ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ সরকার সবদলের অংশগ্রহণমূলক নয় গায়ের জোরে নির্বাচন করতে চায় মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চূড়ান্ত ক্র্যাকডাউন শুরু করেছে। এ যেন বাতি নিভে যাওয়ার আগে হঠাৎ জ্বলে উঠা। গুপ্তহত্যা, বিচারবর্হিভুত হত্যা, গুম, খুন, বিরোধী মত দলন-নিপীড়নের সঙ্গে দেশজুড়ে চলা গণগ্রেফতারের গতি এখন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শুধু অপশাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলার কারণেই রাতে কোর্ট বসিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এটা সকলের কাছে পরিষ্কার।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, মো: মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘দেশে সময় মতো নির্বাচন হবে। বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ বহাল থাকবে। যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার ক্ষমতা আওয়ামী লীগ ও সরকারের আছে’ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাসই হলো ভোট ডাকাতির নির্বাচন, ভোটারবিহীন নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে- তিনি সুষ্ঠু ও সবদলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান না, গায়ের জোরে নির্বাচন করতে চান। জোর করে ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চান। এ সরকারের আমলে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবেও না।
বিএনপির এই মুখপাত্র আরো বলেন, আমি পরিষ্কার বলে দিতে চাই আরেকটি একতরফা নির্বাচন হবে না, এদেশের মানুষ হতে দিবে না। সিটি নির্বাচনের স্টাইলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। জনগণের দাবি ও আন্দোলনকেই তিনি ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সেজন্য সরকার প্রধান তার অমূল্য ধন ক্ষমতা হারানোর ভয়ে এখন পুলিশি শক্তির উপরই ভরসা করছেন। সেজন্য নিরীহ, নিরস্ত্র বিরোধী দলকে মোকাবিলার হুমকি দিচ্ছেন। অবশ্য যুগে যুগে দেশে দেশে জন-অধিকারের পক্ষে গণতন্ত্রকামী মানুষদের আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র হিসেবে চিত্রিত করেছেন একনায়ক স্বৈরাচাররা। সরকার প্রধানের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নীতির প্রতি যাদেরকে তিনি অবাধ্য মনে করছেন তাদের ঠিকানা হচ্ছে কারাগারে।
তিনি বলেন, আগেই বলেছিলাম দেশজুড়ে ফের গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে সরকার। এবার নারায়ণগঞ্জে ৪ জনকে হত্যার পর গুলিবিদ্ধ লাশ ফেলে রাখা হয় সড়কের পাশে। আজকে গণমাধ্যমের শিরোণাম হলো, রাতে ফাঁড়িতে, সকালে সড়কে লাশ। ৪ জনকেই ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ফাঁড়িতে গিয়ে তাদের স্বজনরা তাদের খাবারও দিয়ে এসেছিল। সকালে গুলিবিদ্ধ, থেঁতলানো লাশ মিলল সড়কের পাশে। এটা কতটা মর্মান্তিক ও বিভৎস ঘটনা? এরকম নিষ্ঠুর অমানবিক ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষাও আমাদের নেই। দেশের জনগণ যেন সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এক অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্রামে ভয়ার্ত দিন কাটাচ্ছে। সারাদেশটাকে ভুতুরে বাড়িতে পরিণত করা হয়েছে। লাশের পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। কিন্তু মানুষ আরতো বেশি দিন চুপ করে বসে থেকে শুধু আহাজারি করবে না। মৃত্যু ভয় জয় করে গণতন্ত্রের নির্ভয় সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে সকল শক্তি নিয়োগ করবে। বর্তমান দুঃশাসনের অবসান সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ব্যারিস্টার মইনুল প্রসঙ্গ
রিজভী বলেন, গতকাল মানহানির মামলায় দেশের প্রতিথযশা আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে সরকার। মানহানি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা নজিরবিহীন ঘটনা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে ব্যহত করতেই এ গ্রেফতার। তাছাড়া ব্যারিস্টার মইনুল জামিনে ছিলেন, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন ব্যক্তিও। শুধু অপশাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলাটাকেই অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে সরকার। রাতে কোর্ট বসিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে যে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা সকলের কাছে পরিষ্কার।
রিজভী আরো বলেন, কারণ গতকাল প্রধানমন্ত্রী যখন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন মইনুল হোসেন একটি মামলায় জামিন পেয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আরো মামলা করেন বাকীটা আমরা দেখছি। এ ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলো, তাকে গ্রেফতার করা হলো। মানহানি মামলায় তো প্রথমেই গ্রেফতারি পরোয়ানা নজির নেই। প্রথমে সমন জারি করে আসামি পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হয়। আসামি পক্ষ উপস্থিত না হলে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের গ্রেফতার সম্পূর্ণ বেআইনি। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মুক্তি দাবি করছি।
নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার
তিনি বলেন, সারাদেশে গায়েবি মামলার পর এখন চলছে গণগ্রেফতার। চট্টগ্রামের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করকে আটক করেছে পুলিশ। গতরাতে সিলেট ও চট্টগ্রামে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে পুলিশ। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারের খবর আমরা পেয়েছি।
তিনি বলেন, গতকাল কক্সবাজার জেলা বিএনপির এটিএম নূরুল বশর চৌধুরি, কুতুবদিয়া বিএনপির জামাল আহমেদসহ ২৩জনের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল কক্সবাজারে ৪১৩ জনকে আসামি করে আরো ৪টি গায়েবি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেফতার থেকে বিএনপির নারী নেত্রীরাও রেহাই পাচ্ছে না। তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি ও হেনস্থা করা হচ্ছে। ফেনী জেলা মহিলা দলের জুলেখা আক্তার ডেইজিকে পরশুদিন রাতে গ্রেফতার করা হয়। কোনো কারণ ছাড়া ২৪ ঘন্টা আটক রেখে গতকাল বিকেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ সরকারের আমলে বিএনপির নারী নেত্রীদের ওপর জুলুম নিত্য নৈমত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাতক্ষিরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রদলের শফিকুর রহমান, পানছড়ির আবিদুল হায়াত, মানিকছড়ি যুবদলের আবুল কালামসহ আট জন, বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলা যুবদলের মোঃ সাজেদুল হক, খোট্টাপাড়ার আবদুল মজিদ, মোঃ শহিদুল ইসলাম, চুপিনগরের মোঃ ফারুক হোসেনকে শাহজাহানপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমি অবিলম্বে মিথ্যা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবি করছি।