ক্রাইমবার্তা রিপোর্টঃ
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে দ্বিতীয় দফা সংলাপ আজ বুধবার। বেলা ১১টায় গণভবনে এই সংলাপে দুই পক্ষের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। ক্ষমতাসীন জোটের সাথে বিরোধীদলীয় জোটের আজকের সংলাপে কী সমাধান আসবে, নাকি বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো তীব্র হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দারুণ সংশয় রয়েছে।
সংলাপে অংশ নিচ্ছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ জন নেতা। মঙ্গলবার ওই ১১ নেতার নাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে পাঠিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ সংলাপে অংশ নেবেন। মঙ্গলবার রাতে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের এক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলে থাকছেন আ স ম আব্দুর রব, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মোস্তাফা মোহসীন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, এসএম আকরাম, আব্দুল মালেক রতন ও সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ।
ছোট পরিসরে সংলাপের জন্য গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি কার্যালয়ে তা পৌঁছে দেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা আ আ ম শফিক উল্লাহ ও জগলুল হায়দার আফ্রিক।
এর আগে গত শনিবার রাতে মতিঝিলে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে স্বল্প পরিসরে সংলাপ চেয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে সংলাপের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা হবে। আমরা মনে করি, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের লক্ষ্যে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে।’
গত ১ নভেম্বর শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের ২৩ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদল গণভবনে ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন ২০ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রতিনিধিদলের সাথে সংলাপে বসে।
সংলাপ শেষে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা অভিযোগ করেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে তাদের সাত দফা দাবি উত্থাপন করলেও সভা-সমাবেশ নিয়ে কিছু ভালো কথা শোনা ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান পাননি।
গত ১ নভেম্বর প্রথম দফা সংলাপ শেষে কোনো সমাধান না আসায় হতাশা প্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের ৭ দফা দাবির কোনোটাই সুনির্দিষ্টভাবে মানা হয়নি বলে জানান নেতারা। অপর দিকে আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবি মানবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে আজকের সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকার ও সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়ে সংবিধানের মধ্য থেকেই প্রস্তাব দেবে ঐক্যফ্রন্ট। নেতারা বলেছেন, সংবিধানেই সংসদ ভেঙে নির্বাচন দেয়ার বিধান রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন।
অনেকের আশঙ্কা, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলে হয়তো আজকে সংলাপের ইতি টানতে হবে। সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টারও অবসান ঘটবে। নির্বাচনকালীন সরকারসহ বড় ইস্যুতে দুই জোটের মধ্যকার বিদ্যমান বৈরিতা দূর না হলে দেশ সঙ্ঘাতের দিকে যাবে এটাও স্পষ্ট হচ্ছে। কারণ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গতকাল মঙ্গলবারের সমাবেশ থেকে কয়েকটি কর্মসূচি ঘোষণা করে সমঝোতা না হলে কঠিন আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জানা গেছে, আজকের সংলাপে মূলত সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-পাল্টাযুক্তি আসবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ঐক্যফ্রন্ট তিন দিন ধরে আইনজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করে সংবিধানের ভেতরে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করছেন।