ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মূখ্য উপ-সহকারী পররাষ্ট্র সচিব এলিস ওয়েলস রোববার পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সাথে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ আকাঙ্খার কথা তুলে ধরেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কনস্যুলার বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী কার্ল রিচ একই দিন পৃথকভাবে পররাষ্ট্র সচিবের সাথে বৈঠক করেন। তিনি ই-পাসর্পোট নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশী পাসপোর্ট হারালে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে রির্পোট করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান। দুটি বৈঠকেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট উপস্থিত ছিলেন। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেননি।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব জানান, এলিস ওয়েলসের সাথে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বলে আমাদের জানিয়েছে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যাশার কথাও যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে।
শহীদুল হক বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগত সম্পর্কের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শক্তিশালী অংশগ্রহণ চায়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এলিস ওয়েলসের সাথে পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাখাইনে ভয়ভীতিমুক্ত অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগত সম্পর্ক নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এটা নিয়ে সার্বিকভাবে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ এই কৌশলের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগত সম্পর্কের উদ্যোগ চীনের ‘বিল্ড এন্ড রোডে’র সমান্তরাল বা বিকল্প কিছু নয় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, অন্তত বাংলাদেশ এই দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি দেখে না। এই উদ্যোগ মূলত অর্থনীতি নির্ভর। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি উন্নয়ন। বাংলাদেশ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।
বৈঠকের পর রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে কক্সবাজার যান এলিস ওয়েলস। সেখানে তিনি জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারি কমকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করবেন। ওয়েলস আজ ঢাকায় ফিরে একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।
কনস্যুলার বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী কার্ল রিচের সাথে পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকে ই-পাসপোর্টের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ জানিয়েছে, ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট শিগগির ইস্যু হবে। আগামী ১০ বছরে তিন কোটি ই-পাসপোর্ট ইস্যুর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
বাংলাদেশী পাসপোর্ট হারালে ইন্টারপোলের কাছে রির্পোট করার পদ্ধতি সম্পর্কে কার্ল রিচকে জানানো হয়, কেউ পাসপোর্ট হারালে প্রথমে থানায় সাধারন ডাইরি করা হয়। এরপর বিষয়টি গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করে পুলিশের বিশেষ শাখাকে জানায়। সবশেষে তা ইন্টারপোলের কাছে রিপোর্ট করা হয়।
একজন কর্মকর্তা জানান, অনেক পাসপোর্টের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাও থাকে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কারণে পাসপোর্ট ইস্যু ও হারানোর পর ইন্টারপোলে রিপোর্ট করাকে বেশ গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কার্ল রিচের সাথে বৈঠকে মানবপাচার নিয়েও আলোচনা হয়েছে।