* দেশ এখন ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে- ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ
* দেশে কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে- অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী
* জাতীয় নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য ৯০ দিন সময় প্রয়োজন-আলী ঈমাম মজুমদার
* আসন্ন সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো অবস্থা দেখছি না-এম হাফিজ উদ্দিন খান
* গত ১০ বছর ধরে তরুণরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত-আসিফ নজরুল
স্টাফ রিপোর্টার : সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে ভোটবিহীন যৌবন যাবে জাতির। দেশের মানুষ গত ১০ বছর ভোটাধিকার বঞ্চিত। এর মধ্যে নতুন ও তরুণ ভোটার রয়েছেন অনেক। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোট প্রদানের নিশ্চয়তা না থাকলে ভোট ছাড়াই জাতির একটি যৌবনকাল চলে যাবে। তাই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শক্ত অবস্থান নিয়ে সঠিক সময়ে সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। সরকারকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্য ঢাকা ফোরাম আয়োজিত ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম, এফ এ শামিম আহমেদ, ইখতেখার করিম, মাসুদ আজিজ, সংসদ সদস্য ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশ এখন ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশ কোন সমাজের দিকে যাচ্ছে বলা কঠিন। দেশে টেকশই ও সমতা ভিত্তিক অর্থনীতি গড়তে একটি নির্বাচন ও গণতন্ত্রের প্রয়োজন। আগে নির্বাচন মানে ছিল উৎসব, আজ নির্বাচন মানেই ভীতি। কেউ ভোট দিতে পারেন, কেউ ভোটের সুযোগ হারান।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বুড়ো হয়ে গেছি। এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময়। কয়দিন আগে কোটা আন্দোলনে যেসব ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে এসেছিলো তাদের মাধ্যমে আন্দোলন তীব্র করা সম্ভব।’ নবীনরা রাজপথে আসলে প্রবীণরা পাশে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দিলারা চৌধুরী কোটা আন্দোলনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা প্রথম থেকে কোটা আন্দোলনের সঙ্গে ছিলো বলে আন্দোলন তীব্র ও সফলের দিকে এগোচ্ছিল। তরুণরা চাইলে এই দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারতো। একটি সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচনের পেছনেও ভূমিকা রাখতে পারতো। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা নেই বলেই সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, দেশে কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। নাসিক মেয়র আইভি সম্পর্কে শামীম ওসমান খারাপ মন্তব্য করলে তখন কিছু হয় না। কিন্তু মইনুল একটা কথা বললো অথচ তার জামিনযোগ্য মামলায় জামিন দেয়া হচ্ছে না। জাফরুল্লাহকে মাছ চুরি, খাবার চুরির মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এর কারণ তারা গণতন্ত্র উদ্ধারে কাজ করছেন।
গোলটেবিল বৈঠকের সভাপতি ম. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যুক্তি হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেওয়া মানে ‘তথা কথিত’ ইসলামি সন্ত্রাসকে উসকে দেয়া। যা আন্তর্জাতিক বিশ্ব অনেকটা মেনে নিয়েছিলো। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রতিক সফরে বলেছেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। বাংলাদেশের প্রাক্তন ভারতীয় হাই কমিশনারও একাধিকবার একই মনোভাব ব্যক্ত করেন বলেও জানান সিরাজুল ইসলাম।
বক্তব্যে সাবেক সচিব আলী ঈমাম মজুমদার বলেন, দলীয় নেত্রীকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে বহাল রাখতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সরকারি দল নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় এরই মধ্যে পুলিশ ও জনপ্রশাসন বিভাগের রাজনীতিকীকরণ সম্পন্ন করেছে।
তারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য ৯০ দিন সময় প্রয়োজন। তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে সময় আছে মাত্র ৪৫ দিন। ইসি চাইলে এ সময়ের মধ্যেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে। এ জন্য ইসির পাশাপাশি সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা ও সংশয় রয়েছে। আর ইসি এটি করতে ব্যর্থ হলে জাতির একটি ভোটবিহীন যৌবনকাল চলে যাবে। কারণ গত ১০ বছর যাবত তরুণরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত আছেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে আসন্ন সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো অবস্থা দেখছি না। যদিও বিভিন্ন ঐক্য তৈরি হয়েছে। এতে একটা ভালো বিরোধী পক্ষ তৈরি হবে। যা এতদিন ছিল না। তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এখনও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। এজন্য ইসির শক্ত অবস্থান দরকার। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কমেনি। তাহলে এ উন্নতির মানে কি? তাই দেশের সমতার ভিত্তিতে উন্নয়ন করতে হবে। এজন্য সুশাসন প্রয়োজন। আর সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যার জন্য দরকার সবার অংশ গ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, গত ১০ বছর ধরে তরুণরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আসন্ন নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার না থাকলে ভোট ছাড়া জাতির একটি যৌবনকাল চলে যাবে। তিনি বলেন, এখন অনেকেরই ফোনালাপ ফাঁস হচ্ছে। যখন স্বর্ণ বালা হয়ে যায়, রিজার্ভ চুরি হয়ে যায় তখনও মন্ত্রী-এমপিরা কথা বলেন। কিন্তু তাদের ফোনালাপ ফাঁস হয় না। নির্বাচনের আগেই গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধীদের ব্যস্ত রাখা হচ্ছে। খেলার আগেই প্রাকটিস বন্ধ করা হচ্ছে, রেফারি নিজের মতো নেয়া হচ্ছে। এতেই বোঝা যায় খেলা কেমন হবে।