ক্রাইমবার্তা রিপোর্টঃ
ইরাকের যে জায়গাগুলো এক সময় ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেই জায়গাগুলো থেকে হাজার হাজার মৃতদেহ-ভরা দু’শতাধিক গণকবর পাওয়া গেছে বলছে জাতিসংঘ।
জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার দফতর থেকে প্রকাশ করা এক রিপোর্টে বলা হয়, ইরাকের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে নিনেভেহ, কিরকুক, সালাহ আল-দীন, এবং আনবার প্রদেশগুলোয় এসব গণকবর পাওয়া গেছে। রিপোর্টে বলা হয়, এসব গণকবরে পাওয়া মৃতদেহের সংখ্যা ১২ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।
জাতিসংঘ বলছে, এসব গণকবরের ফরেনসিক পরীক্ষা করা দরকার, কারণ যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা কতটা ব্যাপক তার প্রমাণ রয়েছে এসব গণকবরে।
জেনেভা থেকে ইমোজিন ফুকস জানাচ্ছেন, এই গণকবরগুলো পাওয়া গেছে এমন এলাকায় যা একসময় ছিল ইসলামিক স্টেটের দখলে।
মসুল শহরের বাইরের একটি গর্তে খুঁজে পাওয়া গেছে আট জনের দেহ। আর খাফসা শহরে একটি বিরাট একটা খাদে পাওয়া গেছে শত শত মানুষের দেহাবশেষ। অনেক মৃতদেহই সনাক্ত করা যায়নি। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী থেকে শুরু করে ইরাকের সামরিক এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও আছে।
জাতিসংঘের এর আগের আনুমানিক হিসেবে বলা হয়েছিল, ইরাকে ইসলামিক স্টেট জঙ্গী গোষ্ঠীর হাতে অন্তত ৩৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে তিন বছর ধরে এই গোষ্ঠীটি সিরিয়া এবং ইরাকের যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করেছিল, সেখানে তারা বহু মানুষকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে। এর মধ্যে তাদের মতাদর্শের বিরোধী লোক থেকে শুরু করে, সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত লোকজন, ইয়াজিদি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ, সবাইকে টার্গেট করা হয়েছিল।
শত শত ইরাকি পরিবার এখনো তাদের নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, এসব গণকবর আসলে বড় ধরনের অপরাধের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
এটিকে জাতিসংঘ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যা বলে বর্ণনা করছে। জাতিসংঘ এই গণকবরগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা, সেখান থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার এবং এবং তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের লক্ষ্যে আরও তহবিল বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছে।
একই সঙ্গে যেসব পরিবার তাদের স্বজনদের খুঁজে বেড়াচ্ছে তাদেরকেও সহায়তা দেয়ার কথা বলেছে।
গত বছর মার্কিন-নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা, এবং ইরাকি সরকারি বাহিনী ও মিলিশিয়াদের মিলিত অভিযানে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী পরাজিত হয়, তবে কিছু এলাকায় এখনো আইএসের তৎপরতা রয়েছে।
আরো দেখুন : বাবার লাশ ফেরত দিন : সৌদি আরবের কাছে খাশোগির ছেলেরা
সাংবাদিক জামাল খাসোগির ছেলেরা সৌদি আরবের কাছে তাদের বাবার লাশ ফেরত চেয়েছে। রোববার সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তারা একথা জানান।
পরিবারের সদস্যরা যেন যথাযথ ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী খাশোগির লাশ সমাহিত করতে পারে সেজন্য তারা এ আবেদন করেছে। খবর এএফপি’র।
গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর খাসোগিকে হত্যা করা হয়।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িপ এরদোগান বলেন, সৌদি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে।
খাশোগির ছেলে আব্দুল্লাহ খাশোগি ওয়াশিংটনে এক সাক্ষাতকারে সিএনএনকে বলেন, ‘আমি আশা করি যেভাবেই আমার বাবাকে হত্যা করা হোক, তার মৃত্যুটা যন্ত্রণাদায়ক হয়নি। কষ্ট না দিয়ে দ্রুততার সাথেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি খুব একটা কষ্ট না পেয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই মারা গেছেন।’
আব্দুল্লাহ’র ভাই সালাহ বলেন, ‘আমরা এখন মদিনার আল বাকি গোরস্থানে আমার বাবার পরিবারের অন্য সদস্যদের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি আশা করি খুব শিগগিরই আমাদের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হবে।’
এদিকে সম্প্রতি তুরস্কের প্রধান প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, খাসোগি সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকামাত্রই তার শ্বাসরোধ করা হয়। শুধু তাই নয়, তার লাশ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের উপদেষ্টা ইয়াসিন আকতারি শুক্রবার প্রকাশিত এক কলামে এসিডের মাধ্যমে খাসোগির লাশ গলিয়ে ফেলা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।