ক্রাইমবাতা রিপোটঃ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। প্রথম মাঠের কর্মসূচি সিলেটের জনসভা থেকে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে।
ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি তুলে ধরে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেয়া ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন। সকালে হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করে ঐক্যফ্রন্টের মাঠের কর্মসূচি শুরু করেন শীর্ষ নেতারা। দুপুরের পর ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে আয়োজিত জনসভায় অংশ নেন তারা। সমাবেশ ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে তা সম্পন্ন হয়েছে। জনসভায় জামায়াত ছাড়া ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। দুপুরের পরে শুরু হওয়া সমাবেশ বিকালে রেজিস্ট্রারি মাঠ ছাড়িয়ে আশেপাশের সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। জনসভা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরে ছিল পুরো এলাকা।
জনসভায় আসতে পথে পথে বাধারও অভিযোগ করেছেন নেতারা। সমাবেশ শেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত ৩০ নেতাকর্মীকে।
জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যপ্রক্রিয়ার শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের শরিক দলের যেসব নেতা বক্তব্য দেননি তাদের মঞ্চ থেকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়াসহ আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি’র দাবিতে বেলা ২টায় এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এতে সভাপতিতত্ব করেন। বেলা ২টা বাজতেই বাধা উপেক্ষা করে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বেলা আড়াইটায় যখন সমাবেশস্থলে ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চে পৌঁছেন তখন কানায় কানায় ভরপুর পুরো মাঠ। এরপর থেকে মানুষ বাড়তে থাকে সমাবেশ স্থলে। ক্রমেই জনতার ঢল ছড়িয়ে পড়ে সামনের রাস্তায়। একদিকে সিটি পয়েন্ট ও অন্যদিকে তালতলা পয়েন্ট পর্যন্ত ছিল মানুষের উপস্থিতি। রেজিস্ট্রারির মাঠের সামনেই সুরমা মার্কেট। মার্কেটের প্রতিটি তলায় অবস্থান ছিল নেতাকর্মীদের। বিপুলসংখ্যক লোক সমাগমের মধ্যেও পুলিশ ও র্যাবের কড়া টহল ছিল।
নিকট অতীতে কোনো কর্মসূচিতে রেজিস্ট্রারি মাঠে এত লোক সমাগম ঘটেনি বলে জানিয়েছেন আশপাশের ব্যবসায়ীরা। বেশিসংখ্যক লোকের উপস্থিতি থাকলেও সেটি ছিল শান্তিপূর্ণ। নগরীর প্রবেশমুখ দক্ষিণ সুরমা এলাকায় গাড়ি রেখে বিভিন্ন জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হেঁটে হেঁটে সমাবেশস্থলে পৌঁছেন। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেকের সঞ্চালনায় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের মানুষ স্বৈরতন্ত্রের প্রজা হয়ে থাকতে চায় না, দেশের মালিক তাদের মালিকানা ফিরে পেতে চায়। এজন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বিজয় অনিবার্য। ড. কামাল হোসেন উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার কি মাঠে থাকবেন? এ সময় জনসভায় উপস্থিত জনতা হ্যাঁ বলে সম্মতি জানান। সংবিধান প্রণেতা বলেন, আমাদের প্রায়ই শুনতে হয় মাঠে নাই। আমরা আগামী দিনে কর্মসূচি দেবো। তার জন্য মাঠে নামতে হবে। ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি উল্লেখ করে তা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সংবিধানের ৭নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনগণ দেশের মালিক।
কিন্তু আপনারা কি মালিকানার ভূমিকায় থাকতে পেরেছেন? জনগণ যেন মালিকানা পায়, এজন্য আমরা ৭ দফা দিয়েছি। এই ৭ দফা আপনাদের কাছে বিতরণ করা হবে। আপনারা এগুলো নিয়ে গ্রামে গ্রামে, ইউনিয়নে ইউনিয়নে, থানায় থানায়, জেলায় জেলায় যাবেন। ঐক্যফ্রন্টের এই দাবি হালকাভাবে নেবেন না। এত বড় জিনিস ফিরিয়ে আনার জন্য আপনাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। জনসভা সফল করায় সিলেটের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, মালিকানা উদ্ধারে জনগণের ঐক্য অপরিহার্য।
তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে নির্বাচন না হলে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। সত্যিকার নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা সাত দফা দিয়েছি। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করবো। ড. কামাল হোসেন বলেন, বারবার বলা হয় উন্নয়ন, কিন্তু কার উন্নয়ন? যারা আমাদের ভোট বঞ্চিত করে রেখেছে, তাদের উন্নয়ন।
জনসভার প্রধান বক্তা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সিলেট অনেক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে, আজ আরেকটি ইতিহাসের জন্ম দিলো। সেই ইতিহাস গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইতিহাস। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনবো। সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। বলেন, আজকে যে নতুন লড়াই শুরু হলো, সেই লড়াইয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে। তারেক জিয়াসহ সব বন্দিদের মুক্ত করে আনতে হবে। বিএনপি মহাসচিব নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে জনগণকে আহ্বান জানান।
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, দেশটা ডাকাতের হাতে পড়েছে। তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, দেশকে বাঁচাতে চান? খালেদা জিয়ার মুক্তি চান? তাহলে শুধু নিজেরা মাঠে নামলে হবে না, সর্বস্তরে জনগণকে নামাতে হবে। তিনি বলেন, এই সমাবেশে আসতে কর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার পরও সিলেট শহরে কোনো রাস্তায় জায়গা নেই। তিনি বলেন, সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, আর একটি কর্মীর গায়ে হাত দিলে সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নামবে। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াই ভোটের অধিকারের লড়াই। এ লড়াইয়ে জিততে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজ নতুন যাত্রা শুরু হলো। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশে একটি স্বৈরাচারি সরকার রয়েছে। এ কারণে ঐক্য করতে হয়েছে। এই ঐক্যের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকারের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ১০ বছরে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। উচ্চতম থেকে নিম্নতম পর্যায়ে দুর্নীতি হয়েছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে সব ঘুষ দুর্নীতির হিসাব নেবো। একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবো। তিনি বলেন, এই সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে, রিজার্ভ, কয়লা লুট করেছে, এজন্য সরকার ভয় পায়। কিন্তু যতই ভয় পাক, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, তফসিল ঘোষণার ্আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এদেশের জনগণের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি, সারা দেশের জনগণ রাস্তায় নামবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সভা সফল করার জন্য বিএনপি সভাপতির বাড়িতে একটি বৈঠক বসেছিল, পুলিশ সেখানে হানা দিয়েছে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি করা হয়েছে, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করা হয়েছে। সিলেটের প্রত্যেকটি রাস্তা পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। বাস থেকে সমাবেশে আসা মানুষকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। টেম্পু, থ্রি হুইলার এগুলোতে যারা আসছে তাদেরকে পর্যন্ত নামিয়ে দিয়েছে। এই জনসভা গতকাল (মঙ্গলবার) করার কথা ছিল, কিন্তু অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু আমরা ঠিকই আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। এই রেজিস্ট্রারি মাঠে লাখো জনতা হাজির হয়েছে। তিনি বলেন, দেশ এখন গভীর সংকটে।
