# সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবেনা-আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে —রব # জনগণের একটিই আওয়াজ ‘তুমি যাও-গদি ছাড়ো’ —মান্না # বর্তমান শাসনামল পাকিস্তানীদেরও হার মানিয়েছে —জাফরুল্লাহ

# গণরায় উপেক্ষিত হলে ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীন আ’লীগের বিচার হবে —ড. কামাল
# খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবো —মির্জা ফখরুল
# সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবেনা-আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে —রব
# জনগণের একটিই আওয়াজ ‘তুমি যাও-গদি ছাড়ো’ —মান্না
# বর্তমান শাসনামল পাকিস্তানীদেরও হার মানিয়েছে —জাফরুল্লাহ
# অবৈধ সরকারের কথায় কাজ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচার হবে —মোশাররফ

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল/ ই এম বেলাল/ নুরুল আমিন মিন্টু চট্টগ্রাম থেকে: অনতিবিলম্বে ৭ দফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল শনিবার বিকেলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নুর আহমেদ সড়কস্থ মহানগর বিএনপির কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিশাল জনসভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা এই আহ্বান জানান। বক্তারা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ৭ দফা দাবি না মেনে অথবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে আলাপ-আলোচনা ব্যতিরেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। তারা বলেন, দেশের জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের সবার একটাই কথা, আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে আর দেখতে চাইনা। আমরা আমাদের ভোটাধিকার চাই। সংবিধানে দেয়া অধিকার গুলো ফিরে পেতে চাই।
নুর আহমেদ সড়কে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে ৭ দফা দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সড়কের এক পাশে ফুটপাতে ছোট মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। যদিও আয়োজকরা বড় করে মঞ্চ করতে চেয়েছিলেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে জনসভায় আসতে থাকে নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ব্যাপক মানুষের সমাগম ঘটে। বেলা ২টায় যখন সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় তখন লাখো মানুষের ঢল নামে কাজীর দেউরীর এই এলাকায়। যদিও পুলিশ নেতাকর্মীদের নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া অন্য কোথাও দাড়াতে বা বসতে দেয়নি। সমাবেশ শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৫ টায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এটি দ্বিতীয় জনসভা এবং প্রথম জনসভাটি হয়েছিলো গত ২৪ অক্টোবর সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে।
জনসভার মঞ্চে লেখা ছিলো- ‘অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, মাদার অব ডেমোক্রেসি’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি’। মঞ্চের পাশে টানানো হয়েছেন খালেদা জিয়া ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় বাতিলের দাবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে আসা নেতা-কর্মীদের কারো কারো হাতে ছিল কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, ভারতের মেঘালয়ে বন্দী সালাহউদ্দিন আহমেদসহ স্থানীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। উল্লেখ্য, সালাহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি ভারতের আদালত কর্তৃক বেখসুর খালাস পেয়েছেন। দাবি আদায়ের জনসভা হলেও নেতা-কর্মীদের হাতে ধানের শীষের ছড়াও দেখা গেছে। সমাবেশ চলাকালে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে।
মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এসএম সাইফুল আলম ও বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদের পরিচালনায় জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ঐক্যফন্টের আহ্বায়ক ও দেশের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশেষ বক্তা ছিলেন জেএসডির সভাপতি ও স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনকারী আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণফেরাম সেক্রেটারি মোস্তফা মহসিন মন্টু, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, আমানউল্লাহ আমান, ফজলুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সুকোমল বড়ুয়া, গোলাম আকবর খন্দকার, এসএম ফজলুল হক, মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, আওম