ক্রাইমবার্তাডেক্স রিপোর্ট: আলোচনা আর আন্দোলন একসঙ্গে কীভাবে সম্ভব সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যখন এই আলোচনা চলছে, আবার তখনই দেখলাম আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়। একদিকে আলোচনা করবে, আবার অন্যদিকে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া- তাহলে এটা কী ধরনের সংলাপ; আমাদের কাছে এটা বোধগম্য নয়। জানি না জাতি এটা কীভাবে নেবে। তবে আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক’
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংলাপের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা চাই সকলের অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংলাপে বসেছি। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক, দেশের মানুষ তার পছন্দ মতো ভোট দিতে পারুক, তারা তাদের পছন্দের সরকার বেছে নিক; সে কারণেই আমি ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমি কিন্তু একটা কথাও বলিনি প্রথমে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তাদের কথা শুনেছি। শেষে গিয়ে আমি কথা বলেছি। সেখানেও বলেছি কোনটা কোনটা আমরা করতে পারি, কোনটা রাষ্ট্রপতির, কোনটা নির্বাচন কমিশনের, কোনটা কীভাবে করা যায় এসব নিয়ে বলেছি।’
শনিবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত জেলহত্যা দিবসের আলোচনায় এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আজ আমাদের জাতীয় চার নেতা আমাদের মধ্যে নেই, জাতির পিতাও আমাদের মধ্যে নেই। তবে যে আদর্শ তারা রেখে গেছেন, সে আদর্শ অনুসারে দেশ গড়তে হবে।
এসময় সাম্প্রতিক সংলাপের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। চিঠি পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে স্বাগত জানালাম। যারাই দেখা করতে চাচ্ছেন, ইতোমধ্যেই ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কথা রয়েছে। তারা সংলাপ করতে চেয়েছে, আমরা করেছি। তারা যেসব দাবি দাওয়া দিয়েছে, আমাদের পক্ষে যা মানা সম্ভব তা মানবো। তারা রাজবন্দিদের মুক্তি চেয়েছেন। আমরা বলেছি তালিকা দেন। তাদের বিরুদ্ধে যদি খুনের মামলা না থাকে, কোনও ক্রিমিনাল অফেন্স তারা করে না থাকে, তাহলে অবশ্যই.. আর আমরা তো কাউকে রাজবন্দি করি নাই। তাই যদি করতাম তাহলে যখন মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা শুরু হলো, তখনই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারতাম। গ্রেফতার করতে পারতাম। আমরা তো রাজনৈতিক কারণে কারও বিরুদ্ধে মামলা করিনি। খালেদা জিয়া, তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাদেরই আপনজন। তাদেরই বানানো রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন, সেনাপ্রধান মঈনুদ্দিন, সবাইতে বিএনপির নিয়োগ দেওয়া লোক। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন তাদের তো একজন উপদেষ্টা মনে হয়। সেই মামলাটা তৈরি করে দিয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। তাদের দেওয়া মামলা দশটা বছর ধরে চলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু থাকলে দশ বছর ধরে মামলা চলার কথা না। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে।’
দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠূ নির্বঅচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে প্রায় ছয় হাজারের মতো নির্বাচন হয়েছে। ইউপি নির্বাচন, পৌর নির্বাচন, উপ নির্বাচন হয়েছে; কেউ কোনও কথা বলতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হবে। মানুষ ভালো থাকুক, মানুষের ভালো হোক, দেশ ভালো থাকুক, বাংলাদেমের একেবারে তৃণমূলের মানুষটার জীবনও যেনো উন্নত হয়, আওয়ামী লীগ সেটাই চায়। এতো কাজ করেছি, তারপরও যদি জনগণ ভোট না দেয় তাহলে তো কিছু করার নাই। এটা জনগণের ওপর। ভোটের মালিক জনগণ।’
নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। গঠন করার আগে সার্চ কমিটি হয়েছে। সার্চ কমিটিতে প্রত্যেকটা দলের পক্ষ থেকে নাম গেছে। আমরা যেমন নাম দিয়েছি, বিএনপিও দিয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। এই কমিশন নিয়ে তো প্রশ্ন থাকতে পারে না।’
জেলহত্যার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জেলহত্যার বিচার যেদিন করতে পারলাম, সেদিন মনে হলো বাংলাদেশ যেনো অভিশাপমুক্ত হলো। যেদিন এই মামলার রায় হলো, সেদিন বিএনপি হরতাল ডেকেছিল। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর এই ঘটনা ঘটে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় এলো, তাদের আসল রূপ বের হলো। খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। আমরা সরকার গঠন করে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছিলাম। অথচ খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আবার তাদের চাকরি দেন এবং প্রমোশনও দেন। হত্যাকারীদের এজন বিদেশের মাটিতে মৃত্যুবরণ করেছিল। খালেদা জিয়া তাকেও প্রমোশন দিয়ে পেনশনের সব সুবিধা দেন। এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। ভোটারবিহীন নির্বাচন করে খালেদা জিয়া খুনী রশীদ ও হুদাকে সংসদে বসায়। যে চেয়ারে সংসদের বিরোধী দলের নেতা বসেন, সেই চেয়ারে খুনীকে বসিয়েছিলেন তিনি। আমরা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করি, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করি। এই বিচারগুলির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অভিশাপমুক্ত হয়েছে।’
কিছু মানুষ দেশের ভালো চায় না জানিয়ে এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখনও কিছু মানুষ আছে, বাংলাদেশের মানুষকে খুশি দেখছে তাদের ভালো লাগে না।’
খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের জুবিলি মাঠে আমাদের ওপর যে পুলিশ গুলি করলো, সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে খালেদা জিয়া পরে প্রমোশন দিলো। এরকম আরও অনেক ঘটনা। তারপরও ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে আমি নিজে তাকে ফোন করেছি। আমার এডিসিকে দিয়ে ফোন করিয়েছি। তিনি ফোন ধরেননি। তিনি ফোনও করেননি। এক পর্যায়ে আমিই ফোন দেই আবারও। তারপর যে ঝাড়ি খেলাম, তা আপনারা জানেন।’
সেসময় বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষকে পুড়িয়ে মারা তো কোনও আন্দোলন না। সাধারণ মানুষের গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া, ড্রাইভার-হেলপার-যাত্রীসহ বাসে আগুন দেওয়া। পাঁচশর মতো মানুষ পুড়িয়েছে তারা। প্রায় ২৮-২৯ এর মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করেছে। স্কুল কলেজ পুড়িয়ে দিয়েছে। ছোট্ট শিশু, পরীক্ষার্থী কেউ রেহাই পায়নি। প্রায় তিন হাজারের মতো গাড়ি পুড়িয়েছে। আমরা তাদের সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। আমরা সৃষ্টি করি। আর তারা ধ্বংস করে।’