উপকূলে ভাঙন আতঙ্ক খুলনায় ১৫-২০ ফুটের বেড়িবাঁধ বর্তমানে আছে দু-তিন ফুট:সাতক্ষীরা এ এলাকায় নামমাত্র বেড়িবাঁধ সংস্কার

ক্রাইমবাতা রিপোটঃ   খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার উপকূলবাসী বাঁধ ভাঙ্গার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ঘুমের মধ্যেও তারা আঁতকে ওঠেন, এই বুঝি বাঁধ ভেঙে গেল। তবে নড়বড়ে বেড়িবাঁধই তাদের বেঁচে থাকার শক্ত খুটি। কিন্তু যে কোন মুহূর্তে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। গত দু’তিন দিনে খুলনার তেরখাদা উপজেলার সেনের বাজার-কালিয়া-বড়দিয়া সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার আতাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে সড়কটিতে যানবাহন ও মানুষের চলাচল। বিচ্ছিন্ন হয়েছে জেলা ও উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের পারহাজী গ্রামের নদীপাড়ের সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। জরুরি ভিত্তিতে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে সড়কের নদীর পারের বাকি অংশও নদীগর্ভে যেকোন সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
সূত্রমতে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ নামমাত্র এ এলাকার বেড়িবাঁধ সংস্কার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপক‚লীয় উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের চিত্র একই। কোথাও কোথাও মাত্র দু-তিন ফুট চওড়া মাটির বাঁধ রয়েছে। তাও আবার তিতলীর আঘাতে ধসে পড়েছে। স্থানীয় জনতা কোনোমতে ঠ্যাক দিলেও তা দিনে দিনে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও বাগেরহাট উপকূল এলাকার বেড়িবাঁধের অনেক জায়গা দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। সামান্য জোর বাতাসে লোকালয়ে ঢুকছে লবণপানি। যেকোনো সময় প্লাবিত হতে পারে এসব এলাকা। আর সেই আশঙ্কা নিয়েই নির্ঘুম রাত কাটছে এ এলাকার মানুষের। ১৫-২০ ফুট প্রস্থের বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে আর মাত্র দু-তিন ফুট রয়েছে। সামান্য ঝড়ো বাতাস উঠলেই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ছে এসব এলাকার মানুষ। স্থানীয় বাবু গাজি, মোঃ রেজাউল গাজি, মোঃ নকিজ উদ্দিন শেখ, মোঃ আবুল গাজী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ নেয় না। বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলেই তাদের দৌঁড়ঝাঁপ শুরু হয়। এর আগে তারা কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয় না।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নাকনা, হরিষখালী, কোলা, শ্রীপুর, মণিপুর, খাজরা বাজার ও গদাইপুর পয়েন্টে কপোতাক্ষ নদের বেঁড়িবাধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। ভাঙন ধরেছে খোলপেটুয়া নদীর কাঁকড়াবুনিয়া, থানাঘাটা, নছিমাবাদ, জেলেখালী দয়ারঘাট, বলাবাড়িয়া, বিছট ও কাকবাসিয়া পয়েন্টে। শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা’র বেশি নাজুক পার্শ্বেমারী, নাপিতখালী, গাগড়ামারি, লেবুবুনিয়া, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলা, কামালকাটি, চাউলখোলা, চন্দ্রদ্বীপ ও পাতাখালী পয়েন্টে খোলপেটুয়া এবং কপোতাক্ষ নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া একই উপজেলার ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে রমজাননগর ইউনিয়নের মাদার নদীর শেখবাড়ী মসজিদ ও চৌকিদারপাড়া এবং কালিন্দি নদীর পশ্চিম কৈ’খালীর মানুষ। দুর্গাবাটি ও পোড়াকাটলায় খোলপেটুয়া নদীর এবং দাতিনাখালীতে চুনা নদীর বেড়িবাঁধও এখন ঝুঁকিপূর্ণ।
শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আয়তনের ইউনিয়নের ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোন সময় ভাঙতে পারে।
আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের হিজলিয়া, কোলা, শুভদ্রকাটি, কুড়ি কাউনিয়া, চাকলা, হরিশখালি, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে আর এক-দুই হাত অবশিষ্ট আছে। এ বছর বেড়িবাঁধ ভেঙে চারবার প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ না ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুম ভাঙে না উল্লেখ করে স্থানীয় চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, বাঁধ ভাঙলে সংস্কার করা হয়। ভাঙার আগে বার বার বলা সত্তে¡ও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। তার ইউনিয়নের অন্তত ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম কবি শামসুর রহমান জানান, সুন্দরবনের একেবারে গায়ে এই ইউনিয়ন। প্রায় সময় ভাঙনের কবলে থাকতে হয় আমাদের। লোকালয়ে লবণ পানি থেকেই যাচ্ছে। কোনোমতে মেরামত করা হয়। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই আবার ভেঙে যায় বেড়িবাঁধ।
বাগেরহাট সাউথখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নের বগি গ্রামটি আর কিছুদিন পর হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এ ছাড়া ইউনিয়নের অনেক বেড়িবাঁধই আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।

Check Also

তালায় ইউপি পরিষদ কক্ষে দুই সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন

তালা প্রতিনিধি তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম ও আতাউর রহমানের ওপর সন্ত্রাসী রমজান আলী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।