সাতক্ষীরায় ৫ টাকার পোল্ট্রির ডিম ৯ টাকা # শিল্পপতিদের কাছে জিম্মি ডিম সেক্টর # সরকারিভাবে বাজার তদারকির দাবী

আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় পোল্ট্রি ডিমের দাম বেড়েছে দফায় দাফায়। গত দু’মাসে প্রতিটা ডিমের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এতে পুষ্টিকর খাদ্য উপাদানটি নিন্ম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেকে ডিম খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ ডিমের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে পাইকারী ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ী আর খুচরা বিক্রেতারা খামারীদের দায়ী করছে। খামারিরা বলছে পোল্ট্রির খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও অসংখ্য খামার নষ্ট হয়ে যাওয়াতে জেলায় ডিমের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। তাই চাহিদা তুলনায় উৎপাদন কম থাকায় বাজারে দাম একটু বেশি। তাদের দাবী সারা বছরই ডিমের দাম এমনই থাকলে অনেক খামারি গুটিয়ে যেত না। এছাড়া পোল্ট্রি বাচ্ছা,খাদ্যের দাম বৃদ্ধিও ফার্মে বিভিন্ন রোগের কারনে অসংখ্য পোল্ট্রি মারা গেছে। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে জেলার কয়েকশ খামারি পোল্ট্রি চাষ বন্ধ করে দিয়েছে।
এমন বাস্তবতায় জেলা ডিমের বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। জেলার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রীতিমত সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত দু’মাসের ব্যবধানে ৫ টাকার ডিমের খুচরা দাম হাকা হচ্ছে প্রতি পিস ৯ টাকা।
ভুক্তভোগীদের দাবি, সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের বাজার অস্থির রয়েছে। যে কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় এ ভোগ্য পণ্যটির বাজার এখন বেশামাল রূপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে দ্রুতই মাঠে নামছে প্রাণিম্পদ বিভাগ।
মানুষের আমিষ চাহিদার বিশাল একটি অংশ পূরণ করছে পোল্ট্রি ডিম। গত তিন বছরে দেশে প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বেড়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৭ অনুযায়ী বর্তমানে প্রতিদিনের ডিমের প্রাপ্যতা রয়েছে জনপ্রতি ৯২.৭৫টি। যদিও এর আগের বছর ডিমের প্রাপ্যতা ছিল জনপ্রতি ১০৪টি। প্রাপ্যের তুলনায় জেলাতে ব্যাপক খাটতি রয়েছে। জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের মতে জেলাতে ডিমের চাহিদা রয়েছে ২০.৮০ কোটি। সেখানে উৎপাদিত ডিমের পরিমাণ ১৭.২০ কোটি । যে কারণে প্রতিবছর শুধু এ জেলাতে ঘাটতি থাকে ৩.৬০ কোটি ডিম। জেলা প্রাণিজসম্পদ কর্মকর্তার দাবী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার রির্পোট অনুযায়ী জেলার মানুষ প্রাপ্যতা অনুযায়ী ডিম খাই না । তাই ডিমে জেলাতে ঘাটতি থাকে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মতে বর্তমানে জেলাতে ৪৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ১৮৮টি মুরগী ও ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ২৪টি হাস রয়েছে । ব্রয়লার মুরগীর রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত খামার রয়েছে ২১৭৯টি ও লেয়ার মুরগীর রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত খামার রয়েছে ২৬৮৭টি। তবে বেসরকারী হিসাব মতে এর সংখ্যা অনেক বেশি।
জেলাতে গবাধি পশু চিকিৎসার প্রায় ২-৫ ভাগ ওষুধ সরকারী ভাবে সরবরাহ করা হয় বলে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানায়। চলতি বছরে হাস মুরগীর টিকা প্রদান করা হয়েছে ৩৮ লক্ষ ৯৮ হাজার মাদ্রায়। ৭৭ লক্ষ ৪৯৪টি হাস-মুরগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এসব ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দেয়ার নামে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ন ও দুর্ণিতীর অভিযোগ।
