ক্রাইমবার্তা রিপোর্টঃ তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কোন ধরণের সহিংসতা মেনে নিবে না নির্বাচন কমিশন। এ ধরণের কোন ইঙ্গিত পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে মতভেদ ঘোচাতে বুধবার দ্বিতীয় দফায় সংলাপে বসলেও সমাধানে পৌঁছতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
এই অবস্থায় বুধবার আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকের পর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন।
আওয়ামী লীগ ইসিকে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোনোর সাহস দিলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের তাদের দাবি পূরণ হওয়ার আগে তফসিল ঘোষণা করলে আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা এখনও অবহিত নই (কর্মসূচির বিষয়ে)। যখন জানব, তখন আলোচনা করব।
‘তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ইসির অধীনে থাকবে। তখন এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি হলে (তা মোকাবেলায়) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।’
ইসির সাথে আলোচনার পর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন কমিশন তাদের বিষয়টি দেখবে; সাধারণ মানুষ তা মোকাবেলা করবে।’
এদিকে তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে র্যাব বুধবার থেকেই সারাদেশে তাদের টহল জোরদার করেছে বলে বাহিনীর মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ভোট ঠেকানোর হুমকি দিয়েছিল। তখন সহিংসতায় প্রাণহানির পাশাপাশি অনেক ভোটকেন্দ্র পোড়ানো হয়েছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার ব্যাপারে আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে। সব দল অংশ নেবে আশা ইসির এবং সব দলের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত রয়েছে।’
ইসি সচিব জানান, বৈঠকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইসিকে ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে বলেছে।
তিনি বলেন, ‘ইসি যেন সংবিধান ও আইন মেনে কাজ করতে পারে, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা আচরণ বিধিমালা মেনেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’
বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের যেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া না হয়, সেই আহ্বান আওয়ামী লীগ রেখেছে বলে জানান হেলালুদ্দীন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপে নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার তর্কাতর্কিকে কেন্দ্র করে অনিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপ না করার পরামর্শও দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
হেলালুদ্দীন বলেন, ‘অনিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপ না করার পরামর্শ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিষয়টি আপনাদের অবহিত করলাম। উনারা (আওয়ামী লীগ) পরামর্শ দিয়েছে। তবে কার সঙ্গে সংলাপ করবে না করবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশনই।’
তিনি জানান, বুধবারের পর ইসি যাতে আর কোনো দলের সাথে নতুন করে সংলাপে বসে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র যাচ্ছে জেলায় জেলায়
একাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার জেলা পর্যায়ে মনোনয়নপত্রসহ নির্বাচন সামগ্রী পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। ইসির সহকারী সচিব সৈয়দ গোলাম রাশেদ সব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন।
তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির অন্যতম একটি কাজ মনোনয়নপত্র বিতরণ। তফসিল ঘোষণার পর থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন আগ্রহীরা।
বরাবরই বিভাগীয় কমিশনার (মেট্রোপলিটন), জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়ে থাকেন সংসদ নির্বাচনে।
মাঠ পর্যায়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক নির্বাচনী সামগ্রী (মনোনয়ন ফরমসহ বিভিন্ন ধরনের ফরম, জামানত বই, রশিদ বই, আচরণ বিধিমালা, প্রতীকের পোস্টার ইত্যাদি) ঢাকার তেজগাঁওস্থ গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস (বিজি প্রেস) থেকে সব জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে বৃহস্পতিবার বিতরণ করা হবে। এ সব নির্বাচন সামগ্রী বিতরণ/গ্রহণ চালান প্রেসের ফ্রন্ট ডেস্ক থেকে সরবরাহ করা হবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্বশীর কর্মকর্তাদের মালামাল গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। সাধারণত তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট পর্যন্ত ৪০-৪৫ দিন সময় লাগে। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন সময় রেখে ভোটের তফসিল হয়েছিল।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলে ৪৫ দিন সময়কে ‘স্ট্যান্ডার্ড’ মেনে ভোটের সময়সূচি ঘোষণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। যে ইংগিত তিনি দিয়েছেন, তাতে ভোট হতে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে।