সাবিধানিক প্রতিষ্ঠান সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হয়: মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাব সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক : কবিতা খানম

ক্রাইমবার্তা রিপোট ;সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকাদারের ৫ দফা প্রস্তাব ইসির সভায় আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন অপর এক নির্বাচন কমিশনার। গত সোমবার নির্বাচন কমিশনারদের সভায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ৫ দফা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার। তার প্রস্তাব যেন সভায় ওঠে সেজন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আনঅফিসিয়াল নোট (ইউও নোট) দেন অপর তিন কমিশনার।

ওই তিন কমিশনারের একজন কবিতা খানম বুধবার সাংবাদিকদের জানান, মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাব সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা সভায় আলোচনার সুযোগ ছিলনা। একজন কমিশনার কমিশনের সভায় প্রস্তাব দিতে পারেন কিনা?

কবিতা খানম বলেন, আমি পাঁচটি প্রস্তাবই দেখেছি। প্রথম ছিল যে সেনা বাহিনীকে কীভাবে রাখবো। এখনো সে বিষয়ে আলোচনার সময় এখনো এটা নয়। এটা এখন সে সময়টা নয়। আরো একটা বিষয় ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দুটোই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনা। এটাতো সাংবিধানিকভাবেই এটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যস্ত। সুতরাং এটা নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধানের ৫৫ এর (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। এটা যদি আলোচনা করি তাহলে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক একটা বিষয় চলে আসে। সরকারের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টা কী নিয়ে সংলাপ করবো? রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইতিমধ্যে সংলাপ করেছি। যতটুকু সময় আমাদের আছে এই সময়ের মধ্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার সময় এবং মনে হয় না ইসির হাতে আছে।

কবিতা খানম এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, এই সভায় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয় ছিলনা। তাই এখানে নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার মতো কিছু নেই। ওনার কিছু প্রস্তাব ছিল। প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নাই যেগুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর মাধ্যমে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে বা ঐক্য নষ্ট হয়েছে মনে করার সুযোগ নেই।

সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করলে এমপিদের অবস্থান কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আচরণবিধি মালায় সাধারণ ও অল্প কিছু সংশোধন হচ্ছে। আচরণবিধিমালায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞায় এমপি, মন্ত্রী স্পিকার সবার কথাই বলা আছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে কোনো প্রকার প্রচারণা করতে পারবে না। আমাদের এই জায়গায় কোনো কাজ করা প্রয়োজন আছে বলে আইন সংস্কার কমিটি মনে করছে না।

আচরণবিধি সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দু’একটি বিষয় সংশোধনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তফসিল ঘোষণার আগে আচরণবিধি সংশোধন না হলে সমস্যা হওয়ার কথা না। যেমন জীবন্তু প্রাণী প্রদর্শন ও ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে প্রচারণায় অংশ নেয়া যাবে না।

প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মধ্যে সবাইকে অন্তর্ভূক্ত করা আছে। সরকারি সুবিধা নিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে কিন্তু ওখানে নিষেধ আছে। তার বিশেষ নিরাপত্তা বিশেষ আইনে দেয়া। নিরাপত্তা ব্যাতীত অন্য কোনো সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না।

কবিতা খানম বলেন, আচরণবিধিমালা করা হয়েছে মানার জন্যই। না মানার ক্ষেত্রে অব্যশই একটা জবাবদিহিতামূলক প্রেক্ষাপট ইসির থাকবে। যদি আচরণ বিধিমালা সঠিকভাবে আমরা প্রয়োগ করি, যে বারগুলো আছে সেগুলো আমরা যদি সঠিকভাবে ফলো করি, প্রার্থীরা যদি ফলো করেন ফলো করার ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যত্যয় থাকে অবশ্যই নির্বাচন কমিশন সেখানে বিধিমালা ভঙ্গের কারণে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

এমপিদের রেখে সমতা নিশ্চিত করা সম্ভব কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে কবিতা খানম বলেন, আইন সবার জন্য সমান। আইন মানতে হবে। নির্বাচনী কর্মকান্ড সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবো না। আইন যেহেতু সবার জন্য সমান আমরা সেভাবে প্রয়োগ করেত চাই। আইনের যে বিধানগুলো সেটার সঠিকভাবে প্রতিফলন হচ্ছে কি না সেটাও দেখভাল করবে আচরণ বিধিমালার বাইরে যদি কারো কোনো কর্মকা- প্রতিফলিত হয় সেখানেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এখন পর্যন্ত ইসির কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার বিষয়ে ইসিতে সক্রিয় কোনো আলোচনা হয়নি। কমিশন যদি মনে করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

বাকস্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে না- মাহবুব তালুকদারের এ বক্তব্য ও সভা বর্জন প্রসঙ্গে কবিতা বলেন, আমি মনে করি না যে এর মাধ্যমে কোনো অনৈক্য তৈরি হয়েছে। নোট অব ডিসেন্ট যে কেউ যে কোনো সময় দিতে পারে। আমি বলবো যে এই প্র্যাকটিসটা এখানে এটা একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং এখানে ৫ জন মিলেই একটা বডি। যেকোনো মেম্বার যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে ভিন্নমত দিতে পারেন। মনে করি না যে, মতবিরোধের কারণে কমিশনে দ্বিধা বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। কমিশনের ঐক্য নষ্ট হয়েছে। যেকোনো একটা বিষয়ে মতবিরোধ বা নোট অব ডিসেন্ট আমিও দিতে পারি। অনেক সময় দিচ্ছি। তবে এখন আমি বলতে চাই, এর মাধ্যমে কমিশনে বিভক্তি তৈরি হয়েছে, বা কোনো ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ট মতামতের ভিত্তিতেই কমিশনের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে। সাবিধানিক প্রতিষ্ঠান সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হয়, সেটা সাংবিধানিক ভাবেই স্বীকৃত।

সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন বিষয়ে বলেন, এটা নির্বাচন কমিশন সংবিধানকে সামনে রেখে সংবিধান অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখানে সংসদ বহাল থাকবে না কি থাকবে এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নয়। নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবে এটাই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।

কমিশন বিব্রত হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নে কবিতা খানম বলেন, যেহেতু উনি কমিশন সভা বর্জন করে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসতেছেন, এ রকম একটা মেসেজতো আমরা পাচ্ছি বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমরা কমিশন সেটা ফিল করছি না। গতকাল তিনি আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ে ছিলেন।

Check Also

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।