ডিমের দাম বৃদ্ধি সহ প্রাণীর নানা সমস্যা ও সম্ভবনা নিয়ে চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে জেলাতে ২৯৩ টি উঠান বৈঠক করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। জেলার ৭৮টি ইউনিয়নের ২১ জন ফিল্ড অফিসার কর্মরত। ফলে ৩ থেকে ৪টি করে ইউনিয়ন একজন করে ফিল্ড অফিসার । শ্যামনগর ও কলারোয়াতে প্রথম শ্রেনীর কোন কর্মকতৃা নেই। যদিও প্রত্যেক উপজেলাতে একজন করে প্রথম শ্রেণীর চিকিৎসাবিদ ও একজন কৃষিবিদ থাকার কথা। এসব কারণে জেলাতে এ খাতটি অবহেলিত রয়েছে। যার কারণে ডিমের নৈরাজ্য ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা।
অথচ গত দেড় থেকে দু’মাসের ব্যবধানে এই ডিমের দাম প্রায় দিগুন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্য মিলেছে,সাতক্ষীরা, যশোর শহরসহ দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি, প্রতিষ্ঠান আধিপত্য বিস্তার করে আছে ডিম বাজারে। সরকারি কোনো বাজার তদারকি না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।
বর্তমানে বাজারে প্রতিটি লাল পোল্ট্রি মুরগির ডিমের খুচরা মুল্য সাড়ে ৮টা থেকে ৯টাকা। প্রতিটা সাদা পোল্ট্রি মুরগির ডিমের খুচরা বাজার মুল্য ৮টাকা থেকে সাড়ে ৮টাকা। প্রতিটি দেশি মুরগির ডিমের খুচরা বাজার মুল্য ১০টাকা। প্রতিটি দেশি হাঁসের ডিমের খুচরা বাজার মূল্য ১১ টাকা। প্রতিটা কোয়েলের ডিমের খুচরা বাজার মুল্য আড়াই টাকা প্রতিদিন ডিমের দাম বেড়েই চলেছে। হাঁস-মুরগির খাবারের বস্তা প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়লেও ডিমের হালি প্রতি বাড়ানো হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা ।
সাতক্ষীরা বড়বাজারের দোকান ব্যবসায়ী মাহবুর জানান, বড় বড় ডিম ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে এ ডিমের বাজারটিকে ধ্বংস করছে। এখন পুরো বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করেছে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট লাখ লাখ ছোট ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়েছে। আজ যদি প্রতিটি ডিমের পাইকারী বাজার মূল্য সাড়ে ৮ টাকা হয়, কাল সেই ডিমের দাম ৮টাকা করা হচ্ছে। এতে দোকানদার ও ক্রেতা উভয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। যে কারণে দোকানে ডিম তুলতেও ভয় করছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
এছাড়া একাধিক ডিমের ডিলার ও ব্যবসায়ী জানান, বড় বড় শিল্পপতিদের কাছে ডিম সেক্টর জিম্মি হয়ে পড়েছে। আগে বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট মুরগির খামার ছিল। তারা নিজেরা নিজেদের শ্রম দিয়ে ডিম উৎপাদন ও বাজারজাত করতেন। বড় বড় ব্যবসায়ীর সাথে প্রতিযোগিতায় ঠিকতে না পেরে সে সব খামার অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে বাজারটা এখন গুটি কতক ব্যবসায়ীর দখলে চলে গেছে। তারা বাজারটাকে যেভাবে চালাবে বাজার সেভাবে চলবে। তারা যদি মনে করে আজকে প্রতিটি ডিমের বাজার দর ৫টাকা হবে তাহলে ৫টাকা। যদি মনে করে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা হবে তাহলে ১০ টাকা দিয়ে সাধারণ মানুষকে ডিম কিনে খেতে হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্রদাশ জানান, দুঃখজনকভাবে বেসরকারি বড় ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎ হঠাৎ করে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেয় সিন্ডিকেট করে। এর নিয়ন্ত্রণ এই মুহূর্তে সরকারের হাতে নেই। তবে দ্রুতই এই নৈরাজ্য রুখে দিতে মাঠে নামবে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর।
সরকারিভাবে ভর্তূর্কি দিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন করে কম দামে বাজারে ডিম ছাড়লেই এই নৈরাজ্য রোধ হতে পারে। এছাড়া ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সংলাপ ও সমন্বয় করার দাবী সংশ্লিষ্টদের।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।