খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে তফসিল গ্রহণযোগ্য হবেনা: ফখরুল

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ  কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের কথা পরিষ্কার- নির্বাচনের মাঠ সমান করতে হবে। সব দলকে সমান অধিকার দিতে হবে। মিথ্য মামলায় গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় এই তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। শুক্রবার বিকেলে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, রাজশাহীর মানুষের কাছে আমাদের আবেদন। আপনারা সংগ্রামী মানুষ, লড়াকু মানুষ। আমাদের মনে আছে, রাজনৈতিক আন্দোলনে রাজশাহীর কত মানুষের প্রাণ দিয়েছে।

গণতন্ত্রকে রক্ষার করার এই আন্দোলনকে প্রাণ দিয়ে হলেও আমরা সফল করবই। জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন হবে। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন- আপনারা কি খালেদা জিয়ার মুক্তি চান? তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চান? তাহলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সময় খুব সংকীর্ণ, সংকট আরো কঠিন। আজকে প্রশ্ন আমাদের স্বাধীনতা থাকবে কি থাকবে না। আমাদের সংগঠন করার অধিকার থাকবে কি থাকবে না সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর আগে এই মাঠে রোডমার্চে এসেছিলাম। তখন দেশনেত্রী সঙ্গে ছিলেন। তিনি আজ কারাগারে। তিনি প্রচন্ড অসুস্থ। তার জন্য কারাগারে ছোট একটি ঘরের মধ্যে বিচারালয় স্থাপন করা হয়েছে। তাকে কারাগারের অন্ধকারে তিলে তিলে হত্যা করা হচ্ছে। যা বৃটিশ আমলে হয়নি, পাকিস্তান আমলে হয়নি। অথচ এখন তাই হচ্ছে।  মাত্র ১০ বাই ২০ ফুটের একটি রুমে তার জন্য আদালত স্থাপন করেছে সরকার। তিনি বলেন, দেশনেত্রী আজ অসুস্থ। চরম অসুস্থ। তাকে চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা পুলিশ দিয়ে জনগনের অধিকারকে ধ্বংস করতে চায়।

সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই সরকারের ভীত নড়ে গেছে। এই সরকারের ভীত হল পুলিশ, দুর্নীতি। এর বাইরে কিছু নেই। আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে, বাস বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও সব কিছু উপেক্ষা করে এতো লোক এসেছেন। এতো লোককে কি গ্রেপ্তার করা যাবে? গ্রেপ্তার করা সম্ভব? যাবেনা। তাদের ভীত গেছে। পালাবার পথ খুঁজছে।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,  একাত্তরের পুলিশ ভাইরা চাকরি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল। আজকে সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে আহ্বান করব। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিন। পুলিশের ঊর্ধ্বতর কর্মকর্তাদের বলব, আপনারা সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। তা নাহলে আপনাকে-আমাকে জনগণ ক্ষমা করবে না

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন,  খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, তারেক জিয়ার মুক্তি চাই। এই মুক্তি কার কাছে চান? আমরা কি তাদের মুক্তি দিতে পারি? আজ যখন এই শহরে আসি তখন দেখি কোন লোক নেই জন নেই। যেন কারফিউ জারি করা হয়েছে। এরপরও আমি দেখতে পাচ্ছি আমার সামনে দিয়ে বাধ ভাঙা জোয়ারের মতো মানুষ আসছে। এই মানুষ আসবে। জোয়ার বন্ধ করা যাবেনা। যতো বাধা দেয়া হোক না কেন কাজ হবে না।

সমাবেশে নাগরিক ঐক্যজোটের আহ্ববায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তারা ভেবেছে সবাইকে বাধা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে। তাহলে তাদের এই আসায় গুড়ে বালি। আমি খুব স্পষ্ট বলতে চাই। মিথ্যে কথা বলবেন না। এক বনে দুই রাজা থাকতে পারেনা। তেমনি এক দেশে দুই সংসদ থাকতে পারে না। আপনিও প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেন না।  পদত্যাগ করুন। নির্বাচন দিন। পদত্যাগ না করে ক্ষমতার ডান্ডা নিয়ে আমাদের পিঠে চড়বেন তা হতে পারে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন,  এদেশের মানুষ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। গত ১০ বছরে মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে। এই স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এ জন্য একদিনে আমাদের ২২০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী আমাদের নেত্রীর ভালো চিকিৎসার কথা বলেছেন। কিন্তু একদিনের মধ্যে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। নির্বাচন কমিশন নাকি আজ প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন। এটা মিথ্যা কথা। আমরা তাদের বিনা চ্যালেঞ্জে তাদের পার হতে দিতে পারি না। আমরা যদি মাঠে নামি জনতার জোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচন হতে পারেনা। গত ৫ই জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। আমাদের হাসিনার বাক্স থেকে নির্বাচনকে বের করে আনা দরকার। আওয়ামী লীগের সময় শেষ। তাদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। প্রশাসনকে বলতে চাই। আপনাদের বেতন হয় জনগনের টাকায়। আজ যদি জনগণের পক্ষে না দাঁড়াতে পারেন তাহলে একদিন জবাবদিহিতা করতে হবে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন,  আমি বিএনপির জনসভায় আসি নাই। কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে এসেছি। আমি মনে করি বাংলাদেশের রাজনীতি মানে খালেদা জিয়া।  তাকে আর জেলে বন্দী করে রাখার সুযোগ নেই। আপনাদের এখানে যে কয়টি মেয়ে এসেছে তার অর্ধেক মেয়ে আমার দলে থাকলে ৭ দিনের মধ্যে হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করতাম।
জে এস ডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন,  আমরা সংলাপে গিয়েছিলাম। দেশকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, নির্বাচনে আসতে দিন। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ আমাদের সঙ্গে। ৭ দফা না মেনে, ৯০ ভাগ মানুষের কথা না শুনে নির্বাচন হতে পারেনা। মরতে হলে মরব, কিন্তু দাবি ছাড়ব না। নির্বাচন যদি না পেছান তাহলে ইসি অভিমুখে পদযাত্রা হবে। রোডমার্চ হবে। লং মার্চ হবে। চলতে থাকবে। আমাদের দাবি মানতে হবে। তা না হলে জনতার আাদলতে বিচার হবে আপনাদের। রাস্তায় নামব। কি করবেন?  জেলে নেবেন? আমি ৬ বার মারা গেছি। ১০ বছর এই জেলে ছিলাম।

নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে রাজশাহীতে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে জড়ো হন হাজার হাজার নেতাকর্মী। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না আলিয়া মাদরাসা মাঠে। এরই মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। বেলা ৩টার দিকে সমাবেশ স্থলে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ অন্যরা। তবে অসুস্থ্যতার কারণে সমাবেশে হাজির হতে পারেননি ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি মোবাইল ফোনে তার বক্তব্য দেন।

প্রসঙ্গত, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ইভিএম বাতিল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার বন্ধ করা, নির্বাচনে ম্যাজিট্রেসি পাওয়ার দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ ৭ দফা দাবিতে ঐক্যফ্রন্টের এ সমাবেশ।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।