ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট; ঢাকা: বাংলাদেশে ড. কামাল হেসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের ঐক্যফ্রন্টের কর্মকান্ড শুরুর পর আওয়ামী লীগকে তাদের নির্বাচনী কৌশল নতুনভাবে ভাবতে হচ্ছে বলে দলটির নেতাদের অনেকে বলছেন।
এই জোটকে এখন বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা এবারের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন। খবর বিবিসির।
তবে একইসাথে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তাদের বিরোধী জোট শেষপর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, তা নিয়েও তাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে।
ফলে ক্ষমতাসীনদের নতুন জোটের প্রতি নজর রেখে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল চিন্তা করতে হচ্ছে। নির্বাচনী কৌশলের ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনার জন্য আজ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, সংসদীয় দল এবং উপদেষ্টা পরিষদ যৌথ বৈঠকে বসছে।
দলটির সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠক হচ্ছে।
যদিও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট গঠনের প্রক্রিয়ার সময় স্বাগত জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তারা এই জোটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে না, এমন মনোভাবই দেখাচ্ছিল।
কিন্তু পরে আওয়ামী লীগকে আক্রমণাত্বক মনে হয়েছে।দলটির সবপর্যায়ের নেতারা মাঠের বক্তৃতায় এবং এমনকি সংসদেও নতুন জোটের কড়া সমালোচনা করছেন।
আর এই প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগ তাদের বিরোধী জোটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছে। দলটির নেতাদেরও অনেকে বলেছেনে, এখন তাদের কৌশল নতুনভাবে সাজাতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলছিলেন, তারা বিরোধী রাজনৈতিক জোটকে বিবেচনায় নিয়েই নির্বাচনী কৌশল ঠিক করছেন।
‘এই জোটকে আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি দু’টি কারণে। একটি হচ্ছে, আমাদের বিদেশী বন্ধু বা উন্নয়ন সহযোগীরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে কথা বলে, সেই প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রেখেছি। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো, ওয়ান ইলেভেনের ২০০৭ সালে যারা কুশিলব ছিল, সেই কুশিলবরা এই ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে আছে।
এখন তারা যদি নির্বাচনটাকে বানচাল করার বা পিছিয়ে নেয়ার বা অন্য কোন অপশক্তি বা অসাংবিধানিক কোন শক্তি আনার প্রক্রিয়া করে, সে ব্যাপারে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তবে আমরা এটা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবো।’
সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্ট কোন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে কিনা, সেদিকে যেমন আওয়ামী লীগ নজর রাখছে।
অন্যদিকে, বিএনপিসহ এই জোটের এবার নির্বাচন বয়কটের সম্ভবনা কম বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন। আওয়ামী লীগ দুই ধরণের চিন্তা নিয়েই এগোচ্ছে।
দলটির নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বিএনপিসহ এই জোট নির্বাচনে এলে সেই পরিস্থিতিকেও তারা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন।
‘যদি বিএনপি আসে তাহলে প্রার্থী মনোনয়নে আমাদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। যাদের যোগ্যতা আছে, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাদের প্রার্থী করতে হবে।’
ড. রাজ্জাক এটাও স্বীকার করেন যে, নেতা বা এমপিদের অনেকে জনগণ এবং এমনকি দল থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
‘আমাদের বলতে দ্বিধা নাই যে, অনেক নেতাকর্মি এবং এমপি,মন্ত্রীরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আমাদের দলের সভানেত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন, যে প্রয়োজন হলে উনি নিষ্ঠুর হবেন।
একজন মন্ত্রী, তাই তাকে মনোনয়ন দিতে হবে, সেটা উনি মনে করছেন না। এবার নির্বাচন অনেক চ্যালেঞ্জিং, এই নির্বাচন আমাদের মোকাবেলা করতে হবে ভাল প্রার্থী দিয়ে।’
তিনি আরো বলেছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে তাদের তৃণমূলের নেতা কর্মিদের মধ্যে পাওয়া না পাওয়া বা প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে। সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে তারা দলকে ঐক্যবধ্য অবস্থানে আনার বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এরসাথে তাদের জোটকে নিয়ে বিরোধীপক্ষকে মোকাবেলার কৌশল ভাবছেন।
আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির নেতারাও এবার নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলছিলেন, আওয়ামী বিরোধী প্লাটফর্ম এর গতিবিধি এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ কি হয়, সেটা বুঝেই আমরা আমাদের কৌশল ঠিক করবো।
দলটির মধ্যম সারির নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী যে দল বা শক্তিগুলো এখনও ঐক্যফ্রন্টের বাইরে আছে, তারাও ঐ ফ্রন্টে যুক্ত হতে পারে।সেখানে ক্ষমতাসীনদের নিজেদের জোট সম্প্রসারণের চেষ্টায় খুব একটা লাভ হবে না।
কারণ বামপন্থীরা কোনো জোটে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এর বাইরে আর কোন দলও নেই। ফলে আওয়ামী লীগ তাদের ১৪ দলীয় জোট এবং জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টির সাথেই আসন ভাগাভাগির কৌশল নিয়ে আলোচনা করছে।
সেই কৌশল নির্ধারণের বিষয়টিও নির্ভর করছে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার ওপর।