সাতক্ষীরায় বিএনপি ও জামায়াতের   সহস্রাধীক  নেতাকর্মীর নামে গায়েবী মামলা

ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় গায়েবী মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি দিন জেলার কোন না কোন স্থানে গায়েবী মামলা নাজিল হচ্ছে। গত এক মাসে জেলাতে অর্ধশতাধীক গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে শ্যামনগর উপজেলায়। সেসব মামলায় আসামী করা হয়েছে জামায়ত ও বিএনপির নেতাকর্মীদের।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জেলা বিএনপি ও জামায়াতের জেলা কমিটি থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি পর্যন্ত প্রত্যেক নেতাকে মামলার আসামী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশ বাদী জেলায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক ‘গায়েবি’ মামলা করছে। জেলা পর্যায়ের সরকার দলীয় সংগঠন ও পুলিশের বেশ কিছু সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
আগামী নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীর সম্ভাব্য এজেন্ট কারা এবং মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার সক্ষমতা কার আছে, এমন নেতা–কর্মীদেরও শনাক্ত করে মামলার আওতায় আনতে থানাপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও সূত্রগুলো বলছে।
এদিকে বিএনপির তৈরি এক হিসাবে দাবি করা হচ্ছে, গত এক মাসে সারা দেশে তাদের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে চার হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। এতে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত মিলিয়ে আসামির সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজার। গ্রেফপ্তার হয়েছেন ৪ হাজার ৬০০ জন।
গত এক মাসে শুধু সাতক্ষীরা জেলাতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামী করে শতাদীক মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এমন তথ্য জানিয়েছে সূত্রগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাঠপর্যায়ের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনার ভিত্তিতে বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি ধরে ধরে মামলার আসামি করা হচ্ছে। এ কারণে কোনো কোনো মামলায় মৃত ব্যক্তি, বিদেশে থাকা, বয়োবৃদ্ধ, গুরুতর অসুস্থ হয়ে চলাফেরায় অক্ষম ও কারাগারে থাকা নেতা-কর্মীরাও আসামি হয়ে গেছেন, যা গণমাধ্যমে আসায় কিছুটা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে।
মাঠপর্যায়ের পুলিশের বেশ কটি সূত্র থেকে জানা গেছে, কয়েক মাস আগেই বিএনপি ও জামায়াতের কমিটির তালিকা থানার পুলিশকে পাঠিয়ে প্রত্যেকের ঠিকানা যাচাই করতে বলা হয়। যাঁদের একাধিক ঠিকানা আছে, সেটাও বের করতে বলা হয়েছে। বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে আসা নেতা–কর্মীদের ছবি তুলতে বলা হয়েছে। পরে ছবি দেখে নেতা-কর্মীকে শনাক্ত করে, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা নেই, তাঁদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নিবাচনে বিএনপির সম্ভাব্য এজেন্টদেরও শনাক্ত করে এবং বিগত বিভিন্ন নির্বাচনে যাঁরা বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছেন, তাঁদেরও মামলার আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে থানা-পুলিশকে।
গত রবিবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি শহরে একটি ঝটিকা মিছিল বের করে। পরে পুলিশ মিছিলে নের্তৃত্ব দেয়া নেতাকর্মীদের নামে গায়েবী মামলা দেয়। এছাড়া রাতে নের্তৃত্বদানকারী নেতাকর্মীদে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এমন অভিযোগ এনে সোমবার কেন্দ্রীয় বিএনপি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, সাতক্ষীরা জেলা যুবদলের হাফিজুর রহমান মুকুল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সোহেল আহমেদ মানিকের বাড়ীতে পুলিশ তল্লাসীর নামে বাড়ীর আসবাবদপত্র, পানির মটর, চুলা ও টিউবওয়েলসহ অনেক কিছু ভাঙচুর করে। এছাড়া সোহেল আহমেদ মানিকের পিতা মুসলিমউদ্দিনকে গ্রেফতার করে, যদিও থানায় নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। আমি দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীতের গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
গত ফেব্রুয়ারীর শুরুতে এ ধরনের কথিত গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করে পুলিশ। সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশে বড় জমায়েত হওয়ার পর থেকে সারা দেশে ব্যাপকভাবে কথিত গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু হয়। এতে দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদেরও আসামি করা হয়
এ ধরনের মামলা নিয়ে অভিযোগ হচ্ছে, কোনো ঘটনা ঘটেনি, এরপরও কল্পিত ঘটনার কথা উল্লেখ করে পুলিশ মামলা দিয়েছে। তাই এসব মামলা ‘গায়েবি মামলা’ হিসেবে লোকমুখে প্রচার পেয়েছে। বিএনপি এসব মামলাকে ‘ভৌতিক মামলা’ বা ‘কল্পিত মামলা’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
