নয়াপল্টনে তরিকুল ইসলামের জানাজা সম্পন্ন

ক্রাইমবার্তা রিপোট:রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।

সোমবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করে।

এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কেন্দ্রীয়, মহানগরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

রোববার বিকাল পাঁচটায় অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবীদ।

 

আরো পড়ুন : শহীদ মিনার বানিয়ে পাক সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন তরিকুল ইসলাম
যশোর অফিস, ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৪৪

বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।  তিনি দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।

তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তরিকুল ইসলাম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ্জ্ব আব্দুল আজিজ একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মাতা মোসাম্মৎ নূরজাহান বেগম ছিলেন একজন গৃহিণী। তরিকুল ইসলাম দুই পুত্র সন্তানের জনক। অমিত আর সুমিত। ছোট ছেলে আমিত বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক। স্ত্রী নারর্গিস ইসলাম তাঁর অন্যতম রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। তিনি যশোর সরকারী সিটি কলেজে বাংলা বিভাগের উপাধ্যাক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তরিকুল ইসলামের ১৯৫৩ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে তিনি এই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে আই. এ. এবং ১৯৬৮ সালে একই কলেজ থেকে তিনি অর্থনীতিতে বি. এ. (অনার্স) ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অর্থনীতিতে এম. এ ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৬২ সালে তরিকুল ইসলাম তখন যশোর এমএম কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। সে সময় যশোর শহরের শহীদ মিনারটি ছিল ভাঙ্গাচোরা। তরিকুল ইসলাম তার বন্ধু ও সহপাঠীদের সাথে নিয়ে একটি শহীদ মিনার তৈরি করেছিলেন। এজন্যে তৎকালীন পাকিন্তান সামরিক সরকারের রোষানলে পড়ে গ্রেফতার হন তরিকুল। এসময় কারাগারে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। কারাগারেই দীক্ষা নেন বাম রাজনীতির।

১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন এমএনএ আহম্মদ আলী সর্দারের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় কিছুদিন কারাভোগ করেন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের জন্য রাজবন্দি হিসেবে যশোর ও রাজশাহীতে কারাভোগ করেন দীর্ঘ নয় মাস। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় গ্রেফতার হন।

১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভাসানী আহূত ফারাক্কা লং মার্চেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে কথা বলে যেমন কারাভোগ করেছেন, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হিসেবেও তাকে যেতে হয়েছে জেলে।

ভাসানী ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) হয়ে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন বরেণ্য এ রাজনীতিক। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৭৬ সদস্যবিশিষ্ট প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য তরিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে বিএনপির যশোর জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান।

১৯৮০ সালে জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে পর্যায়ক্রমে তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে পদোন্নতি পান।

রাজনৈতিক জীবনে মিথ্যা মামলা ও কারাভোগের শিকার হয়েছেন বারবার। যশোরে উদীচী হত্যা মামলা, অধুনালুপ্ত রানার পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল হত্যাকাণ্ডসহ নানা মামলায় আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে তার নাম। ওয়ান ইলেভেনের সময় অন্য সিনিয়র রাজনীতিকদের মতো গ্রেফতার হন তরিকুল ইসলাম। কারাভোগ করেন দীর্ঘ দেড় বছর। মহাজোট সরকারের আমলেও নতুন নতুন মামলার আসামি হয়ে গ্রেফতার ও কারাভোগ করেছেন। বিএনপি নেতারা জানান, বিএনপির রাজনীতিতে নেতাকর্মীদের কাছে অত্যন্ত আস্থা ও শ্রদ্ধাভাজন নেতা তরিকুল ইসলাম।

১৯৭৩ সালে যশোর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তরিকুল ইসলাম নাম লেখান জনপ্রতিনিধির খাতায়। ১৯৭৮ সালে যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে যশোর সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত ও ১৯৮১ সালে সড়ক ও রেলপথ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী চরিত্র হলেও ভোটের রাজনীতিতে তার রয়েছে মিশ্র অভিজ্ঞতা।

১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। তবে বিএনপি সরকার গঠন করলে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরের বছর হন পূর্ণমন্ত্রী। ১৯৯৪ সালের উপ-নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব পান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর।

১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এককালের দুই বন্ধুর মুখোমুখি হন তিনি। বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যাওয়া আলী রেজা রাজু ও জাতীয় পার্টির খালেদুর রহমান টিটোর সঙ্গে লড়ে পরাজিত হন তিনি।

২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলী রেজা রাজুকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন তরিকুল। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পর্যায়ক্রমে খাদ্য, তথ্য ও সর্বশেষ বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেন। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ঘুরে আওয়ামী লীগে ঠাঁই নেয়া এককালের বন্ধু খালেদুর রহমান টিটোর কাছে পরাজিত হন তিনি। বিএনপি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় প্রার্থী হননি তিনি। তরিকুল ইসলাম যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক লোকসমাজ পত্রিকার প্রকাশক ছিলেন।

Check Also

গাড়িচাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মাসুদের মৃত্যু ‘হত্যাকাণ্ড’

প্রাইভেটকার চাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বর্ণনা করে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ৬ দফা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।