কামাল-ফখরুলের নেতৃত্বে সংলাপে যাবেন ঐক্যফ্রন্টের ১৬ নেতা

ক্রাইমবার্তা রিপোট :আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি অংশ নেবেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে বাকি ১৪ জন কারা তাদের নাম জানাতে কৌশলগত কারণে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি।

আ স ম আব্দুর রব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণপত্র আমরা গ্রহণ করেছি। আমরা সব বিষয়েই কথা বলব। সংবিধান তো জনগণের জন্য। তাই জনগণের ভোটাধিকার যাতে নিশ্চিত হয়, সেটাই আমাদের দাবি।

এর আগে বিকাল সোয়া ৪টায় ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে এই বৈঠক শুরু হয়।

ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক ছাত্রনেতা সুলতান মুহাম্মদ মনসুর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।

এর আগে, গত ২৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সাত দফা দাবি এবং ১১ দফা লক্ষ্য সংবলিত চিঠি দেয় ঐক্যফ্রন্ট। চিঠিটি গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দুই নেতা গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ চিঠিটি পৌঁছে দেন।

এরপর সংলাপে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

চিঠিটি নিয়ে ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় যান আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ।

চিঠিতে সংলাপের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে দাওয়াত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

—–0——-

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  গণভবনে আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপের জন্য ১৬ জন প্রতিনিধির একটি দল নির্ধারণ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে আয়োজিত ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে নামগুলো ঠিক করা হয়।

এ প্রসঙ্গে আ স ম আবদুর রব জানান, ‘ড. কামাল ছাড়া ১৫ জনের একটি প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেবে।’

গণভবনের সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে দলনেতা হিসেবে থাকবেন ড. কামাল হোসেন। বিএনপি থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস। নাগরিক ঐক্য থেকে থাকবেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও এসএম আকরাম। গণফোরাম থেকে মোস্তফা মহসিন মন্টু ও সুব্রত চৌধুরী। জেএসডি থেকে আ স ম আব্দুর রব, আব্দুল মালেক রতন, তানিয়া রব। ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, আ ব ম মোস্তফা আমিন ও স্বতন্ত্র হিসেবে থাকবেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সংলাপের প্রেক্ষাপট
গত বেশ কয়েকদিন ধরেই জাতীয় রাজনীতিতে সংলাপের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গত রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি দেয়া হয়। পরদিন সোমবার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রীদের এক অনির্ধারিত বৈঠক থেকে সেই সংলাপের আহ্বানে সাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

ওই দিন বিকেলে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে তাদের সংলাপের আহবানে সাড়া দেয়ার
কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের জানান, তফসিলের আগেই ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপে রাজি আছে সরকার। সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজ আমি আপনাদের ও পুরো জাতিকে সারপ্রাইজ দেবো। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিক্রমে একটি সুখবর জানাবো। এ খবরে রাজনীতির মাঠে শান্তির বাতাস বইবে বলে মনে করি।’

পরে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন একটি চিঠি দিয়েছেন। আজ মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী ও সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেন। অনির্ধারিত এ বৈঠকে আলোচনা শেষে সর্বসম্মতি সিদ্ধান্ত হয়েছে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংলাপে বসবে। কারণ শেখ হাসিনার দরজা কারও জন্য বন্ধ থাকে না।’

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এত দ্রুত সরকারের সাড়া পেয়ে বিস্মিত হলেও তারা বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। তারা সরকারের এই সংলাপের আগ্রহকে স্বাগত জানান। সোমবারই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ফোন করেন ওবায়দুল কাদের। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে ফোন করে তিনি সংলাপের আমন্ত্রণ জানান। সংলাপের আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের জানতে চান ঐক্যফ্রন্টের কতজন সদস্য সংলাপে অংশ নেবে।

ওই দিন রাত ৮টার দিকে এই দু’নেতার মধ্যে ফোনে কথা হয়। এ সময় ঐক্যফ্রন্টকে গণভবনে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান ওবায়দুল কাদের। জবাবে মহসিন মন্টু তার জোটের নেতাদের সাথে আলোচনা করে সময় দিবেন বলে জানান। পরদিন মঙ্গলবার সংলাপের বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রী।  প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পৌঁছে দিতে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় যান আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। ড. কামাল তার চিঠি গ্রহণ করে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন। এ সময় সেখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিঠির শুরুতেই ড. কামাল হোসেনকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি লিখেন, ‘জনাব, সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আপনার ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের পত্রের জন্য ধন্যবাদ। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত। তাই, আলোচনার জন্য আপনি যে সময় চেয়েছেন, সে পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ০১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ সন্ধ্যা ০৭-০০ টায়, আপনাদের আমি গণভবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ কারা এ অংশ নেবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার বিকেলে আবারো বৈঠকে বসেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। মতিঝিলে গণফোরাম অফিসে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক ছাত্রনেতা সুলতান মুহাম্মদ মনসুর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।

বৈঠক শেষে আ স ম আব্দুর রব জানান, তারা সংলাপে অংশ নেয়ার জন্য ১৬ সদস্যের একেটি প্রতিনিধি দলের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন।

 

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।