শফিকউল্লাহ, একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক, জানে আলম, জেএসডির তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, বেলাল আহমেদ, শফিক উদ্দিন স্বপন, গোলাম জিলানী, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, সোহরাব হোসেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, আবম মোস্তফা আমিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্য রাখেন, ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, সাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, শাহজাহান চৌধুরী, ওয়াদুদ ভুঁইয়া, লুৎফর রহমান কাজল, গাজী শাহজাহান জুয়েল, ম্যামা চিং, রেহানা আখতার রানু, নুরে আরা সাফা। বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা সাকিলা ফারজানা, কোরবান আলী, আবু সুফিয়ান, ভিপি নাজিম উদ্দিন, শাহ আলম প্রমুখ।
জনসভায় খেলাফত মজলিশের এম এ রকিব, মাওলানা মজিবুর রহমান, বিকল্পধারা একাংশের মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা শওকত আমীন, গণফোরামের মোশতাক আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের জাহিদুর রহমান, গণফোরামের রফিকুল ইসলাম পথিক, বিএনপির ফরহাদ হালিম ডোনার, মামুন আহমেদ, সানাউল্লাহ মিয়া, দীপেন দেওয়ান, নাজিমউদ্দিন আলম, শামীমুর রহমান শামীম, মীর হেলাল উদ্দিন, কাদের গনি চৌধুরী, রফিক শিকদার, আনোয়ার হোসেইন, নুরুল ইসলাম খান নাসিম, চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। কাছাকাছি প্রস্তুত ছিল জলকামানের গাড়িসহ প্রিজন ভ্যান। বিএনপিসহ আয়োজকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সমাবেশকে কেন্দ্র নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং বাড়িবাড়ি গিয়ে তল্লাশির নামে হয়রানি করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের শহরে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হয়নি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমাদের ৭ দফা দাবি অনতিবিলম্বে মেনে নিতে হবে। নইলে এজন্য ভবিষ্যতে বর্তমান সরকারের বিচার হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। দেশের বিশিষ্ট এই আইনজীবি বলেন, আজকে জনগণ ৭ দফার পক্ষে হাত উঠিয়ে গণরায় দিয়েছে। সিলেটেও গণরায় দিয়েছে। সরকারকে বলব, সময় থাকতে ৭ দফা দাবি মেনে নিন। অন্যথায় এটা অমান্য করার জন্য বিচার হবে। জনগণের সিদ্ধান্তকে অমান্য করলে, উপেক্ষা করলে যে শাস্তি আপনারা পাবেন সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না।
ড. কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, পদে পদে সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ২০১৪ তে বলা হয়েছিলো যে, সাময়িকভাবে একটা নির্বাচন হোক, অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য। এরপরে আরেকটা নির্বাচন হবে। আমি তখন আদালতে ছিলাম, আদালত আমাকে ডেকেছিলেন, ওরা যখন বলছে এটা করে দেবো। আমরা এই নিয়ে তোলপাড় করতে চাই না। ২০১৫ তে এই নির্বাচন করার কথা ছিলো। সেটা করা হয়নি। দেখছি যে, পাঁচ বছর কাটিয়ে দেয়া হলো। এই কাজগুলো সংবিধানের ঘোরতর অপরাধ। এই অপরাধের জন্য জবাবদিহি আদায় করতে হবে। আপনারা(জনগণ) কী এই জবাবদিহি আদায় করবেন। ইনশাল্লাহ।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অতীতে যখন অপরাধ করে, আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে অপরাধ করে তখন বলে পার তো হয়ে গেছি কে আমাদের বিচার করে। ইনশাল্লাহ এবার আমাদের ৭ দফা দাবি না মানলে এটা অমান্য করার জন্য বিচার হবে। ২০১৪ সাল থেকে সংবিধান লঙ্ঘন করার জন্য যে জবাবদিহিতা সেটাও জনগণ আপনাদের কাছ থেকে আদায় করে ছাড়বে। কারাবন্দী খালেদা জিয়ার অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান ড. কামাল।
দেশের সংবিধানের অন্যতম এ প্রণেতা বলেন, এই দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। আর শাসকরা হচ্ছে সেবক। কিন্তু এখন সেবকরাই মালিক সেজে বসে আছে। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। আমরা জনগণের হাতেই তাদের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, সমাবেশ করার অধিকার, কথা বলার অধিকার, এগুলো আমাকে সংবিধান দিয়েছে। কিন্তু এই সরকার আমাদের সেটা করতে দিচ্ছেনা। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সংবিধান সম্মত অধিকার চাই। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এটা আমাদের অধিকার। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলে বিজয় জনগণেরই হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের নেতারা ৭ দফা দাবি দিয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যখন মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিয়ে গেলেন তখন তিনি বলেছিলেন আমি আপনাদের মাঝে নাও থাকতে পারি আমি নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি- আপনারা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে জনগনকে সঙ্গে নিয়ে এই স্বৈরাচারকে পরাজিত করবেন। এই ৭ দফা দাবি আদায় করেই তবেই আমরা ঘরে ফিরবো, ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে আমরা ঘরে ফিরবো।
