ক্রাইমবার্তা ইরেপাট:সাতক্ষীরা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সত্য ঘটনাকে মিথ্যা হিসেবে অভিহিত করা আর মিথ্যাকে সত্য বলা আওয়ামী লীগের আদর্শিক চেতনা। জনগণকে তারা এতটাই অপাংক্তেয় মনে করে যে, তাদের ধোকাবাজি জনগণ টের পাবে না। সুতরাং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বাতিল করতে হবে এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী কাহহার আকন্দকে বাদ দিয়ে নিরপেক্ষভাবে পুন:তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম শুরু করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
আজ মঙ্গলবার সকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহদফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের সময় বাংলাদেশ পুলিশী রাষ্ট্র ছিল না। অবারিত ছিল গণতন্ত্র। ফলে রাজধানীতে জনসভার জন্য সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণের পর নিয়ম ছিল মাইক ব্যবহারের অনুমতি নিতে হতো পুলিশের থেকে। মূল চার্জশিট দাখিলকারী কর্মকর্তা এএসপি ফজলুল কবিরের কাছে গত ২২ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে জবানবন্দী প্রদানকালে সমাবেশে পুলিশের অনুমতি না দেয়ার কথা বলেন। অথচ সমাবেশে পুলিশের অনুমতি প্রদান না করার বিষয়টি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০ আগস্ট ২০০৪ তারিখ হতে ২২ নভেম্বর ২০০৭ পর্যন্ত প্রায় সোয়া তিন বছর সময়কালে কখনোই কোনো সভা-সমিতি,সাক্ষাৎকার, আলোচনা-বিজ্ঞপ্তি-প্রচারণা ইত্যাদি কোথাও তিনি উল্লেখ করেননি।
২০০৪ সালের ২০ আগস্ট সমাবেশের আগের দিন বিকেলে তিনি মহানগরের বেরাইদ স্কুল মাঠে এক জনসভায় দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। সেই বক্তৃতায়ও তিনি অনুমতি না প্রদানের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। পরদিন বঙ্গবন্ধু এভিন্যুতে আলোচ্য সেই সমাবেশে তিনি প্রায় ২০/২২ মিনিট ধরে যে বক্তৃতা করেন, সেই বক্তৃতায়ও তিনি একটিবারের জন্যও বলেননি যে, পুলিশী অনুমতি না পাওয়ার কারণে তাকে মুক্তাঙ্গনে সভা না করে এখানে করতে হচ্ছে। এমনকি সেদিন ২১ আগস্ট এ মর্মান্তিক ঘটনার পরবর্তী সন্ধ্যায় তিনি তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকার দেন। সেই সাক্ষাৎকারেও তিনি এমন অনুমতি না প্রদানের বিষয়ে কোনো শব্দই উচ্চারণ করেননি।
রিজভী বলেন, বরং ২০১২ সালের ২০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে টিভিতে প্রচারিত এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ২০ আগস্ট রাতে পুলিশ ওইদিনের মিটিংয়ের অনুমতি দিয়েছিল। ২২ আগস্ট শেখ হাসিনার এতদবিষয়ক বক্তব্য দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় ছাপা হয়। যার বিবরণ এমন- ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, শেষ রাতে অনুমতির কারণ কি ছিল?’ ……….প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন- ‘ব্রিটিশ হাইকমিশনারের হামলার পর আমরা মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের অনুমতি দেয়া হয়নি। শেষ রাতে অনুমতি দেয়া হয়। কেনো তা দেয়া হয়েছিল?’
