বি. চৌধুরীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হলেন শমসের মবিন

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে বিকল্পধারা বলেছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করা পর্যন্ত বিকল্পধারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে না।

রোববার বিকল্পথারার পুনর্গঠিত প্রথম প্রেসিডিয়াম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি. চৌধুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে দুপুর পৌনে একটায় বি. চৌধুরীর বারিধারার বাসভবন মায়া-বিতে প্রেসিডিয়ামের বৈঠক শুরু হয়ে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারেয়ার মিলন, মাহী বি. চৌধুরী, আবদুর রউফ মান্নান,ও অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন : বিকল্পধারায় যোগদানের কারণ বললেন শমসের মবিন চৌধুরী
বিবিসি ২৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৩১

ঠিক তিন বছর আগে বিএনপির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী যখন রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন, তখন অবাক হয়েছিলেন অনেকে।

কিন্তু তিন বছর পর শুক্রবার তিনি আরেকটি চমক সৃষ্টি করলেন বিকল্পধারায় যোগ দেয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে ফিরে এসে।

কেন তিনি তার দীর্ঘদিনের দল বিএনপি ছেড়ে বিকল্পধারায় যোগ দিলেন? বিবিসির এই প্রশ্নের উত্তরে শমসের মবিন চৌধুরি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরির সাথে তার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল এবং তার সাথে গত কিছুদিন ধরে কথাবার্তা চলছিল।

‘উনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। উনার অনেক কিছুর সাথে, নীতির সাথে, আদর্শের সাথে, কথা-বার্তার সাথে আমার মিলে যায়। তো মতের মিল থাকাতে, মনে হলো একটা চেষ্টা করে দেখি। সেই কথা ভেবেই আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়েছি।’

বিএনপির রাজনীতিতে শমসের মবিন চৌধুরীর উত্থানটা ছিল বেশ নাটকীয়। তিনি ছিলেন একজন কূটনীতিক এবং সেনা অফিসার। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর জোট সরকারের আমলে তিনি পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ওই একই সরকারের আমলে তাকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও নিয়োগ করা হয়। চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর তিনি দ্রুত দলে এক গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হন।

বিএনপির সাথে কি তার এমন কোন মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল যে তিনি দল বদল করলেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘মতবিরোধ কিছুটা তো অবশ্যই ছিল। যেমন সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রশ্নে। আমি আশা করেছিলাম যে বর্তমান বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে বিএনপি তার কাজে কর্মে এবং তার অবস্থানে আরেকটু অসাম্প্রদায়িকতার দিকে চলে আসবে। সেসব বিষয়ে আমি বাধা পাচ্ছিলাম। আমার মনের মতো হচ্ছিল না। দ্বিতীয়ত নাশকতার রাজনীতিতে আমি মোটেও বিশ্বাস করি না। সেটা সবধরণের নাশকতা। পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে মারা হোক, বা লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মারা হোক।’

তিনি যে প্রথমে বিএনপির রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন, এখন আবার বিকল্প ধারায় যোগ দিলেন, এরকম রাজনৈতিক অবস্থান নেয়ার পেছনে সরকারের কি কোন চাপ আছে?

এর উত্তরে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের চাপ থাকলে তো অনেক আগেই থাকতো। এটা নিতান্তই আমার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই আমি এই পদক্ষেপ নিয়েছি।’

তিনি কি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ভাবছেন?

শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘এটা তো সময় বলে দিতে পারবে। এই মূহুর্তে তো বলা মুশকিল নির্বাচনে আমি অংশ নিতে পারবো কিনা, অংশ নেব কিনা। আমি এখন একটা দলের সঙ্গে আছি। সেই দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঠিক করবো।’

২০১৩ সালে নির্বাচন প্রশ্নে যখন জাতিসংঘের উদ্যোগে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার আলোচনা চলছিল, সেই আলোচনায় বিএনপির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল শমসের মবিন চৌধুরীকে। তখন বিএনপি যে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তকে তিনি কিভাবে দেখেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিএনপি তখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেটিকে সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে হবে। তখন বিএনপি ভেবেছিল হয়তো নির্বাচনে না যাওয়াটা তাদের জন্য ভালো। তবে আমার মতে বিএনপি ঐ নির্বাচনে অংশ নিলে হয়তো তাদের ক্ষতি খুব একটা হতো না।’

 

মাহী বি. চৌধুরী সাংবাদিকেদের আরো জানান, গত ২৮ বছর ধরে এই জোট দুটি সাধারণ মানুষের আশা আকাংখার উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রত্যাশা পূরনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে বিকল্পধারা মনে করে একটি উদার গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাংখার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য আমাদের সেই রাজণতিকে সামনের দিকে নিয়ে আসতে হবে।

মাহী বলেন, প্রেসিডিয়াম বৈঠকে একটি গ্রহণযোগ্য ও অশংগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বিকল্পধারার পক্ষ থেকে সরকারের কাছে যে দাবিগুলো ছিল সে সব দাবির ব্যাপারে আমরা দ্বর্থহীনভাবে আবারো বলছি একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। রাজনৈতিক মামলায় যেসব রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, বিকল্পধারা একটি নির্বাচনমুখি দল তাই নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করবো। মাহী জানান, বৈঠকে ৩টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলনের নেতৃত্ব প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রউফ মান্নান ও দলের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসুফ, সহসভাপতি মাহবুব আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুককে নিয়ে রাজনৈতিক সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে যুক্তফ্রন্ট সম্প্রসারণের কাজ চূড়ান্ত করবে। বৈঠকে প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরীকে বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ.কিউ.এম বি চৌধুরীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। বৈঠকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কার্তিক ঠাকুরকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়।

Check Also

গাড়িচাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মাসুদের মৃত্যু ‘হত্যাকাণ্ড’

প্রাইভেটকার চাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বর্ণনা করে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ৬ দফা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।