বিএনপিসহ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দায়েরের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এমন এমন মামলা দিচ্ছে যাদের চিনে না জানে না। যারা নেতা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছেন। তারেক সাহেব জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশে ফিরে আসবেন। আমি পরিষ্কার করে বলতে এসব করে লাভ হবে না। জনগণকে জেগে উঠছে। সবাই এগিয়ে আসুন, আন্দোলনের দিকে আমরা এগিয়ে যাই। ইনশাল্লাহ বিজয় আমাদের হবেই হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণ এখন আর অপেক্ষা করতে চান না। তারা এখন সমস্বরে বলছেন, আমরা আর ভাঙ্গা নৌকায় উঠতে চাইনা। তিনি বলেন, মানুষ জেগে উঠেছে। আমরা অন্যায়ের কাছে পরাজিত হবোনা।
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, আমাদের ৭ দফা মানা ছাড়া, আমাদের সাথে আলাপ করা ছাড়া তফসিল যদি ঘোষণার করেন তাহলে বুঝব যে, আপনি ও আপনার সরকার নির্বাচন বানচাল করতে চান। আমরা নির্বাচন করতে চাই, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই। সরকারকে বলব, নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করবেন না। তফসিল ঘোষণা আলোচনা না করে করলে, দেশের ১৬ কোটি মানুষকে যদি সংকটের ভেতরে ঠেলে দেন এর সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদের বহন করতে হবে।
নেতা-কর্মীদের সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের হুঁশিয়ার থাকতে হবে। উসকানি দেবে, ভেস্কি দেবে। সর্তক থাকবেন। শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের এগুতে হবে। আমরা শান্তি চাই, আমরা ন্যায় বিচার চাই, গুম-খুন মিথ্যা ও গায়েবী মামলা প্রত্যাহার চাই। সরকার বলব, ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। ৭ দফা দাবি মেনে নিন। নইলে আপনাদের পালবার পথ থাকবে না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ওরা (সরকার) বলে তোরা যতই দাবি দিস ৭ দফা ১১ দফা- আমরা মানবো না। আর আমরা চট্টগ্রামে বলতে এসেছি দাবি মানতে হবে। ওরা বলছে আমাদের অধীনেই নির্বাচন হবে, আমরা সরকারে থাকবো, আমাদের কেউ পরিবর্তন করতে পারবো না। আর আমরা বলতে এসেছি, তোমাদের অধীনে নির্বাচন হবে না। আমরা সমস্ত জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে তোমাদেরকে গদি থেকে নামিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। এই আন্দোলনের আহ্বান জানাতে আমরা এখানে এসেছি।
ঐক্যফ্রন্টের একটাই শ্লোগান হচ্ছে- তুমি যাও, গদি ছাড়ো, ভোট দাও যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করো। না যদি পারো তাহলে কিভাবে করাতে হয়, সেটা জানি আমরা। সেই পথে যাবো।
মান্না বলেন, এই সরকার এতটাই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে যে, ডা. জাফরুল্লাহকে না পেয়ে তার হাসপাতালে ভাংচুর চালিয়েছে। সামান্য বিষয়ে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে। বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রেখেছে। তার অবস্থা এখন যে, তিনি ঠিক মতো হাঁটতে পারছেন না। এমনকি কারো সাথে দেখা করার শক্তিটুকুও তার নেই। তাকে চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছেনা।
সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, আমরা যাতে সমাবেশ করতে না পারি সেজন্য এমন কোনো হীন কাজ নেই যে তারা করেনি। সরকারের প্রশাসনসহ পুলিশ বাহিনী যা করেছে তা দেশবাসী দেখছে। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের ৭ দফা দাবি মানতে হবে। না মেনে কোনো উপায় নেই। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবেনা। যদি আমাদের সাথে আলোচনা না করেন তফসিল ঘোষণা করেন তাহলে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। কিভাবে আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে সেটি আমাদের জানা আছে।
মান্না বলেন, দেশের সব দল ও মতের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। সবার একটাই আওয়াজ ‘তুমি যাও-গদি ছাড়ো’। যদি গদি না ছাড়ো তাহলে কিভাবে গদি থেকে নামাতে হয় সেটির দেশের জনগণ দেখিয়ে দিবে। তিনি বলেন, আমরা একদিনের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছিনা। যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেই গণতন্ত্রকে সর্বস্তরে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, এখানে আমরা যারা একত্রিত হয়েছি আমাদের সবার চিন্তা এক নয়। কিন্তু আমাদের দাবি একটাই। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটানোই আমাদের প্রথম কাজ। এই সরকারের আর বেশিদিন বাকি নেই।
