- বিবিসি
বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন রোববার ভোর থেকে সারা দেশে শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির কর্মসূচি নিয়েছে।
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ নামের যে আইন সংসদে পাশ হয়েছে, শ্রমিক ফেডারেশন সেই আইনের বিভিন্ন ধারার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে পর-পর বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে।
তখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সরকার আইনটি প্রণয়ন করে।
কিন্তু এর বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কেন অবস্থান নিয়েছে?
শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বিবিসি বাংলাকে বলেন, সংসদে যে আইন পাশ করা হয়েছে সেটির অনেক ভালো দিক আছে, এবং কিছু বিষয় সংশোধনের প্রয়োজন আছে।
আইনের আটটি বিষয় সংশোধনের জন্য গত মাসের ২৭ তারিখে সরকারকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এরমধ্যে প্রথম বিষয়টি হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনার জামিন অযোগ্য করার বিষয়টি সংশোধন করা।
‘সড়ক দুর্ঘটনার মামলা যদি জামিন অযোগ্য হয়, তাহলে তো পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষে গাড়ি পরিচালনা করা সম্ভব না। আমরা এই আইন বাতিলের কথা বলি না, সংশোধনের কথা বলি,‘ বলেন ওসমান আলী।
‘শুধুমাত্র চালকের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে? রাস্তায় পথচারীর কারণে দুর্ঘটনা ঘটে, গাড়ির ব্রেক ফেল করলে দুর্ঘটনা ঘটে, রাস্তার পাশে হাট-বাজার বসলে দুর্ঘটনা ঘটে। আপনি তদন্ত করে যে দায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। এককভাবে তো শুধু পরিবহন শ্রমিকরা দায়ী না।’
বাংলাদেশে অনেক অপরাধ আছে যেগুলো জামিন অযোগ্য। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা আইনের ক্ষেত্রে এ বিধান থাকলে সমস্যা কোথায়?
এমন প্রশ্নে ওসমান আলী বলেন, ‘ আপনি ক্রিমিনাল ল’র (আইন) সড়ক দুর্ঘটনা মিলাবেন?’
চালকদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি জেলায় ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের জন্য সরকার আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে তারা যাত্রীদের জিম্মি করছেন না বলে মনে করেন ওসমান আলী।
তিনি বলেন তারা ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন’ করছেন এবং সরকার তাদের কোন নিয়োগপত্র দেয়নি।
তিনি বলেন, ধর্মঘটে যাবার আগে তারা সরকারকে স্মারকলিপি দিয়েছেন এবং আরো নান উপায়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
আরো পড়ুন : ‘ওরা এত সাহস পায় কিভাবে?’
২৮ অক্টোবর ২০১৮, ১০:০৩
মতিঝিল থেকে শ্যামলী শিশু হাসপাতালে সিএনজি অটোরিকসা পাঁচশ টাকা ভাড়া চায়, এটা কিভাবে সম্ভব? পরিবহন শ্রমিকরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবৈধ দাবি-দাওয়া আদায় করতে চায়। সরকারের কিছু মন্ত্রী ও নেতাদের প্রশ্রয়ে তারা যখন-তখন স্টাইক করবে? কিভাবে সম্ভব ? ওরা এত সাহস পায় কিভাবে?
এভাবেই নিজের ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মিলন মাহমুদ। তিনি তার শিশুকে নিয়ে শ্যামলী শিশু হাসপাতালে যাবেন, কিন্তু রাস্তায় বাস চলাচল না করায় বাধ্য হয়ে সিএনজি অটো রিকসায় যেতে হবে। কিন্তু মতিঝিল শাপলা চত্বর যেখানে স্বাভাবিক ভাড়া দুইশ টাকার মতো সেখানে সিএনজি ড্রাইভার ভাড়া চায় পাঁচশ টাকা।
রাস্তায় গণপরিবহন না পেয়ে যে যেভাবে পারছেন গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছেন। আর ধর্মঘটের সুযোগে রিকসা, সিএনজির ভাড়া কয়েকগুন বেশি চাইছেন ড্রাইভাররা। বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন নারী ও শিশুরা।
শনিবার খুলনা থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বেলাল আহমেদ ঢাকায় এসেছেন। তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপে বলছিলেন যে, খুলনাতে আরো একদিন অফিসের কাজ ছিলো, কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট ডাকার কারণে একদিন আগেই ঢাকায় চলে আসছেন। বাসের টিকিট না পেয়ে কয়েকজন মিলে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকায় ফিরেন। কুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা ও ধর্মঘট শুরু হওয়ায় বাসের টিকেট সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী শনিবার রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, কর্মরিবতির মধ্য দিয়ে প্রথমে তারা দাবি আদায়ের চেষ্টা করবেন। যদি তা না হয় পরে আরো কঠোর কর্মসূচি প্রদান করা হবে…। তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকেরা তাদের দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবে না।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস হওয়ায় রাস্তায় মানুষের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু বাস না পেয়ে সবাই হেটে কর্মস্থলে যাচ্ছেন।
এভাবে হঠাৎ পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে যাত্রীরা বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিআরটিসির কিছু বাস চললেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।