ক্রাইমবার্তা রিপোট: প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতাদের সাথে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সংলাপে উপস্থিত নেতাদের জন্য ২ মিনিট করে সময় বরাদ্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের বক্তব্য দীর্ঘায়িত করায় ডিনারের পর আবার সংলাপে বসেছেন নেতারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া সংলাপ রাত সোয়া ৯টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চলছিল। সংলাপে ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের ২০ জন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের ২৩ নেতা অংশ নিয়েছেন।
গণভবন সূত্র বলছে, সংলাপে অংশ নেওয়া উভয়পক্ষের নেতারা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরে দুই মিনিট করে বক্তব্য রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী বক্তব্য এগুলে সবমিলিয়ে রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে সংলাপের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার কথা । তবে সূত্র মতে, কারো কারো বক্তব্য নির্ধারিত সময়ের চেয়েও বেশি সময় ধরে হচ্ছে। এতে সংলাপ শেষ হতে রাত ১১টা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এদিকে সংলাপে আমন্ত্রিতদের জন্য রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। ১৭ পদের খাবারে দুই পক্ষের নেতাদের আপ্যায়ণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খাবারের তালিকায় অ্যাপেটাইজার হিসেবে ছিলো ফ্রেশ জুস (মাল্টা, আনারস, জলপাই ও তরমুজ) ও সুইট অ্যান্ড সাওয়ার কর্ন স্যুপ (চিংড়ি বাদ)। এর সঙ্গে থাকছে মিক্সড নুডুলস (চিংড়ি বাদ), মিক্সড সবজি, বিফ শিক কাবাব, চিকেন ইরানি কাবাব।
মূল খাবারে ছিলো মোরগ পোলাও, বাটার নান আর সাদা ভাত। তার সঙ্গে কারি হিসেবে থাকছে মাটন রেজালা, চিতল মাছের কোপ্তা কারি ও রুই মাছের দোপেঁয়াজা। সঙ্গে মিক্সড সালাদ।
আর শেষ পাতে ডেজার্ট হিসেবে টক-মিষ্টি দুই ধরনের দই আর চিজ কেক। আগে থেকেই জানা যাচ্ছিলো চিজ কেক ড. কামাল হোসেনের পছন্দ। আর সেটা মাথায় রেখেই এই খাবারটি মেন্যুতে সংযুক্ত করা হয়।
পানীয় হিসেবে ছিলো কোক ক্যান ও চা বা কফি। গণভবনের ভেতরকার সূত্র জানায়, ডিনার শেষে আবারও সংলাপে বসেন নেতারা।
গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিলে সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর পরদিনই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, আওয়ামী লীগ সংলাপে রাজি। পরে ৩০ অক্টোবর সকালে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয় ঐক্যফ্রন্টের কাছে। তাতে বলা হয়, ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে সংলাপ।
এরপরই মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের কথা জানানো হয় আওয়ামী লীগকে।
পরে ক্ষমতাসীন দলটি জানায়, সংলাপে তাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ ২৩ জন উপস্থিত থাকবেন। পরে বৃহস্পতিবার সংলাপের মাত্র আড়াই ঘণ্টা আগে ঐক্যফ্রন্ট জানায়, তাদের আরও পাঁচ জন নেতা থাকবেন এই বৈঠকে। যদিও শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উপস্থিত হতে পারেননি।
আরো পড়ুন : সংলাপের শুরুতে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
গণভবনে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে শুরু হওয়া সংলাপের সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দীর্ঘ ৯ বছর ধরে আমরা সরকারি দল দেশে কত উন্নয়ন করতে পেরেছি সেটা নিশ্চয়ই আপনারা দেখবেন। আমি বিচারের ভার আপনাদের ওপর ছেড়ে দেবো। দেশটা আমাদের সকলের। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য।
গণভবনে একই টেবিলে বসছেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনের ব্যাংকুয়েট হলে মিলিত হয়েছেন দেশের শীর্ষ রাজনীতিকরা। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের উদ্যোগ নিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছিল। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ফলে আজ সন্ধ্যা সাতটায় দেশবাসীর বহু কাক্সিক্ষত সংলাপ শুরু হয়েছে গণভবনে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের ২৩ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২১ জন নেতা গণভবনে এক টেবিলে বসেছেন।
জানা গেছে, তাদের প্রত্যেকে দুই মিনিট করে কথা বলার সুযোগ পাবেন।
সংলাপে উপস্থিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের ২২ নেতারা হলেন— দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, আবদুল মতিন খসরু, কাজী জাফরুল্লাহ, ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, স্থায়ী কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। তাদের সঙ্গে আছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও মঈনুদ্দিন খান বাদল, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া এবং ওয়াকার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন।
অন্যদিকে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে রয়েছেন ২০ জন। তারা হলেন— মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। তাদের সঙ্গে থাকছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও এস এম আকরাম; গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, মোকাব্বির খান, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ও ম শফিকুল্লাহ; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন ও সহসভাপতি তানিয়া রব; ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মনসুর ও আ ব ম মোস্তফা আমিন এবং স্বতন্ত্র হিসেবে থাকছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এর বাইরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও তিনি আসছেন না বলে জানা গেছে।
এর আগে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে রোববার (২৮ অক্টোবর) চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে দলের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের কাছে এ সংক্রান্ত দুইটি চিঠি হস্তান্তর করেন।
পরে, সোমবার (২৯ অক্টোবর) মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর দলীয় শীর্ষ নেতাদের নিয়ে এক অনির্ধারিত বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, ওই বৈঠকেই সংলাপের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুর কন্যার দরজা কারও জন্য বন্ধ থাকে না। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, আমরা সংলাপে বসতে রাজি এবং তাদের সঙ্গে সংলাপে বসব।
পরে মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সকালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দফতর সম্পাদক আবদুস সোবাহান গোলাপ চিঠি নিয়ে হাজির হন ড. কামালের বাসায়। ওই চিঠিতে বলা হয়, আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় গণভবনে সংলাপের জন্য ঐক্যফ্রন্টকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।