ক্রাইমবার্তা রিপোট:সাতক্ষীরা:পেয় পানির সংকট ও মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ঝুকির মধ্যে পড়েছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দেড় লক্ষ মানুষ মানুষ। আর্সেনিক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ বছরে একই পরিবারের চারজনসহ অতন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় হতাশ হয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। তবে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন এই অঞ্চলের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক থাকায় প্রতিটি ইউনিয়ানে পুকুর খনন করে সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হবে।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কৃষ্ণকাটি গ্রামের জালাল মোড়ল আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্যান্সার ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। তাকে মাঝেমধ্যে কেমো দিতে হয়। তার পরিবারের ৪ সদস্যসহ গত ১৫ বছরে অনন্ত ১৩ জন আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। অন্য সদস্যরা ও আর্সেনিকে আক্রান্ত। ওই গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ এখনও ভয়াবহ আর্সেনিকে ভুগছেন।
তালা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকায় টিউবওয়েলের পানিতে রয়েছে ভয়াবহ আর্সেনিক। আর সুপেয় পানির সংকটের কারনে আর্সেনিক ঝুকির মধ্যে রয়েছেন দেড় লক্ষ মানুষ। তবে জনস্বাস্থ্য বিভাগ দীর্ঘদিন টিউবওয়েলে পানি পরীক্ষা নিরেক্ষা না করায় আর্সেনিক যুক্ত পানি খাওয়া ও থালা বাসন পরিষ্কার করছে ঝুকি নিয়ে।
তবে আলোচিত এমন ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের কোন কর্মকর্তা ঐ এলাকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পরিদর্শন করেনি। মাঝে মধ্যে এনজিও কর্মীরা এলাকা পরিদর্শন ও জরিপ করলেও কোন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেনি। এই উপজেলায় বেশি ঝুকিতে রয়েছেন তালা সদর, খেশরা, খলিশখালী ও জালালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দরা।
নিহতদের পরিবারের সদস্য জালাল মোড়ল জানান, বর্তমানে তিনি আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্যান্সার ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। তাকে মাঝেমধ্যে কেমো দিতে হয়। তার পরিবারের সদস্য ফুফু শরভানু বিবি, পিতা আনসার মোড়ল, বড় ভাই আলাউদ্দীন মোড়ল, ভাই সালাউদ্দীন মোড়ল আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেছেন। তার পরিবারের আরও সদস্য এই মরনব্যাধিতে আক্রন্ত হয়েছে।
পার্শবর্তী পরিবারের সদস্য সাজেদা বেগম জানান, সে নিজেই আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার বিবাহের পর তার স্বামীর পরিবার যখন জানতে পারে সে আর্সেনিক আক্রান্ত একজন রোগী তখন তাকে বাপের বাড়ীতে রেখে যায়। তিনি আরও জানান,আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তারা হলো-আলাউদ্দিন,সালউদ্দিন,মুনছুর রহমান মোড়ল,শাহানারা বেগম, শরুপজান বিবি সোনাবান বিবি,সোহরাব মোড়ল, ইয়াছিন মোড়ল, সরবানু বিবি, ছবেদ মোড়ল, ফকির মোড়ল ও জবেদ আলী মোড়লসহ অন্যরা মৃত্যু বরন করেছেন। কৃষ্ণকাটী গ্রামে প্রায় ৩ শতাধিক লোক ভয়াবহ আর্সেনিক ঝুকিতে ভুগছে। তাদের বাড়ীতে কোন আত্মীয়-স্বজনও পর্যন্ত আসেনা এবং তারা কারো বাড়ীতে যেতে পারে না।
তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম,মফিদুল হক লিটু জানান, কৃষ্ণকাটি গ্রামে একই পরিবারের চারজনসহ অনেকেই মারা গেছে আর্সেনিক রোগে। তবে আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি হলেও আমার পরিষদ থেকে তাদের কিছুই করতে পারেনি তবে টিউবওয়েল গুলোতে পরীক্ষা করার উদ্ধোগ নিয়েছি।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্যা কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক রাজীব সরদার জানান,আমরা অনেকের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি আর্সেনিক রোগ থেকে রক্ষা পেতে পরামর্শও দিয়েছি। তবে আর্সেনিক একবার কোন মানুষের শরীরে হলে আস্ত আস্ত সারা শরীরে চকচক দাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভাল হওয়ার রক্ষন খুবই কম থাকে।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আমিনুল ইসলাম বলেন,সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলা বাদে আর সব উপজেলায় আর্সেনিকের মাত্রা অতিরিক্ত থাকায় সুপেয় পানির সংকট দ্রুত সমাধানে জেলার প্রতিটি ইউনিয়ানে পুকুর খনন করে সুপেয় পানির সংকট নিশ্চিত করা হবে।
আর্সেনিক রোগে প্রথম চর্ম রোগ পরে আস্তে আস্তে বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এই মরনব্যাধী আর্সেনিক ভাইরাস প্রতিহত করতে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন না করলে ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারনা করছে স্থানীয়রা।
##