মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়ায় তাদের স্বাগত ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাকে শক্তিশালী করবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করাই সরকারের লক্ষ্য। জনগণ যাদের ভোট দেবে, তারাই বিজয়ী হবে। পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য তখনই সফল হবে যখন নির্বাচনে সবার জন্য লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিৎ হবে। তারা বলছেন, তফসিল ঘোষণার পর ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সরকার বা নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে তেমন কিছুই করেনি। রাজধানীসহ সারাদেশ এখনো নৌকার বিল বোর্ড, ব্যানার ও পোাস্টারে পরিপূর্ণ। এমনকি সরকারি অফিসের সামনেও নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে লাগানো বিলবোর্ডগুলো এখনো দৃশ্যমান। রাজধানীর এমন কোনো স্থান নেই যেখানে নৌকার বিল বোর্ড, পোস্টার বা ব্যানার পাওয়া যাবে না। এখনো রাজধানীর অধিকাংশ কমিশনার কার্যালয় ব্যবহৃত হচ্ছে নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে। এ ছাড়া থেমে নেই মামলা-গ্রেফতারও। গতকাল মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিনে সরকারের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার যদি নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিৎ না করতে পারে তাহলে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সেটি পুনর্বিবেচনা করবে।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গবর্নেন্স (এসআইপিজি)-এর অনারারি ফেলো অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পোস্টার দেখলেই তো বোঝা যায় লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ডটা কোথায়? তিনি বলেন, এমন নির্বাচন হোক যেখানে হয়রানি-ভয়ভীতি থাকবে না। বিরোধী জোটের সাত দফা মানা হয়নি। তারপরও সবাই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তারপরও বেসিক কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। নির্বাচনটা কতটুকু ফেয়ার হবে এবং ভোটাররা কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারবে। প্রশ্নগুলো রয়ে গেছে এই কারণে যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে যেখানে সংসদ রেখে এবং ৩৫০ জন এমপি স্বপদে থেকে নির্বাচন করবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমপিরা তৃণমূলে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেন। গত দশ বছরে পালাক্রমে একধরনের প্রভাব বলয় তারা সৃষ্টি করেছে। সেখানে এমপিরা অকার্যকর থাকবেন এটা ঠিক কথা নয়। সর্বোপরি আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন পর্যায় পর্যন্ত তাদের প্রভাবটা থেকে যাবে।
সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালো হয় এবং একইসঙ্গে ভোটারদের কাছে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে যদি গ্রহণযোগ্য হয় ও জেনারেল পারসেপশন যদি ভালো হয় তাহলেই এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচন ভালো হয় নি বলে পরবর্তী কোনো নির্বাচনই ভালো হয় নি। সব নির্বাচনে একই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে। কেন্দ্র দখল, জালভোট সব ঘটনাই ঘটেছে। যেখানে নির্বাচন কমিশনকে অতটা কার্যকর দেখা যায় নি। কাজেই আসন্ন নির্বাচনটা ভালো হলে বাকি নির্বাচনও ভালো হবে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যেকটি নির্বাচন কমিশন আস্থার সংকটে থেকে কাজ করেছে। কিছু কিছু নির্বাচন কমিশন সে আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলেও অনেক কমিশনই আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে নি। যারা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে তারা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পেরেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ভালো হয় নি বলে ওটার কনটিনিউটি বজায় রয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের দেশের যে সব প্রতিষ্ঠানগুলোর গণতান্ত্রিক ধারা ও জবাবদিহিতা অব্যাহত রাখার কথা সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এখান থেকে যদি আমরা বেরিয়ে আসতে না পারি তাহলে সমস্যা রয়েই যাবে।
অবাধ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রথমত হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। তারপর হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো সেই লক্ষ্যে কাজ করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব কিন্তু সরকার এবং সরকারের ইনস্টিটিউশন ও সিভিল সোসাইটির। সেটা যদি না হয় তাহলে গত ৫ বছরের মারামারি-হানাহানি, গুম-খুন ৪০ দিনে ঠিক করা যাবে না। লেভেল প্লেয়িংফিল্ডের কথা বলা হচ্ছে অথচ সেটা আগেই তো ছিল না। এই ৪০ দিনে কি করে হবে? পোস্টার দেখলেই তো বোঝা যায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কোথায়?
এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপে গায়েবি এবং রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং আর নতুন কোনো মামলা না দেয়ার কথা বলা হলেও সংলাপ চালাকালীন গত দশদিনে ১০০ মামলা হয়েছে। আর এই মামলাগুলোর সবই হয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এই মামলাগুলো হয়েছে ১ নবেম্বর থেকে ১০ নবেম্বরের মধ্যে। এই মামলাগুলোর ৯৭টির বাদী পুলিশ। বিএনপির নেতাদের দাবি, এই মামলাগুলো হয়রানিমূলক ও গায়েবি। এ ধরনের মামলার কথা ১ নবেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম দফার সংলাপে তুলেছিলেন বিএনপির নেতারা। তখন প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হবে না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের কদমতলী গোলচত্বরের কাছে ৬ই নব্ম্বের দুপুরে কিছু লোককে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটাতে ও গাড়ি ভাঙচুর করতে ‘দেখেছে’ পুলিশ। কিন্তু কদমতলীর স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিস্ফোরণ হলে অন্তত শব্দ শোনা যেত। ভাঙচুর হলে এলাকায় শোরগোল হতো। এ ছাড়া সেদিন সকাল থেকেই কদমতলী এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ভাঙচুরের ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে ১৩ জনকে গ্রেফতার করার কথা মামলায় উল্লেখ করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, সেদিন পুলিশ গাড়ি থেকে নামিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।
অন্যদিকে ৬ই নবেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের দিন ঢাকার ছয়টি থানায় ছয়টি মামলা হয়। এসব মামলায় গাড়ি ভাঙচুর, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি, পুলিশের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণসহ নাশকতার ঘটনার কথা উল্লেখ রয়েছে। ছয়টি মামলায় ঘটনাস্থল থেকে ১৩৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু যে এলাকায় এবং যে সময়ে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। উল্টো এসব ঘটনার বিবরণ শুনে স্থানীয় লোকজন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এই সময়ের মধ্যে ১ থেকে ১০ নবেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুর, কুমিল্লা, দিনাজপুর, ঝালকাঠি, কুষ্টিয়া, সিলেট, বরিশাল, বাগেরহাট, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নড়াইল, নওগাঁ, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বান্দরবান, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১০০টি মামলা হয়েছে। এসব মলায় ২ হাজার ৩৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর অজ্ঞাতপরিচয় আসামী আড়াই হাজারের বেশি।
এ ছাড়া গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে তিন টার দিকে মুজিবনগর থানার ওসি আব্দুল হাশেমের নেতৃত্বে উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তাজউদ্দিন খানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মাওলানা তাজ উদ্দিন খান মানিকনগর ডিএস আমিনিয়া আলিম মাদরাসার সিনিয়র মৌলভি শিক্ষক। মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হাশেম জানান, জেলা জামায়াতের আমীর তাজউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, বিষ্ফোরক ও নাশকতার ৬টি মামলা রয়েছে। মামলায় তিনি দির্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
সূত্র মতে, সব নাটকীয়তার পর অবশেষে ভোটের মাঠে সবাই। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দেশের সবক’টি রাজনৈতিক দল। বিশেষ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়ায় রাজনীতির আকাশে দীর্ঘদিনের ‘কালো মেঘ’ অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যেভাবে এগুচ্ছে তাতে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শভাগ প্রশ্ন থেকেই যাবে। তফসিল ঘোষণার পাঁচ দিন পোরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রয়েছে। মোটর সাইকেল নিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে শোডাউন করলেও নির্বাচন কমিশন কিছুই করছেনা। এ ছাড়া সারাদেশে থাকা নৌকার বিলবোর্ড গুলোও দৃশ্যমান। এমনকি নতুন করে নৌকার পক্ষে ব্যানার পোস্টার লাগানো হচ্ছে।
জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে ‘লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ)’ তৈরি করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ও সরকার ভোটের পরিবেশ সৃষ্টির কোনো চেষ্টাই করছেনা। রাজনৈতিক মামলায় কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও নতুন করে মামলা না দিতে নির্দেশনা দেয়া হলেও কার্যত সেটি শুধুই আইওয়াশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সব দল নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় রাজনীতির আকাশের অন্ধকার কিছুটা কেটে যাচ্ছে। সামনে সুন্দর আলোয় ঝলমলে দিনের প্রত্যাশা সবার। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে। নির্বাচনে এমন পরিবেশ হবে, যাতে নির্বাচনের পরিবেশ এবং নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলবে না। তবে সেটি নির্ভও করবে সরকার ও ইসির কার্যকলাপের ওপরই।
এ প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সব দল ভোটে আসায় এবারের নির্বাচন উৎসবমুখর হবে বলে সবার প্রত্যাশা। তবে এক্ষেত্রে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সবাইকে আস্থায় আনতে হবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্ন ভোট দিতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের কলংক থেকে মুক্তি পোতে সুষ্ঠু নির্বাচন করা ছাড়াও আওয়ামী লীগের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। তবে এখন নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু সরকার যদি না চায়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়। কারণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন সরকারের হাতে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল মনে করেন, বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নির্বাচনে আসা। এখন তাদের নির্বাচনের মাঠে রাখার দায়িত্ব সরকার ও ইসির।
লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, প্রধান বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বেড়ে গেল। কারণ বিরোধী জোট এত দিন স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সুযোগ পায়নি। সরকারি দল ও তাদের জোট দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে গেছে। কিন্তু বিরোধী জোট সভা-সমাবেশের সুযোগ পায়নি। এখন সময় খুব কম। এ অবস্থায় সব দল যাতে সমান সুযোগ পায় সে ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচন কমিশনের ওপর বিরোধীদের আস্থা কম, সে কারণেই তাদের প্রমাণ দিতে হবে যে তারা নিরপেক্ষ এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে তাদের গাফিলতি নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি আশঙ্কা ছিল, সরকার এবারও ২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করতে পারে। সেই আশঙ্কাটি দূর হয়েছে। এখন মানুষ দেখতে চায়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে কি না? আর সেটা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড প্রসঙ্গে কলামিস্ট সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। কোনো প্রার্থীর ব্যাপারে যাতে অপপ্রচার, বিদ্বেষমূলক আচরণ ও পক্ষপাতিত্ব না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারি দল যাতে অতিরিক্ত কোনো ক্ষমতা প্রয়োগ না করতে পারে, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ ও গবেষক মনে করেন, এখন যে মনোনয়ন ফরম কিনতে এসে শোডাউন হচ্ছে, এটা নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, এটা একেবারেই বাজে সংস্কৃতি। এটা অনলাইনে দিয়ে দেওয়া উচিত। আর ফরমের মূল্য ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া অন্যতম ভূমিকা পালন করতে হবে মিডিয়াকে। কোনো প্রার্থী যদি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন, তাহলে সেটা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে। আর নির্বাচন কমিশনকেও সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, এবার যদি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন না হয় তাহলে তার দায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের।
Check Also
ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন
আবুল হোসেন সদর প্রতিনিধি : ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ …