সবার সাথে সংলাপে বসার কারণ বললেন প্রধানমন্ত্রী

ক্রাইমবার্তাডেক্স রিপোর্টঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই, যাতে জনগণ তাদের নেতৃত্ব খুঁজে নিতে পারে। কীভাবে সেই নেতৃত্ব খুঁজে নিতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

আজ শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আগামী নির্বাচন নিয়ে ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ তথ্য জানায়।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব না। এ ধারা অব্যাহত থাকুক এবং উন্নয়নের গতি সচল থাকুক।’

সবাইকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার সাথে সংলাপ করছে আওয়ামী লীগ। অনেক ঘাত প্রতিঘাত ও বাধা অতিক্রম করে আমরা গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখছি। জনগণের কল্যাণে কাজ করছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক, এটাই আমরা চাই। গণতান্ত্রিক ধারা বজায় থাকলে দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, আমরা সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই।’

গণভবনে যাওয়ায় যুক্তফ্রন্ট নেতাদের স্বাগত ও ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণভবন জনগণের ভবন। আপনারা এখানে এসেছেন এ জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন যুক্তফ্রন্টের নেতারা। ছবি : ফোকাস বাংলা

রাত পৌনে ৮টা থেকে সংলাপ শুরু হয়।

সংলাপে ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে ২১ সদস্য বিশিষ্ট যুক্তফ্রন্ট প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

যুক্তফ্রন্ট প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, আবদুর রউফ মান্নান, মোহাম্মদ ইউসুফ, সহ সভাপতি মাহমুদা চৌধুরী, সাবেক এমপি এইচএম গোলাম রেজা, বিএলডিপি সভাপতি নাজি মউদ্দীন আল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গণি, মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মর্তুজা এবং জাতীয় জনতা পার্টির সভাপতি শেখ আসাদুজ্জামান।

বিকল্পধারার সভাপতির প্রেসসচিব জাহাঙ্গীর আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘সংলাপের পর যুক্তফ্রন্টের নেতারা রাত ১১টার দিকে বারিধারায় বি. চৌধুরীর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করবেন।’

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী দীর্ঘ সংলাপে অংশ নেন ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

গত মঙ্গলবার বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী তাঁর দলের সঙ্গে সংলাপে বসতে শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠান। পরে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সংলাপের জন্য বি. চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানান।

আরো পড়ুন : ঐক্যফ্রন্টকে তিনটি বিষয়ে ছাড় দেওয়ার কথা জানালেন কাদের 
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংলাপে কিছু বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অপজিশন কিভাবে রিয়েক্ট করে এটা তাদের ব্যাপার। আমি তো মনে করি না এখানে ব্যর্থতার কিছু আছে। শুরুটা ভালো হয়েছে। তাদের ৭ দফার ৩টি বিষয়ে আমাদের কোন বাধা, আপত্তি থাকবে না।’

মন্ত্রী বলেন, তারা যদি চান ছোট পরিসরে আবারো আলোচনা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তারা যদি চান তাহলে আমাদের জানাতে পারেন। ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন আমার দরজা খোলা, তারা যদি আবার আসতে চান আসবেন।’

ওবায়দুল কাদের শুক্রবার সকালে শ্রীনগরের দোগাছি এলাকায় পদ্মা সেতু ভিজিটরস সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন দীর্ঘদিনের লং গ্যাপ, ডিসটেন্স। এ লং ডিসটেন্সকে রাতারাতি ওভারনাইট ম্যাজিক্যাল ট্রান্সফরমেশন সম্ভব না, ক্লোজ করাও সম্ভব না। কিন্তু এই সংলাপে কিছু বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। বিএনপি নেতা কর্মীদের যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মামলা আছে, ক্রিমিনাল অফেন্স ছাড়া শুধু রাজনৈতিক কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের আমার কাছে তালিকা পাঠাতে বলেছি। এই তালিকা অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।

