ক্রাইমবাতা রিপোটঃ গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেশের মানুষ গত ৫ বছর থেকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা বঞ্চিত ভোটের অধিকার থেকেও। তিনি বলেন, জনগন এই দেশের মালিক, ক্ষমতার মালিক। দেশের মালিকানা যেন দেশের মানুষ ফিরে পায় সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ, অধিকার আদায়ে জনগন যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখনই বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
বুধবার বিকেলে সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের ৭টি দাবির প্রথমটি হচ্ছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর সাথে আরো ৬টি দাবি রয়েছে। এসব দাবির কথা প্রতিটি গ্রামে, থানায় ও উপজেলায় ছড়িয়ে দিতে হবে।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে ড. কামাল আরো বলেন, দেশের মুষ্ঠিমেয় মানুষের উন্নয়নে উন্নয়ন হয় না। আমরা চাই, ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়ন। আমরা ইনশাআল্লাহ বিজয়ী হবো। আমাদের বিজয় অনিবার্য। তিনি অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান।
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সিলেটবাসী অনেক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন। আজ আরেকটি ইতিহাসের জন্ম দিচ্ছেন। এই ইতিহাস হচ্ছে গণতন্ত্র মুক্তির ইতিহাস। তিনি বলেন, আজ থেকে নতুন লড়াইয়ের শুরু হলো। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের অধিকার। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। ইভিএম দেয়া চলবে না। ডিজিটাল চুরি করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি’র সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, দেশ ডাকাতের হাতে পড়েছে। দেশকে বাঁচাতে হলে, খালেদার মুক্তি চাইলে রাজপথে নামতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের যে লড়াই, এই লড়াই বাঁচার লড়াই, ভোটের লড়াই, গণতন্ত্রের লড়াই। এ লড়াইয়ে জিততে হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের জোয়ারে নৌকা টালমাটাল, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে আইনের সংস্কার প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বিজয়ী হই, আপনারা যদি সমর্থন করেন, তবে তিন মাসের মধ্যে দেখবেন দেশে ওষুধের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে, চিকিৎসা খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার জনগনের নির্বাচিত সরকার নয়। তারা আবারও প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। তারা ইলিয়াস আলীসহ শত শত ব্যক্তিকে গুম করেছে। জনগনের কাছে তার জবাব দিতে হবে। সব লুটপাটের জবাব দিতে হবে। এজন্য তারা জনগনকে ভয় পায়। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন জেলে। তিনি নানা রোগে আক্রান্ত। ৭৩ বছর বয়সে তাঁর জেল খাটার কথা না। দেশে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বিচার হয়নি। আমরা সবাই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। মান্না আরো বলেন, সরকার চোরের মতো, ডাকাতের মতো ভোট ডাকাতি করছে। সিলেটের মানুষ সাহস দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করেছে। তিনি বলেন, কেউ যদি পারেন, (এই সমাবেশের) একটি ভিডিও প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি অবাক হবেন, এতো বাধার পরেও কিভাবে এতো মানুষ হলো সমাবেশে।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে ফতুর করে দিয়েছেন ‘রাবিশ মন্ত্রী’ মুহিত সাহেব।’ তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা কি রাবিশ মন্ত্রীকে চেনেন?’ ওই সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দেয়। একইসাথে নেতাকর্মীরা ‘কাউয়া কাউয়া’ বলে স্লোাগান শুরু করে। সুব্রত চৌধুরী আরো বলেন, সিলেটে এই সমাবেশের মধ্যদিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শুভ সূচনা হলো। সিলেটের পূণ্যভূমি থেকে গণজোয়ার সৃষ্টি হলো। বাংলার ১৬ কোটি মানুষ এই গণজোয়ারের সাথে সম্পৃক্ত হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেছেন, রেফারি ও খেলার দল একই হলে হবে না। তিনি বলেন, ১০ বছর পর সিলেটে বক্তৃতা দিচ্ছি। ইলিয়াস আলী এক সময় সিলেট এমসি কলেজে পড়াকালে ছাত্রলীগ করতেন। ঢাকায় গিয়ে ছাত্রদলে যোগ দেন। তাকে গুম করা হয়েছে। সিলেটের মানুষের রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে। অথচ কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, তারপরও সরকার বলছে এটা কিছুই নয়।
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা আহম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। বেগম জিয়াসহ সব নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে।
জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন- জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মোঃ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির মহাসচিব ডা. রেদোয়ান আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীন, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন প্রমুখ।
পথে পথে পুলিশী বাঁধা, রাতভর ছিল ঘরে ঘরে তল্লাশী
পূণ্যভুমি সিলেট থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশকে ঘিরে সিলেট ছিল মিছিলের নগরী। পথে-পথে পুলিশী বাধা আর রাতভর ঘরে ঘরে তল্লাশীর পরও সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন। সিলেটের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিছিলে উত্তাল ছিল সিলেট শহর। বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে সিলেট শহর ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা, জেলা-উপজেলা থেকে পুলিশি বাধার মুখেও খন্ড খন্ড মিছিল আসতে শুরুর হয়। দুপুর গড়িয়ে বেলা প্রায় আড়াইটায় সিলেট রেজিষ্ট্রী মাঠে জনতার ঢল নামে।