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এখন জেলে, উনার হাঁটুতে ব্যথা, দুইবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। ৭৩ বছর বয়সে তার জেল খাটবার কথা নয়। কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। তার বিচার হয়নি। অথচ তার দুই কোটি টাকা ফুলে ফেঁপে ৬ কোটি টাকা হয়েছে। আমরা সবাই বলছি তার মুক্তি চাই। আমি জানি আপনাদের সবার মনের মধ্যে ক্ষোভ। আপনারা আগামী দিনে শপথ নিন কিভাবে তাকে মুক্ত করে আনতে পারি। দোতলার একটা ভাঙা জায়গায় তাকে রাখা হয়েছে, হাঁটুর ব্যথার কারণে হাঁটতে পারেন না, নিচে নামতে পারেন না, ডাক্তার দেখা করতে যায়, দেখা করতে দেয়া হয় না। উনি সেখান থেকে নেমে জেলগেট পর্যন্ত আসতে পারবেন এমন শক্তি নেই। মেরে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক দেন-দরবার করে তাকে পিজিতে আনা হয়েছে। যে ডাক্তার দেখাতে চান তাকে দেখতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন, শুধু চিৎকার, স্লোগান দিয়ে নয়, কীভাবে মুক্ত করে আনতে পারি সেই চিন্তা করেন।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আজ আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। ২০১৪ সালে এক দল খেলেছে মানে ওয়াক ওভার। যদি কেউ মনে করে এইবার ওয়াক ওভার নিয়ে আবার খেলতে পারবে, সে সুযোগ দেয়া হবে না। গতবার নির্বাচনের সময় ঘরের মধ্যে ছিলেন, এই বার যদি আমরা নির্বাচনে অংশ নিই, কোটি কোটি মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসবেন। পাশে থাকবেন।
এই সমাবেশ দেখে সরকার অবাক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা একদিনের গণতন্ত্র চাই না, সারা বছরের গণতন্ত্র চাই। সেই লড়াইয়ে সবাইকে পাশে চাই।
ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, সিলেটে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জন্ম। তারা মুক্তিযুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন। সিলেটের মানুষ কখনো নিচু করে না, মাথা উঁচু করে হাঁটে। শাহজালাল, শাহপরানের এ অধ্যাত্মিক ভূমি থেকে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা হলো। সফলতা আসবেই। তিনি বলেন, সিলেটের মানুষ বিদেশ থেকে লাখ লাখ টাকা পাঠায় আর সরকারের লোকজন পাচার করে। সুলতান মনসুর বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে। তিনি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। রেফারি এবং খেলোয়াড় একজন হবে না, রেফারিং করতে চাইলে খেলোয়াড় হওয়া যাবে না, আর খেলোয়াড় হতে চাইলে রেফারি হওয়া যাবে না।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, এই সমাবেশে প্রতি পদে পদে বাধা দেয়া হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নাটক করছি। কিন্তু কালকে সারারাত নাটক দেখেছি। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করা হয়েছে। এত বাধার পরও সমাবেশে তিল ধারণের জায়গা নেই। তিনি বলেন, জনতা এই দেশের মালিক, তারা ভোট দিয়ে সরকার গঠন করতে চায়। এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সেই অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমরা কিছু সিকি আধুলি একত্রিত হয়েছি। তিনি বলেন, এই সিকি আধুলির আমিও একজন। আজকে হয়রানি চলছে উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ বলেন, কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট মুক্তির জন্য কাজ করছে। খালেদা জিয়া তাতে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বলেন, আইনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার কামাল হোসেন, মইনুল হোসেনরা করতে পারবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আর কামাল হোসেনের পার্থক্য কোথায়? তিনি বলেন উনারা (সরকার) চাচ্ছে ঢাকার বাংলাদেশ আর আমরা চাচ্ছি সিলেটের বাংলাদেশ, বরিশালের বাংলাদেশ। সমগ্র দেশের বাংলাদেশ। প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে ওষুধের দাম, চিকিৎসা ব্যয় অর্ধেকে নেমে আসবে। কৃষক-শ্রমিক ন্যায্য মূল্য পাবে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোরও প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, খালেদা জিয়া এখন জেলে, শেখ হাসিনা কী জানেন খালেদা জিয়া ওই জেল থেকে বের হলে কে ওই জেলে যাবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে যাবো। তার আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। যাওয়ার রাস্তা শেখ হাসিনা দেখতে না পেলে জাতীয় ঐক্য সেই রাস্তা দেখিয়ে দেবে। খেলাফত মজলিস এর মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। এই অবৈধ সংসদ ভেঙে দিতে হবে। তা না হলে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হতে দেবো না। এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সব পদক্ষেপে এলডিপি সমর্থন করে। সব কার্যক্রমে সঙ্গে থাকবে আজকের এই ময়দান থেকে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি বাস্তবায়ন করেই এই দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বেলায়েত ইসলাম বলেন, সমস্ত জনগোষ্ঠী একটি দাবি নিয়ে এসেছে। আমরা স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে চাই।
জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, দেশে রাজনৈতিক মাঠে একের পর এক নাটক হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী দিশাহারা হয়ে গেছে। এর কারণ আজ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে। এর কারণ সারা দেশে বিরোধী শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কোনো শক্তি নাই এই ঐক্যকে বিনষ্ট করার। ঐক্যফ্রন্টের ভয়ে সরকার কাঁপছে।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন বলেন, অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। আমাদের বিরোধীরা আমাদের উত্তেজিত করতে চাইবে। আমরা সে পথে যাব না। জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব বলেন, আমাদের বাকস্বাধীনতা নেই। বেগম জিয়াকে কেন মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। ছোট বড় সবাই মিলে ঐক্য গড়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুল হক আসপিয়া, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, তাহসিনা রুশদীর লুনা, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমেদ আবদুল কাদের, নাগরিক ঐক্য সিলেটের আহ্বায়ক জিল্লুর রশিদ, গণফোরাম নেতা আ হ ম শফিকুল আলম, জগলুল হায়দার আতিক, মোকাব্বির খান, বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আকতার, বিএনপির সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, জেএসডির ইস্কান্দার রাজা চৌধুরী, বিএনপির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি জিকে গউস, সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন মিলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি প্রমুখ।
ইলিয়াসকে ফেরত চাইলেন লুনা: সমাবেশে নিখোঁজ বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত চাইলেন তার পত্নী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বেগম তাহসিনা রুশদীর লুনা। সমাবেশ শুরুর কিছুক্ষণ পর বেলা ৩টার দিকে তিনি বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন- ‘ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে।’ লুনা আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। দেশ বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। এটা চলতে পারে না।’ এজন্য তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
পথে পথে বাধার অভিযোগ: সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের পথে পথে বাধা দেয়া হয়েছে। এমনকি বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থেকে ভীতির সৃষ্টি করেছে। এমন অভিযোগ করেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। সমাবেশ শুরুর আগে বেলা দেড়টায় মাঠে বসেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন- সিলেটের বাইরে থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসতে চাইছিলেন। কিন্তু তাদের পথে পথে বাধা দেয়া হয়েছে। যাত্রীবাহী যানবাহন আটকে তল্লাশি করা হয়। প্রাইভেট গাড়ি করে নেতাকর্মীরা শহরে ঢুকতেই পারেননি। তিনি বলেন- পুলিশের বাধা থাকার পরও সমাবেশস্থলের অদূরে ছাত্রলীগের কর্মীরা মহড়া দেয়। এতে করে ভীতির সৃষ্টি হয়। সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বক্ত সাদেক অভিযোগ করেন- পুলিশ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ধরপাকড় চালায়। এ কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
১২ নেতাকর্মী কারাগারে: বৈঠককালে আটক কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। শাহরিয়ারকে গতকাল দুপুরে ও কয়েস লোদীকে রাতেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে আটক অপর ১২ নেতাকর্মীকে ছাড়া হয়নি। তাদের গতকাল দুপুরে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। তাদের ছাড়া হলেও গতকাল ১২ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিম মিয়া জানিয়েছেন- মঙ্গলবার রাতেই ডা. শাহরিয়ার ও কয়েস লোদীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আটক অন্য ১২জন বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়ায় তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।