ক্রাইমবার্তা রিপোর্টঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন না পেছানোর দাবি জানিয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছে, অকারণে তফসিল পেছানো ঠিক হবে না।
মঙ্গলবার যুক্তফ্রন্ট নেতা ও বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দেখা করে ইসিকে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে নির্বাচন না পেছানোর কথা উল্লেখ করে বলা হয়, নির্বাচন তফসিল অকারণে বিলম্ব হলে জাতির মধ্যে সংশয়, বিভ্রান্তি ও হতাশার সৃষ্টি হবে—যা কোনো ক্রমেই কাম্য নয়।
এর আগে সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধিদল তফসিল পেছানো জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে। একপর্যায়ে সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছিল। ইসি আগামী ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছিল।
ইসির সঙ্গে দেখা শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংবাদ ব্রিফিংও করে যুক্তফ্রন্টের মহাসচিব আবদুল মান্নান। ব্রিফিংয়ে মান্নান বলেন, ইসির সাথে আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি নির্বাচনের তফসিল পেছালে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হতে পারে। আর এই শূন্যতা তৈরি হলে অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় চলে আসতে পারে।
যুক্তফ্রন্ট তাদের চিঠিতে আরও বলে, সমস্ত জাতি অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। যদি তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে জাতি ইসিকে ক্ষমা করবে না। চিঠিতে আরও বলা হয়, সরকার বা অন্য কোনো জোট চাপ বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে ইসি মাথা নত করবে না—এটা যুক্তফ্রন্ট ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।
এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে ঐক্যফ্রন্টের কয়েকটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন এই জোটের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফখরুল কর্মসূচি ঘোষণায় বলেন, যদি তফসিল না পেছায় তাহলে ইসি অভিমুখে পদযাত্রা করা হবে।
প্রসঙ্গত, সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে জাতীয় ঐক্য গড়তে একসঙ্গে কাজ শুরু করেন বি চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন। পরে জামায়াত প্রশ্নের মতের মিল না হওয়ায় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেননি বি চৌধুরী।
আরো পড়ুন : সমাঝোতার নামে নাটক করলে চলবে না : মির্জা ফখরুল
আমরা সংলাপে বিশ্বাস করি, সমাঝোতায় বিশ্বাস করি, আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সমাধান। কিন্তু সংলাপের নামে কোন নাটক করা চলবে না।
মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ সভাপতির বক্ত্যবে এই কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।
ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল বলেন, রাজশাহীর জনসভার পর তারা ময়মনসিংহ, খুলনা ও কুমিল্লায় যাবেন। এ ছাড়া তারা নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবিতে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করবেন।
জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমার বক্তব্যের সময় নাই। আমি শুধু আপনাদের সামনে এ কথা বলতে এসেছি, পিজি হাসপাতালের ছোট একটি কক্ষে তিনি (বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) বন্দি। আমি বিশ্বাস করি জনগণের এই আওয়াজ তার কানে পৌঁছে যাচ্ছে। সেখান থেকে তিনি বলছেন, তোমরা এগিয়ে যাও, জনগণের দাবি আদায় করো।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বলেছেন, আমি কারাগারে যেতে ভয় পাই না। গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য কারাগারে যেতে প্রস্তুত আছি। আপনারা সবাই একটি জাতীয় ঐক্য গঠন করুন। আজ আমি খুশি একটি ঐক্য গড়ে উঠেছে। সবাই এক মঞ্চে তার (খালেদা জিয়া) মুক্তির দাবি করছেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, একটা প্রহসনের সংলাপ করেছে। বলেছে, আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করবে না। কিন্তু একটু আগেও আমাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব চলবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আগামীকাল আবার সংলাপে যাব। সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাই। কিন্তু সংলাপের নামে নাটক বন্ধ করুন। জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা দাবি মেনে নিন।
সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিসহ সাত দফা দাবিতে ওই জনসভার আয়োজন করা হয়।
জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর এ্যানীর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মির্জা আব্বাস।
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন, সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদীন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, ড. সুকোমল বড়ুয়া, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স ও শামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত হয়েছেন।
এ ছাড়া বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, তকদির হোসেন মো. জসিম, আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ, কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিস, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান, সহসভাপতি আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, জহুরুল ইসলাম বিপ্লব, সহসাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা প্রমুখ জনসভায় উপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে আজ দুপুর দেড়টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই সভা চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। কোরআন তিলাওয়াত করেন হাফেজ মাওলানা নেসার উদ্দিন। এর পর সদ্য প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
এদিকে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে জড়ো হতে থাকেন জোটের নেতাকর্মীরা। রাজধানীসহ ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে সমাবেশস্থল মুখর করে রাখেন। তারা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান।
এ ছাড়া গণসংগীতও পরিবেশন করা হয়। নেতাকর্মীরা ‘বন্দি আছে আমার মা, ঘরে ফিরে যাবে না’, ‘হামলা করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। তাঁদের হাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ফেস্টুনও দেখা যায়। দেখা যায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানযুক্ত ব্যানারও।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ একাধিক দাবিতে আগামীকাল বুধবার দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এর আগে গত ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে প্রথম দফার বৈঠক শেষ হলেও সংলাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে গত ৩ নভেম্বর ফের প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেয় ঐক্যফ্রন্ট।