Bangladesh Prime Minister Sheikh Hasina gestures while speaking during a press conference after the national election in Dhaka on January 6, 2014. Bangladesh's Prime Minister Sheikh Hasina insisted her walkover win in an election boycotted by the opposition was legitimate and blamed her rivals for the unprecedented bloodshed on polling day. AFP PHOTO/STRSTR/AFP/Getty Images

ধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে বলেন,‘নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই। আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই’

ক্রাইমবার্তাডেক্স রিপোর্টঃ  ময়মনসিংহ বিভাগের উন্নয়নে ১৯৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব প্রকল্পের বাস্তাবায়ন করতে বাংলাদেশকে আরো উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন ও জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। এসময় তিনি জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, হাত তুলে ওয়াদা করুন, নৌকায় ভোট দেবেন। উপস্থিত জনতা হাত তুলে সম্মতি জানালে প্রধানমন্ত্রী সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

শুক্রবার মযমনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষন দেয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সরকার প্রধানমন্ত্রী মঞ্চের পাশে ১৯৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন বলে জানিয়ে কবির ভাষায় বলেন, ‘নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই। আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার কোনো চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। আপনাদের সেবা করাই আমার কাজ। সবাই সুন্দরভাবে বাঁচবেন, উন্নত জীবন পাবেন, সেটাই আমি চাই। ময়মনসিংহ বিভাগের কার্যক্রম যেভাবে সুন্দরভাবে চলতে পারে সবার কাছে সেই সহযোগিতাও চান তিনি।

আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর সভাপতি এহতেশামুল আলম ও সাধারণ সম্পাক মোহিত উর রহমান শান্ত’র সঞ্চালনায় জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. দীপু মনি এমপি, আহম্মদ হোসেন, মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম এমপি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বাণিজ্য সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, মারুফা আক্তার পপি, অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এমপি, শরিফ আহমেদ এমপি, নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এমপি, জুয়েল আরেং এমপি, নেত্রকোনা জেলা আ’লীগের সভাপতি আশরাফ আলী খসরু, জামালপুর জেলা আ’লীগের সভাপতি বাকী বিল্লাহ, শেরপুর জেলা আ’লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেত্রী সাফিয়া ইসলাম, অপু উকিল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ইকরামুল হক টিটু, স্বাচিপ মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ, ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিব সরকার, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিব প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই জাতির জনককে স্মরণ করে বলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেকে জাতির পিতা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়। আমি ও আমার বোন ছাড়া বাবা-মা-ভাইসহ সবাইকে হারিয়েছি। মানুষ তার আপনজনকে হত্যার বিচার চাইতে পারে, আমাদের সেই বিচার চাওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়নি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করতে চেয়েছিল জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু ২০০১ সালে ষড়যন্ত্র করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে আ’লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করে। এই ময়মনসিংহে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর মতো অত্যাচার করেছিল। ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।

২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি ৩৯০০ মানুষকে আগুনে পুড়েছিল এবং ৫শ’ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলেই নির্যাতন করে, আর আ’লীগ ক্ষমতায় এলে কোনো নির্যাতন করে না, দেশের উন্নয়ন করে, মানুষের কল্যাণ করে। তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার সময় দেশের দারিদ্র্য যেখানে ৪০ শতাংশ ছিল, তা গত ১০ বছরে ২১ ভাগে নেমে এসেছে। পুর্বে যেভাবে ভোট দিয়েছেন, আগামী দিনেও সেভাবে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন, যেন দারিদ্র্যসীমা ৫-৬ ভাগ কমাতে পারি।

জাতির পিতা বেতবুনিয়ায় ভূ-গর্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রত্যেক এলাকায় ব্রডব্যান্ড ও ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করেছি। আজকে মহাকাশে স্যাটালাইট বঙ্গবন্ধু-১ স্থাপন করে আমরা মহাকাশ জয় করেছি। বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা যেসব ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি, তাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা সেখানে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারে। নিজের দেশে বসে বিদেশের অর্থ উপার্জন করতে পারে। সেই সুযোগ করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আজকে আধুনিক প্রযুক্তি সবার হাতে। কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা ও মাণ্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করে দিয়েছি। আজকে সবার হাতে হাতে মোবাইল। এই মোবাইল বিএনপি আমলে ছিলনা। ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখনই সবার হাতে মোবাইল পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করি। আজকে সবার হাতে মোবাইল। তিনি সবার হাতে মোবাইল আছে কিনা জানতে চাইলে হাত উঁচু করে সবাই মোবাইল ফোন প্রধানমন্ত্রীকে দেখান। তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মা-বোনেরা খেয়ে-দেয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। ৩০ প্রকার ওষুধ বিনা পয়সায় তাদের হাতে তুলে দিয়েছি। আজকে দেশে খাদ্যের কোনো অভাব নেই।

দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। দু:স্থ্য মানুষ, প্রতিবন্ধী, বিধবা, বয়স্ক, বিবাহ ভাতা দিচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সম্মানী ভাতা দিয়ে যাচ্ছি। কারণ মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের শ্রদ্ধার প্রাত্র। সমাজে কেউ বাদ থাকবে না। সেই চিন্তা করেই আমরা রাস্ট্র পরিচালনা করি।

তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নয়নে রোল মডেল। এটা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমি মনে করি এটা আমাদের কর্তব্য। বাংলার মানুষ যেন ভালো ভাবে এবং সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। বাংলার মানুষ যাতে পেট ভরে খেতে পারে প্রতিটি মানুষের যেন ঘর থাকে। কারো কোনো অভাব থাকবে না। প্রত্যেক ডিসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে একটি মানুষ গৃহহারা, ভূমিহীন না থাকে। তাদেরকে বিনা পয়সায় আশ্রয়ান প্রকল্পে তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে। গুচ্ছগ্রামের ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা ভিক্ষুক মুক্ত করবো। খুলনায় যেভাবে ভিক্ষুকমুক্ত করা হয়েছে, সেভাবে ময়মনসিংহকেও ভিক্ষুকমুক্ত করা হবে। এজন্য বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের একদিনের বেতনের অর্থ দিবেন। আমিও প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে অর্থ দিচ্ছি। কোনো মানুষ ভিক্ষা করবে না। প্রত্যেক মানুষ কাজ করে খাবে। যারা কর্মক্ষম নয় তাদেরকে ভাতা দেয়া হবে। বিনা ভাড়ায় ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিবো। এই বাংলাদেশ জাতির পিতার বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, বিভাগ নামকায়াস্তে নয়, ময়মনসিংহ বিভাগের সকল দপ্তরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। ২০০৮ সালে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন করে রেকর্ড গড়েছি। দেশের ৯৩ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ১৯৫টি প্রকল্পের কাজ শুরু হলে মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

২০২১ সালকে মজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। আমরা ২১০০ সালের জন্য ডেলটা প্রকল্পের প্ল্যান তৈরি করে ফেলেছি।
আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে নারীরাই হবে নৌকার জোঁয়ার। তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘মরা গাঙ্গে জোঁয়ার আসে না। বিএনপি’র আন্দোলন ভূঁয়া, ধানের শীষ ভূঁয়া, ধানেরশীষ পেটের বিষ’। তিনি সংলাপ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা কারোর চাপের কাছে নতি স্বীকার করিনি। সংলাপ সবার জন্য খোলা।

এদিকে জনসভা সফল করতে সকাল থেকেই ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা (শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ) থেকে কয়েক’শ বাস-ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে করে এসে শহরতলী চায়না মোড়, ঢাকা বাইপাস মোড়, ফুলবাড়ীয়া বাইপাস মোড়, খাগডহর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মোড় পর্যন্ত অবস্থান নেয়। পরে সেখান থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ পাঁয়ে হেটে জনসভাস্থলে যোগদান করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল যেন জনসমুদ্রে রূপ নেয়। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উঠার পরপরই মঞ্চের সামনে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে উপস্থিত জনতার মাঝে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়।

এক পর্যায়ে চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু হলে সঞ্চালক উচ্চস্বরে মাইকে বারবার চেয়ার ছোড়াছুড়ি না করতে অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে শহরজুড়ে বিশৃঙ্খলা এড়াতে রিকসা, অটোরিকসা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখে। পুরো নগরীজুড়ে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় বলে জানান এক পুলিশ সুপার।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।