নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি! পুনঃতফসিল চায় ঐক্যফ্রন্ট

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ  ঘোষিত তফসিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আপত্তি রয়েছে। ফ্রন্টের নেতারা বলেছেন, তড়িঘড়ি করে, সংক্ষিপ্ত সময় দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এটি সরকারেরই একটি এজেন্ডা, যাতে করে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন।

জানা গেছে, পুনঃতফসিলের দাবিতে আজ-কালের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনে যাবে ঐক্যফ্রন্ট। একইসাথে সরকারের সাথেও আলোচনায় বসতে পারে তারা।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংসদ ভেঙে দেয়াসহ সাত দফা দাবির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করার অনুরোধ করেছিল ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু সে দাবি উপক্ষো করেই গত বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ১৯ নভেম্বর, যাচাই-বাছাই ২২ নভেম্বর, প্রত্যাহার ২৯ নভেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ৫ ডিসেম্বর।

তফসিল ঘোষণার পর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তফসিল ঘোষণার পরপরই বিএনপি স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠক করেছেন। ২০ দলীয় জোটেরও মতামত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ঘোষিত তফসিল নিয়ে ঘোর আপত্তি ওঠে। এই তফসিলে কোনোভাবেই মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব নয় বলে তারা মনে করছেন। পাশাপাশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বেশ সময় থাকা সত্ত্বেও তড়িঘড়ি করে কেন তফসিল ঘোষণা করা হলো, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নেতারা।

জানা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট মনে করছে, পুনঃতফসিল হতে হবে। নির্বাচন কমিশন অভিমুখে যে পদযাত্রা কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে, সেটিও পালন করতে হবে।

স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার জন্য এটি খুবই সংক্ষিপ্ত সময়। এই সময় বাড়িয়ে পুনঃতফসিল দেয়া দরকার।
ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, নির্বাচন পিছিয়ে দিতে হবে। তারা ঘোষিত তফসিলের মধ্য দিয়ে এমন ফাঁদ পেতেছে যেন, আমরা নির্বাচন করতে না পারি। কিন্তু জনগণকে সাথে নিয়ে সব ফাঁদ ছিন্নভিন্ন করে ফেলা হবে। একতরফা নির্বাচন আমরা হতে দেবো না।

বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা জানান, সাত দফা দাবির সুরাহা না হওয়ায় দলের মধ্যে অনেকেই আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষে, কেউ কেউ আন্দোলন করে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। আবার কেউ কেউ আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। তবে দলের হাইকমান্ডের প্রায় সবাই আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষেই মত দিচ্ছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এখন আন্দোলন করলে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার আরো বেড়ে যাবে, নির্যাতনের মুখ পড়তে হবে। এতে শক্তি ক্ষয় হবে। নির্বাচন করার মতো নেতাকর্মী থাকবে না। পোলিং এজেন্ট দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই নির্বাচনের ফল নিজেদের পক্ষে আনতে তাদের নেতাকর্মীরা যাতে মাঠে থাকতে পারে ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মোকাবেলা করতে পারে; সে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার বার্তা অনেক আগে থেকেই তৃণমূলে দিয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। সবকিছু ঠিক থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে সেই ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে।
সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চাইছেন তার দল মনোনয়নপত্র দাখিল করুক। দাখিলের পর তারা পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচনে সরকার কতটুকু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে। নির্বাচন কমিশন কতটুকু শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি দেখে, নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যথাযথ ভূমিকা পালন করছে না, সেক্ষেত্রে আন্দোলন জোরদার করা হবে।

এ দিকে, রাজশাহীতে গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিশাল সমাবেশ করেছে। সমাবেশ শেষে সেখানে ফ্রন্টের নেতারা ঘোষিত তফসিল নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। তফসিল পিছিয়ে দেয়ার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন।

পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে সেই প্রসঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হবে। তবে সারা দেশে আমাদের জনসভা করতে হবে। নির্বাচন করতে হবে। জনগণকে আহ্বান জানাতে হবে তারাও যেন রাস্তায় ও ভোটকেন্দ্রে থাকে।
এ দিকে বিকল্পধারা বৃহস্পতিবার রাতেই নির্বাচনের তফসিল সাত দিন পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।