‘সরকার যাবার আগে একটা মরণ কামড় দেবে’
দেশকে ভয়াবহ সংঘাত থেকে বাঁচাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে সবাইকে এ ফ্রন্টে যোগ দেয়ার আহবান জানিয়েছেন নবগঠিত ফ্রন্টটির নেতারা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তারা এ আহবান জানান। ন্যায় প্রতিষ্ঠার সামাজিক আন্দোলন ‘মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’ এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে মুভমেন্ট ফর জাস্টিস এর প্রধান সমন্বয়ক সাবেক ছাত্রনেতা সানাউল হক নীরুর সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্রনেতা তাপস পাঠানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা আ ব ম মোস্তফা আমিন, মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে রিটা রহমান, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এনামুল করিম শামীম, সাবেক ছাত্রনেতা আশরাফ উদ্দিন খান, শহিদুল্লাহ শহীদ, সাবেক ছাত্রনেত্রী আসমা শহীদ প্রমুখ।
মঈনুল হোসেন বলেন, দেশ আবার ভয়াবহ সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। এ থেকে বাঁচানো যায় কিনা সে লক্ষ্যেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। গণতন্ত্র ফেরাতে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমরা ঐক্য গড়েছি। এই প্রক্রিয়া ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। তিনি বলেন, দলীয় অন্ধগলির রাজনীতি করতে গিয়ে আজ আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি। অবিশ্বাস আজকে মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের ক্ষেত্রে।
ব্যারিস্টার মঈনুল বলেন, ঐক্যফ্রন্ট দেখে আসলে সরকার ভয় পেতে শুরু করেছে। সরকার জানে এবার কাজটা এতো সহজ হবে না। কিন্তু তারা যাবার আগে একটা মরণ কামড় দেবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কোন দলীয় জোট নয়, এতে বিএনপি, আওয়ামীলীগসহ সব দল অংশ নিতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি জনগনের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। সরকার গঠন হবে জনগনের ভোটে, বিদেশীদের কথায় নয়। রাজনীতি শুধু নির্বাচনে জোতার জন্য নয়, হুজুগের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের দুটি অংশ ছিল। প্রথমত, ভারত আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, দেশের জনগন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে লড়াই করেছিল। আমরা স্বাধীন ভুমি পেয়েছি। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পায়নি। এজন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এখনো চলছে।
বিশিষ্ট এ আইনজীবী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এটা বোকারাও বিশ্বাস করে না। ভারত, বৃটেন কোথাও সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হয় না। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বর্তমান সরকারি দলই আন্দোলন করে এনেছে। এখন তারা বলছে এটা চলবে না। পদ্ধতির প্রয়োগে ভুল থাকতে পারে, তাই বলে পদ্ধতি ভুল হবে কেন? রক্তের উপর ক্ষমতায় এসে আবার ভুলে যাওয়া মেনে নেয়া যায়না। ব্যারিস্টার মঈনুল বলেন, গত নির্বাচনের পর সরকার বললো এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু পরে আর নির্বাচন দিল না। এভাবে জাতিকে বোকা মনে করার কোন কারণ নেই। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যে সংবিধান চলছে তার এমপিরা নির্বাচিত নয়। দেশকে লুটেরাদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। ব্যারিস্টার মঈনুল বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ সেনাপ্রধান নিয়ে একটি মন্তব্য করে একটি ভুল করেছেন, এজন্য তিনি দু:খও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাই বলে একজন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা কেন?
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন চান। আমি তাকে বিশ্বাস করি, কিন্তু তার আশেপাশে যেসব চাটুকররা আছে তাদের বিশ্বাস নেই। তারা আমাদের সিকি, আধুলি বলেছেন। একবার সিকি আধুলিদের সুযোগ দিয়েই দেখেন আমরা পারি কিনা। তিনি বলেন, স্কুল শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের সময় লিখেছিল-রাষ্ট্রযন্ত্রের মেরামত চলছে। এখন এ রাষ্ট্রযন্ত্রের মেরামতের সময় এসেছে। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজন। কিন্তু সে পরিবেশ নেই।
সরকার নিজে কথা বলছে, জনসভা করছে, কিন্তু বিরোধীরা করতে গেলেই বাধা দেয়া হচ্ছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন সবাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেই। জনগন সাহস দিলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে প্রধানমন্ত্রীও লাভবান হবেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনিও জিততে পারেন। কারণ তার সরকারও কিছু ভালো কাজ করেছে। আর যদি হারেন তাহলে তাকে জেলে যেতে হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। সেনাপ্রধান সম্পর্কে দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমার শব্দ চয়নে কিছু ভুল হয়েছে। আমি সেটা স্বীকারও করেছি। এখন সেটাকে অজুহাত করলে হবে না। তারপরও রাষ্ট্রদ্রোহ হয় কি করে? চোখে ছানি পড়লে হবে না। আমরা আসল জিনিস দেখতে পাচ্ছিনা।
আসিফ নজরুল বলেন, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় যারাই ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসবে তাদেরকেই সাথে নিবেন। আগে থেকেই শর্ত দেবেন না। কোন দল ক্ষমতায় আসবে কি আসবে না সেটা জনগণের উপর ছেড়ে দিন।
সানাউল হক নীরু বলেন, দেশে কেউ ক্ষমতায় গেলে নামার কথা ভুলে যায়। দেশে যে পরিস্থতি চলছে তা ভয়াবহ। এ অবস্থা থেকে দেশকে বাঁচাতে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। আমরা চেষ্টা করে দেখতে চাই। যে পথে গেলে দেশ এবং দেশের মানুষ ভালো থাকবে আমরা সে পথ দেখাতে চাই।