কাদের বলেন, সংলাপ ৮ নভেম্বর পর্যন্ত হবে। ভালো আলোচনা হয়েছে। তারা চাইলে আবারো আলোচনা হতে পারে। দূরত্বটা বহু দিনের। টানা পোড়নের ক্ষেত্রে ২১ আগস্ট, ১৫ আগস্ট আছেই। সেনসিটিভ কিছু ইস্যু। ১৫ আগস্টের প্রতি আমাদের আবিষ্ট আছে। ২১ আগস্ট বিএনপি আমলে নৃশংস ঘটনা ঘটে, বেগম আইভি রহমানসহ ২২টি প্রাণ ঝরে গেছে। তারপরও আমরা কম্প্রোমাইজ করেছি। পলেটিক্স শুড বি কম্প্রোমাইজ এ্যাট যাস্ট।

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি ৭৫ ’র ১৫ আগস্ট বর্বরোচিতভাবে জাতির পিতা এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকরা হয়েছিল। সেখানে হত্যাকারীকে যারা পুরস্কৃত করেছেন এবং যারা হত্যাকারীদের বিচার হবে না, এই রকম বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন সংবিধানে। তারপরও আমরা পলিটিক্স করি, একটি ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকা আবশ্যক।’

এ সময় মন্ত্রীর সাথে সেতু মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন : সঙ্কটের সুরাহা হয়নি
নির্বাচন ইস্যুতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে একই টেবিলে বসে বহুল আলোচিত সংলাপ করেছে দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক জোট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে পৌনে চার ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের মূল দাবিগুলোর কোনো সুরাহা না হওয়ায় রাজনৈতিক সঙ্কট রয়ে গেল। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবির উত্তরে সংলাপে আওয়ামী লীগ স্পষ্টভাবে বলেছে, ‘সংবিধানের বাইরে তাদের যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়েও সরকারের কিছু করার নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে বলে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন। সভা-সমাবেশ করতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা পর্যায়ক্রমে বক্তব্য রাখেন। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার, তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়া, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপে সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা বাদ দেয়া ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি মতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করার দাবিগুলোর যৌক্তিকতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেই নোট নেন।

সংলাপের একপর্যায়ে সংসদ ভেঙে দেয়া ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ, যেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে সেখানে নির্বাচন কিভাবে হয়? প্রধানমন্ত্রী ড. কামালকে বলেন, আপনি তো সংবিধান বিশেষজ্ঞ। আমি যতদূর জানি, ভারতে যখন নির্বাচন হবে, তখন নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই দায়িত্ব পালন করবেন। ব্রিটেনে যখন নির্বাচন হবে, তখন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই দায়িত্ব পালন করবেন। অন্য সংসদীয় গণতন্ত্রে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও একই পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়া উচিত কি না?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আপনারা নির্বাচন চাচ্ছেন। দেশে নিরপেক্ষ কে আছেন বলুন।
খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে, জামিন বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, নজিরবিহীনভাবে সাজা দ্বিগুণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা এর উত্তরে বলেন, খালেদা জিয়াকে তো আদালত সাজা দিয়েছে। আমরা তো খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করিনি। হাইকোর্ট যদি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেন, তাহলে আমরা কী করব?

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি তো আইনগত লড়াই করেছে। একটা মামলা ১০ বছর ধরে চলেছে। আরেকটি চলেছে আট বছর। প্রথম মামলা তো আমরাও করিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলা হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপে নিরাপদ সড়ক অন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব আন্দোলনের সময় গ্রেফতার সবাই ছাড়া পেয়েছে। মুক্তি পেয়েছে সবাই। শহিদুল আলমের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন, তার (শহিদুল) কথাগুলো আপনারা কেউ পড়েছেন কি না? একটু পড়ে দেখবেন তার কথাগুলো।

ড. কামাল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচনের জন্য কী কী করা যায়, তার সমাধান আপনি দিন।

সব দলকে সমান সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দলের কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে না। আমি নিজেই বলেছি আপনাদের যেন জনসভা করতে দেয়া হয়। আমার দলের সাধারণ সম্পাদককে বলেছি যেকোনো কর্মসূচিতে যেন বাধা না দেয়া হয়।

আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল, জ্বালাও পোড়াও করেছিল। এখন কেন তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে নিরপেক্ষ সরকার দিতে আগ্রহী নয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের এমন বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, দেশে এখন সে ধরনের কোনো পরিস্থিতি নেই।

জানা গেছে, সংলাপে একাদশ জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে এমন প্রস্তাবে মতাসীনরা কোনো সায় দেয়নি।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।