়েননি ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। শর্ত পূরণ করলে তিনি এখনো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ফিরতে চান। এজন্য দুটি শর্তের কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে একটি শর্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দলকে ১৫০টি আসন ছেড়ে দিতে হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় বারিধারার বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে বি. চৌধুরী এই শর্ত দেন।
তিনি বলেন, ‘দুটি শর্ত পূরণ হলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ফিরবে বিকল্পধারা। এর একটি হলো, স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষাভাবে কোনো ঐক্য হতে পারবে না। আর দ্বিতীয়টি হলো, সংসদে ভারসাম্য ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে বিকল্পধারাকে ১৫০ আসন দিতে হবে।’
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপাতত মনে হয়েছে, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা বিরোধিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রয়েছে। এমন প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিকল্পধারা থাকতে পারে না।’
তবে শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় ঐক্যফন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেনের আমন্ত্রণে তার বাসায় গিয়ে ফিরে এসে হতাশ হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী, মাহবুব আলী, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, হাফিজুর রহমান ঝান্টু, ওবায়েদুর রহমান মৃধা, আসাদুজ্জামান বাচ্চু, বিএম নিজাম প্রমুখ।
এর আগে ড. কামাল হোসেনের বাড়ির সামনে থেকে ফিরে যান অধ্যাপক বি. চৌধুরী। শনিবার বিকেল ৩টায় ড. কামালের বাসভবনে দুই নেতার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী বি, চৌধুরী এসেছিলেন। কিন্তু এসে বাসার দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে চলে যান।
এদিকে আজ সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে গণফোরাম, ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপি। এতে মাহমুদুর রহমান মান্নাও উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
দেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা এবং দাবি-দাওয়া চুড়ান্ত করতে শনিবার ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিকাল ৩ টায় ড.কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীর মধ্যে বৈঠকের পরে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রত্রিয়ার মধ্যে আলোচনা হওয়া কথা- এমনটা জানানো হয়েছিল গতকাল।।।
রূপরেখায় বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের নেতারা একমত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছিল।। এতে দফা এবং লক্ষ্যও চুড়ান্ত করা হয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে শনিবার বৈঠকে বসে চুড়ান্ত করা হবে বলে জানানো হয়।
গতকাল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন নয়া দিগন্ত প্রতিবেদককে জানান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার রূপরেখা প্রস্তুত হয়েছে। তবে আন্দোলনের অভিন্ন লক্ষ্য ও দাবির খসড়াও চূড়ান্ত করতে আজ আবার বসবেন তারা। তিনি জানান দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর আমরা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্টা এবং ভোটের অধিকার রক্ষায় এক সঙ্গে আমরা আন্দোলন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য অভিন্ন দাবিদাওয়া, লক্ষ্য এবং রূপরেখার খসড়া চুড়ান্ত করেছি। দুই একদিনের মধ্যে আরও একদফা বৈঠকের পর এটি ঘোষণা করা হবে।
গতকাল বিকালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় এই বৈঠক শুরু হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করে তারা ৬টা ২৭ মিনিটে বের হন। বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পক্ষে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, দলটির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল্লাহ কায়সার, ডা. জাহিদুর রহমান, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী, দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ওমর ফারুক প্রমূখ এই বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে নেতারা একসঙ্গে বারিধারায় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসভবন মায়াবীতে যন। তারা বি. চৌধুরীর ৮৮ তম জন্মদিন উপলক্ষে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এক সঙ্গে কেক কাটেন।
‘সেই ধরনের ঐক্যফ্রন্টে না যাওয়ায় বিকল্পধারার সভাপতি বি. চৌধুরীকে আমরা অভিনন্দন জানাই,’ যোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।