ঢাকা: সংসদ ভেঙে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া ৭ দফা নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে সরকার। সংলাপের আহ্বান জানিয়ে ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া চিঠিতে সাড়া দিয়ে সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই ঘোষণা দেন। সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণার পর পরই বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেয়ার দীর্ঘ একযুগ পর সংলাপের এই ঘোষণাকে একটি বড় ধরনের সুখবর হিসেবেই দেখছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। অনেক নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। অত্যাচার, নির্যাতন, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। বিএনপির আন্দোলনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এই প্রথম কোনো দাবি মেনে নিতে সম্মত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এটিকে দীর্ঘ আন্দোলনে বিজয়ের সূচনা হিসেবেই দেখছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। কারণ এতো দিন ধরে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপের কথা নাকচ করেই আসছিলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু রোববার ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই সোমবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংলাপে সম্মত হওয়ার ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কাদের বলেন, আমি এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সমগ্র দেশবাসীর জন্য প্লিজেন্ট সারপ্রাইজ দেব, যা সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তির সুবাতাস বয়ে দেবে। তিনি বলেন, আজকে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নেত্রী আমাদের নিয়ে একটি অনির্ধারিত বৈঠক করেন। উপস্থিত দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সবার মতামত জানতে চান। অনির্ধারিত এ আলোচনায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আমাদের নেত্রী ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে রাজি এবং তাদের সঙ্গে সংলাপে বসব।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকাল রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ তা গ্রহণ করেছিলেন। চিঠিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা সংলাপ করতে চেয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলের পক্ষ থেকে সংলাপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কারও চাপের মুখে কিংবা নতিস্বীকার করে নয়, আমাদের পক্ষ থেকে কাউকে ডাকিনি। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সংলাপ করতে চান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপে রাজি হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সংলাপে নেতৃত্ব দেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। খুব শিগগিরই আমরা সময়, স্থান ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো তাদের জানিয়ে দেব। এটা অনতিবিলম্বে জানিয়ে দেব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংলাপ তফসিলের আগেই হবে।
শেখ হাসিনার দরজা কারও জন্য বন্ধ নয় মন্তব্য করে কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুর কন্যার দরজা কারও জন্য বন্ধ থাকে না। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, আমরা সংলাপে বসতে রাজি। আমাদের নেত্রী ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে রাজি এবং তাদের সঙ্গে সংলাপে বসব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের আগেই হবে সংলাপ।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার দাবিগুলো মানা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়, আলোচনা যখন হবে, আলোচনার রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করুন।