নেতাকর্মীদের প্রতি মান্না বলেন, আন্দোলন যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে করছি নির্বাচনও আমরা একসাথে করবো। ২০১৪ সালে আপনারা নির্বাচন বয়কট করে ঘরে ছিলেন। এবার আমরা যদি নির্বাচনে যাই তাহলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসবেন। কেন্দ্র পাহারা দিবেন। যাতে কেউ ভোটা ডাকাতি করতে না পারে। যারা ভোট ডাকাতি করতে যাবে তাদের প্রতিহত করবেন। বিজয় আমাদের হবেই।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই চট্টগ্রাম থেকে আমরা আন্দোলনের সূচনা করতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে এখান থেকে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নাই। এই স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট সরকার আন্দোলন ছাড়া আমাদের দাবি মানবে না। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেত্রীকে মুক্তি করে তাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা নির্বাচনে যাবো। এদেশে জনগণের সরকার ইনশাল্লাহ প্রতিষ্ঠা করবো। জনসভায় নেতা-কর্মীদের সমাগম কমাতে স্থানীয় জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করে তাদেরকে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারি হিসেবে ‘নিরপেক্ষ’ ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকার জাতীয় ঐক্য ও জনগনকে ভয় পায়। আজকে যে ক্রান্তিকাল তা থেকে উত্তরনের নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক করতে হলে লেভেল প্লায়িং ফিল্ড করতে হবে। বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্ররা বলেছেন, বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপিসহ বিরোধী দল ছাড়া অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন হতে পারে না। তাই আমরা চট্টগ্রাম থেকে যে মুক্তিযুদ্ধে শুরু হয়েছে, এই আন্দোলন শুরু করতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, যেকোনো স্বৈরাচারি সরকারকে দমন করার জন্য, অপসারণ করার জন্য, পরিবর্তন আনার জন্য একমাত্র বিকল্প হলো জাতীয় ঐক্য। আমরা বিশ্বাস করি, এই জাতীয় ঐক্যই বর্তমান স্বৈরাচারি সরকারের পতন আনবে। এই ঐক্যের মাধ্যমে দেশে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। এই ঐক্যের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করবো সংলাপে বসার জন্যে এবং সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার করে তার অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা নাহলে দেশে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, আমাদের দাবি একটাই। সেটি হচ্ছে নিদলীয় সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু এটা শুনেই সরকার ভয় পায়। কারণ তারা জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তিনি বলেন, এই সরকার ২০১৪ সালের একতরফার নির্বাচনের পর বলেছিল সেটি ছিল নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু গত ৫ বছরে তারা তাদের কথা রাখেনি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জাতিকে আর সংকটের দিকে ঠেলে দিবেন না। জনগণকে তাদেও মত প্রকাশের সুযোগ করে দিন। তা না হলে আপনাদের জনগণ ছাড় দিবেনা।
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের শাসন পাকিস্তনের বর্বর শাসনকেও হার মানায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি নাকি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চান। আসলে নির্বাচন প্রশ্নে তিনি নিজের ছায়াকেও ভয় পান। সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে তাকে নির্যাতনের পথ থেকে সরে আসতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় আসলে জনগণকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে। কাউকে বেগম জিয়ার ন্যায় ভাগ্যবরণ করতে হবেনা। তিনি বলেন, আমরা কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা আনার জন্য আন্দোলন করছিনা। আমাদের আন্দোলন হচ্ছে সংবিধান অনুযায়ী সবার অধিকারগুলোর বাস্তবায়ন। তিনি বলেন, বিজয় অর্জন করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মাত্র ১০ দিনের আন্দোলন হবে। দেখেন দেশে কি হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার এতটাই ভীত যে, তারা প্রতিনিয়ত বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেই চলেছে। গত দেড়মাসে আমাদের বিরুদ্ধে ৫ হাজারের অধিক মামলা করা হয়েছে। যার আসামী লক্ষাধিক। তিনি বলেন, এই সরকার জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলছে। অথচ এরাই একসাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। তারা একসাথে দাবি করেছিল ‘এই মুহূর্তে¡ দরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। তিনি বলেন, এই সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তারা মূলত বাকশাল কায়েম করেছে। আমরা তাদের বলতে চাই, এত লুকোনোর দরকার নেই। আপনারা রাজতন্ত্র চালু করে দিন। তাহলে কেউই কিছু বলবেনা।