ক্রাইমবার্তা রিপোট: দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ ‘গ্রহণযোগ্য’ নয় বলে তা নাকচ করে দিয়েছে বিএনপি।
হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পর গত রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এই অবস্থানের কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়েছি এ জন্য যে, একটি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে একটা রিট পিটিশনের বিষয়ে কোর্টের আদেশ একেবারেই নজিরবিহীন। আমাদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। রাজনৈতিক দল নিজের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলে, সেই গঠনতন্ত্রে যেটা থাকে সেটাই চূড়ান্ত। সে ক্ষেত্র এই ধরনের রুল কতটুকু গ্রহণযোগ্য, আইনজীবীরা বলেছেন এটা গ্রহণযোগ্যই না। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান-এ বিষয়ে কোনো রকমের সন্দেহ নেইÑ এটাই মূল কথা।’
দলের মহাসচিব বলেন, ‘আমি বলতে চাই, এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক বিষয়। এই সরকার মতায় আসার পর থেকে রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলকে মোকাবেলা না করে সম্পূর্ণভাবে আদালতকে ব্যবহার করে তারা রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। আপনারা দেখবেন সংবিধানে যতগুলো সংশোধনী এনেছে এয়োদশ ও পঞ্চদশ সংশোধনীগুলো এসব কিন্তু জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আনেনি, আদালতের একটা রায় নিয়ে সংশোধন করেছে। সংসদ কিংবা কোনো রেফারেন্ডামেও জনগণ ওইসবের সিদ্ধান্ত দেয়নি। সব কিছু আদালতের আশ্রয় নিয়ে তারা করেছে এবং আদালতকে দিয়ে বলে যে, ওইসব গণতন্ত্রবিরোধী কাজ হয়েছে। গ্রামে কিছু দুষ্ট মোড়ল থাকে তারা প্রতিপকে কাবু করার জন্য মিথ্যা ও সাজানো মামলা করে। মতাসীনরাও সেটা করছে। এখন একটা পার্টির প্রধান কে হবেন, কে হবেন না, সদস্য কে হবেন, হবেন না সেটা পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। এ জন্য আমরা মনে করছি যে, এই রিট পিটিশন এবং এটা বিএনপির বিরুদ্ধের একটা সামগ্রিক চক্রান্ত যেটা চলছে, এটা তারই একটা অংশ।’
তিনি বলেন, ‘চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার যে একটা চক্রান্তে সেই চক্রান্তের ফলে দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে, সেই চক্রান্তের কারণে জনাব তারেক রহমানকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দেয়া হচ্ছে সেই চক্রান্তেই। উদ্দেশ্য একটাই বিএনপিকে ধ্বংস করে দেয়া। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিচার বিভাগকে তারা হাতিয়ার হিসেবে এ েেত্র ব্যবহার করছে। আমরা পুরো প্রচেষ্টা নিন্দা জানাচ্ছি। বিএনপি হচ্ছে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। দীর্ঘ ৪০ বছর বিএনপি বহুবার মতায় এসেছে জনগণের রায় নিয়ে। বিএনপিকে সহজেই ধ্বংস করা যাবে না, নির্মূল করা যাবে না।
অতীতেও বিএনপিকে ধ্বংসের চেষ্টাও সফল হয়নি বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।
সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এই আদেশ অকার্যকর। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আদালত এই আদেশ দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমাদের মহাসচিবকে বাদি করা হয়েছে অথচ মহাসচিবকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। উচ্চ আদালতের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে আমরা বুঝব।
গুলশানে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে গণভবনে বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সংলাপের যাওয়ার বিষয়টি অবহিত করা হয়।
জোটের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে ২০ দল। একই সাথে নৈশভোজে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন তারা। জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচনে নয়। একই সাথে সংসদ না ভাঙলেও নির্বাচনে যাবে না ২০ দল। এ বিষয়টি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সংলাপে বিএনপি তুলে ধরে। এ নিয়ে বিএনপির প থেকে আশ্বস্ত করেন মির্জা ফখরুল। জোট নেতাদের তিনি বলেন, সংলাপ কিংবা আন্দোলনে জয়ী হওয়ার পরই নির্বাচন নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। নির্বাচনে গেলে সবাইকে মূল্যায়নও করা হবে।
বৈঠকে অংশ নেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য আবদুল হালিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।