ক্রাইমবার্তাডেক্স রিপোর্ট:
সম্ভব ও অসম্ভব এর মাঝে ঝুলছে বাংলাদেশের সিলেট টেস্টের ভাগ্য। আর ভাগ্য খুলে গেলেই হবে টাইগারদের ক্রিকেট ইতিহাসে নয়া রেকর্ডও। টেস্টে ৪শ’ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের রেকর্ড মাত্র ৪ বার। তবে ৩শ’ রান তাড়া করে জয় বা ড্র’র রেকর্ড কম নয়। যে কারণে দুঃসাধ্য হলেও টাইগারদের জন্য সিলেট টেস্ট বাঁচানো বা জয় পাওয়া অসম্ভব নয়। হাতে এখনো দুই দিন আছে, এরই মধ্যে লক্ষ্যটাও এখন ২৯৫ রানের। টাইগারদের সব উইকেটেও অক্ষত। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়াতেই এখন তাদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন।
তবে নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে জয় সম্ভব। গতকাল ৩২১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দারুণভাবে আশা বাঁচিয়ে রেখেছেন দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও ইমরুল কায়েস। প্রথম ইনিংসের বোকামিগুলো এবার তাদের করতে দেখা যায়নি। দু’জনের জুটিতে এসেছে ২৬ রান। যেখানে নিজেদের ভুলে প্রথম ইনিংসে ওপেনিং জুটি থেমে ছিল মাত্র ৮ রানে। বলতে গেলে দু’জনকেই ঘিরে আশা। তারা যদি ভিত গড়ে দিতে পারেন তাহলে হয়তো রচিত হবে নয়া ইতিহাস। হ্যামিল্টন মাসাকাদজার দল প্রথম ইনিংসে করেছিল ২৮২ রান। জবাব দিতে নেমে প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ১৩৯ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাট করতে নামে। শুরুটাও করেছিল দারুণ। ধীরে ধীরে তারা লিড যখন ২০০ ছুঁয়ে ফেলে তখনই শঙ্কার মেঘ দানা বাঁধতে শুরু করে। প্রশ্ন ওঠে শেষ পর্যন্ত কত রানের লিড নিয়ে থামবে জিম্বাবুয়ে দল। কিন্তু স্পিনার তাইজুল ইসলাম দ্বিতীয় ইনিংসেও জ্বলে উঠেন। প্রথম ইনিংসে ৬ শিকারের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও তুলে নেন পাঁচ উইকেট। সেই সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল ইসলাম অপুর ঘূর্ণিও জিম্বাবুয়ের রানের লাগাম টেনে ধরে। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে তারা থামে ১৮১ রানে। তবে প্রথম ইনিংসের সুবাদে তারা লিড নেয় ৩২০ রানের। শঙ্কার কারণ এখন পর্যন্ত টেস্টে ১০ জয়ের মুখ দেখা বাংলাদেশ ২১৫ রানের বেশি রান তাড়া করে জিততে পারেনি। মাত্র তিন বারই রান তাড়া করে জয় এসেছে। সবশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর পি সারা ওভালে। নিজেদের শততম ম্যাচে সেবার লক্ষ্য ছিল ১৯১ রানের। দারুণ খেলে টাইগাররা ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয়। তার আগেরটি ছিল ২০১৪তে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০১ রানের মিরপুর শেরে বাংলা মাঠে জয় পায় ৩ উইকেটে। তবে ২০০৯ এ ২০০ রানের বেশি লক্ষ্য তাড়া করে একমাত্র জয়টি আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। লক্ষ্য তাড়া করে জয় বলতে গেলে বিদেশের মাটিতেই। সেখানে দেশের মাটিতে মাত্র একটি। তাই শঙ্কাতো জাগবেই।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ে তাইজুল ইসলামের কারণে লক্ষ্যটা বড় করতে পারেনি। দিনের শুরুতে জিম্বাবুয়ে ছিল ভীষণ সতর্ক। প্রথম ১০ ওভারে উইকেটের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। দলের জন্য প্রথম স্বস্তি নিয়ে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার বলের লাইন মিস করে বোল্ড ওপেনার ব্রায়ান চারি। মিরাজ পরে ফিরিয়েছেন বাধা হয়ে থাকা হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকেও। ৪৮ রানে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। এর মাঝে তাইজুল তুলে নেন দিনের প্রথম শিকার। তিনে নেমে আগ্রাসী ভাবে ব্যাট চালাচ্ছিলেন ব্রান্ডন টেইলর। সেই চেষ্টায় তাইজুলের বলে ইমরুলের দারুণ ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন ২৪ রানে। এরপর শন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা চেষ্টা করেন লিড বাড়াতে। কিন্তু কাউকেই খুব বেশি এগোতে দেননি তাইজুল। প্রথম ইনিংসে প্রাচীর হয়ে থাকা পিটার মুরকে ফেরান প্রথম বলেই। শেষ ব্যাটসম্যান টেন্ডাই চাতারাকে ফিরিয়ে পূর্ণ করে ম্যাচে দ্বিতীয় ৫ উইকেট। তাইজুলের সঙ্গে অন্য দুই স্পিনার মিরাজ ও নাজমুল ইসলাম অপুও যোগ দিয়ে খুব বেশি বাড়তে দেননি লিড। ১৬ রানের মধ্যে জিম্বাবুয়ে হারিয়েছে শেষ ৪ উইকেট। ক্যারিয়ারে প্রথম ১০ উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন তাইজুল। বাংলাদেশের হয়ে ১০ উইকেট পাওয়া চতুর্থ বোলার তিনি। সাকিব আল হাসান এই স্বাদ পেয়েছেন দুইবার।
বাংলাদেশের লড়াই শুরু হয় অবশ্য এরপরই। মেঘলা আকাশে অন্ধকার হয়ে আসা মাঠে ফ্লাড লাইট জ্বলে ওঠে বেলা সাড়ে তিনটার দিকেই। বিকালটা কাটিয়ে দেয়া তাই সহজ ছিল না। ইমরুল ও লিটন মিলে তা করেছেন। আলোরস্বল্পতায় খেলা শেষ হয় নির্ধারিত সময়ের ২৫ মিনিট আগে। লিটন ৩৮ বলে ১৪ ও ইমরুল ২৩ বলে ১২ রান করে দিনের খেলা শেষ করেন। আজ দিনের শুরুটা নির্ভর করছে তাদের ওপরই।