জেলাতে এসব মামলায় লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে। পুলিশ যাকে ইচ্ছে তাকে আটক করে বিপুল অংকের টাকা দাবী করেছে। টাকা দিতে না পারলে গায়েবী মামলার আসামী করা হচ্ছে। জেলার লক্ষাধীক ব্যক্তিকে এসব মামলয় হয়রানির করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান তত বাড়বে। নির্বাচনের আগ দিয়ে এসব মামলা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। অজামিনযোগ্য এসব মামলায় গ্রেপ্তার হলে জামিনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত যেতে হচ্ছে। সব ধাপ পার হতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে। তত দিনে নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে। এ ছাড়া এসব মামলায় এখন যেসব নেতা উচ্চ আদালত থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আগাম জামিন পাচ্ছেন, তাঁদের জামিনের মেয়াদ নির্বাচনের আগেই শেষ হয়ে যাবে। তখন তাঁদের আবার নিম্ন আদালতে যেতে হবে।
এসব গায়েবী মামলার তদন্ত করতে নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় কমিশন চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ তিনজন আইনজীবী ।
এদিকে সাতক্ষীরায় নির্বাচনী আসন গুলোতে ুিবএনপি ও জামায়াতের সম্ভব্য প্রাথীদের বিরুদ্ধে কয়েক ডর্জন গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে। তালা কলারোয়া ১ আসনে বিএনপির সম্ভব্য প্রার্থী সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি বর্তমানে কারাগারে। সাতক্ষীরা সদর দুই আসনে জামায়াতের ঘাটি বলে পরিচিত। সেই আসন থেকে জামায়াতের মনোনিত প্রার্থী জামায়াতের সাবেক জেলা আমীর ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় নেতা মুহাদ্দীস আব্দুল খালেক বর্তমানে কারাগারে। শ্যামনগর ৪ আসনে জামায়াত মনোনিত সাবেক বারবার নির্বাচিত এমপি বর্তমানে জামায়াতের প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে চলতি মাসে ৭টি গায়েবী মামলার আসামী করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ অক্টোবর নতুন করে একটি গায়েবী মামলায় তপাকে এক নম্বর আসামী করা হয়েছে। তিনি জানান আরো তিনটি মামলায় তাকে আসামী করার প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্যামনগর থানা পুলিশ।
পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক এস আই হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে জামাতের সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলামসহ ৭২ জনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি করা হয়েছে। মামলা নং-১২। এতে জামায়াত মনোনিত উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. আব্দুল বারী, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মহসিন উল মুলক, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাষ্টার আব্দুল ওয়াহেদ, মুন্সিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল, ভুরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাও. ফারুক হোসেন, গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম, শ্যামনগর সদর প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বাবু ও বুড়িগোয়ালিনী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাজী নজরুলসহ ৭২ জনের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১৫(৩)/২৫-ঘ তৎ সহ ১৯০৮ সালে বিস্ফোরক উপাদানাবলী আইনে ৩/৪/৬ নং মামলা করে। নিন্ম আদালতে এসব মামল জামিন অযোগ্য।
এদিকে দুর্গা মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা ভাংচুর চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে স্থানীয়রা। শনিবার সদরের গোদাঘাটা গ্রামে আটকের ঘটনা ঘটে। আটককৃত বিভুতিভূষন তে কামার গোদাঘাটা গ্রামের কর্মকার পাড়ার মৃত সতিন্দ্র নাথ সরকারের পুত্র । তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন ধর্মগুরু হিসেবে নিজেকে প্রচার করার চেষ্টা করে।
পরে গ্যাম্য সালিশে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভুতিভূষন ওরফে তে কামারকে হাতে নাতে প্রতিমা ভাংচুরের চেষ্টা ও ডেকোরের ক্ষতি করার অভিযোগে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
স্থানীয়রে দাবী নিজেদের পুজা মন্ডপ নিজেরা ভেঙ্গে বিএনপি জামায়াতের লোক জনের উপর দায় চাপানোর পায়তারা করা হ্িচ্ছল। কিন্তু স্থানীয় মুসলিমরা এটা দেখে ফেলায় গায়েবী মামলা করতে পারেনি সম্প্রদায়টি।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় কোন নিরিহ ব্যক্তিকে হয়রানি করতে গায়েবী মামলা করা হয়নি। অভিযুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান জানিয়েছে কোন নিরিহ মানুষকে হয়রানি করলে পুলিশের বিরুদ্ধে ও ব্যবস্থা নেয়া হবে।সূত্র জানায় জেলায় সাধারণ লোকের হয়রানি ও টাকা দাবী করার প্রমান পাওয়ায় কয়েক জন পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন শাস্তি দেয়া হয়েছে। –

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।