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দেশের আজ গণতন্ত্রের লেশমাত্র বাকি নেই। স্বাধীনতা পরবর্তীকালেও এই আওয়ামী লীগ দেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। তিনি বলেন, দেশকে এই ক্রান্তিকাল থেকে উত্তোরণের জণ্যই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কাজ করছে। তিনি বলেন, ৭দফা দাবি আদায়ে আমরা রাজপথে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবোনা। এসময় তিনি দেশের এ দুরাবস্থার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে জবাব দিহি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এই সরকার হচ্ছে ভোট ডাকাত। এই চট্টগ্রাম থেকেই স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন শুরু হলো। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ কখনোই হারতে শিখেনি। তারা ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারকে বিদায় করেই ঘরে ফিরে যাবে। সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, আজকের এই আন্দোলন কোনো দলের নয়। জাতীয় স্বার্থেই আমাদের এ আন্দোলন। তিনি বলেন, আন্দোলন দমনে আ,লীগ মামলা দিচ্ছে, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। কিন্তু আমাদেরকে তাদের এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।
ঢাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মুহাম্মদ মনসুর বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা আমাদেরকে সমাবেশ করতে দিচ্ছেনা। আমাদেরকে লালদীঘির ময়দান দেয়া হয়নি। আমি সরকারকে বলতে চাই, দেখে যান, এখানে লাখা মানুষের ঢল নেমেছে। বাধা দিয়ে, মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে জনবিষ্ফোরণ ঠেকাতে পারেন নি। সাবেক এই আ,লীগের নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন চট্টগ্রামে আসতেন তখন ফজলুল কাদের চৌধুরীর বাসায় থাকতেন। তার বাসায় খাওয়া দাওয়া করতেন। এই চট্টগ্রাম থেকেই জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। যারা স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করছে তাদের বলতে চাই, আমাদের মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানই। তিনি বলেন, আমাদেও এই ঐক্য ক্ষমতার জন্য নয়। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। তিনি বলেন, আমাদেরকে বিজয় অর্জন করতে হলে ঘরে ঘরে আমাদের ৭ দফা দাবি পৌঁছে দিতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি লুটেরার দল। এই দলকে আমরা মানিনা।
গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশের গণতন্ত্র আজ কার্যত নির্বাসনে। কোথাও বিরোধীরা সমাবেশ করতে পারছেনা। দেশে কারো বাক স্বাধীনতা নেই। দেশে এখন চলছে হাসিনা মার্কা গণতন্ত্র। এভাবে দেশ চলতে পারেনা। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই এদের পতন ঘটাতে হবে।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, এই সরকারের নেতাকর্মীরা ৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। শেয়ারবাজার থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। তিনি বলেন, এই লুটপাটকারীরা দেশ থেকে পালাতে চাইছে। এদের পালাতে দেয়া যাবেনা। তিনি বলেন, এই সরকার বলে, দেশের ৭০ শতাংশ জনগণ তাদের পক্ষে। আমি বলতে চাই তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে এতো ভয় কেন?
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মহাসচিব আ ফ ম মোস্তফা আমিন বলেন, এ পর্যন্ত ১৭ বার দেশের সংবিধানকে সংশোধন করা হয়েছে। তাহলে এখন কেন করা যাবেনা? তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা মেনে নিতে হবে। সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের জেগে উঠেছে। এখান থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান। আজ আবারো দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র-ভোটাধিকার রক্ষায় এই চট্টগ্রাম থেকে সরকারের পতনের সূচনা হলো। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পতন অনিবার্য।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।