কিন্তু প্রশ্নাতীতভাবে সত্য যে, পুলিশ ২০০৪ সালের ১৯ আগস্ট তাদের অনুমতি দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে প্রকৃত ঘটনা মিলছে না। এই অবস্থায় ২০০৪ সালের ১৭ আগষ্ট আওয়ামী লীগ মুক্তাঙ্গনে সমাবেশের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি গ্রহণের পর পুলিশের কাছে মাইক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করে।
রিজভী বলেন, পুলিশ মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের সমাবেশের লিখিত অনুমতি দেয় ১৯ আগষ্ট। তবে রহস্যজনক ও গভীর সন্দেহের বিষয় হলো-মুক্তাঙ্গনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে কেনো বঙ্গবন্ধু এভিন্যুতে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করলো? ২১ আগষ্টের গ্রেনেড বোমা হামলা নিয়ে শুরু থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আচরণ, বক্তব্য ও মন্তব্য সামঞ্জস্যহীন ও রহস্যাবৃত। মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ ৩ দিন ধরে প্রচার প্রচারণা চালালো, আর ২১ আগষ্ট সমাবেশের দিন হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করে কেনো দলীয় অফিসের সামনে গেল? এতে কারো বুঝতে বাকী থাকে না যে, এর মধ্যে কোন দুরভিসন্ধি কাজ করেছে।
তিনি বলেন, পুলিশ যখন দেখলো তাদের না জানিয়ে সমাবেশ করছে তখন মতিঝিল থানার ওসি নিয়মমাফিক একটি জিডি করে। অল্প সময় হাতে পেলেও নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ সেখানে যায়। মামলার বিচারিক কার্যক্রমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়নি, অথচ ফরমায়েসী রায় চাপিয়ে দেয়া হলো। আইন, বিচার ও প্রশাসনকে প্রতিহিংসা পূরণের হাতিয়ার করে আওয়ামী লীগের ক্রমান্বয়ে দানবীয় আত্মপ্রকাশ জাতির জীবনপ্রবাহ রুদ্ধ করার অভিঘাত।
সারাদেশে নেতাকর্মীদেও গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, দিনাজপুর জেলা বিএনপি নেতা বখতিয়ার আহমেদ কচিকে তিন আগে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ফের তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমি দলের পক্ষ থেকে তাকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রিমান্ড বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকায় গেন্ডারিয়া থানা যুবদলের রাজিব, বগুড়া শাহজাহানপুর থানা বিএনপি নেতা আবুল বাশার, যুবদলের সুলতান, শহীদ, রিপন, মঞ্জু, মজনু, কাশেম ও রুবেলসহ মোট ৮ জন ঢাকা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর মতিঝিল থানার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। মৌলভীবাজার জেলা যুবদলের জাকির হোসেন উজ্জল, এম এ মুহিবুর, আমির, মজিদ, ফয়সাল আহমেদসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ বাড়ীতে হামলা চালায়ও যুবদল নেতা রুটিন আহমেদকে গ্রেফতার করে। সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের মওদুদুল হককে মিছিল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। নারায়গঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা জাহিদ হোসেন বিপ্লবকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বরিশাল উত্তর যুবদল নেতা জাকির পাইককে পুলিশ গ্রেফতার করে।
রিজভী আরো জানান, ভোলায় যুবদলের মোঃ সেলিম, মোস্তফা কামাল, ফখরুল ইসলামের বাড়ীতে পুলিশ হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার কোরশা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার মো: সিরাজকে গ্রেফতার করে তিন ধরে নির্যাতন করার পর গতকাল কোর্টে চালান দিয়েছে। তিতুমির কলেজ ছাত্রদলের শরীফুল ইসলাম মুরাদ ও নরসিংদী জেলা বিএনপির নুরুল ইসলামকে আজ সকালে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সাতক্ষীরা জেলা যুবদলের হাফিজুর রহমান মুকুল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সোহেল আহমেদ মানিকের বাড়ীতে পুলিশ তল্লাসীর নামে বাড়ীর আসবাবদপত্র, পানির মটর, চুলা ও টিউবওয়েলসহ অনেক কিছু ভাঙচুর করে। এছাড়া সোহেল আহমেদ মানিকের পিতা মুসলিমউদ্দিনকে গ্রেফতার করে, যদিও থানায় নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। আমি দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীতের গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।