বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিভিন্ন থিংক ট্যাংক ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মকর্তারা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসকে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে কার্যকর উদ্যোগ নেবার কথাও বলেন কেউ কেউ। সরকারকে বাংলাদেশ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে জোর আরোপ করেন বক্তারা। বাংলাদেশে অব্যাহত গুম ও খুনের ঘটনা অসহনীয় পর্যায়ে উপনীত হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্র হাউস কংগ্রেসের টম লেন্টুস হিউম্যান রাইটস কমিশনে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ উদ্বেগের কথা জানান ব্রিফিংয়ে অংশ নেয়া প্যানালিস্টরা। ব্রিফিংটির আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্র হাউজ কংগ্রেসের টম লেন্টুস হিউম্যান রাইটস কমিশনের কো-চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান র্যান্ডি হিউল্টন ও কংগ্রেসম্যান জেমস পি ম্যাকগভার্ন।
ন্যাশনাল এন্ডুমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির এশিয়া অঞ্চলের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনা দেবের সঞ্চালনায় ব্রিফিংয়ে প্যানালিস্ট বক্তব্য রাখেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডাইরেক্টর জহন সিফটন, ইউনাইটেড স্টেইটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের পলিসি অ্যানালিস্ট ওয়ারিস হোসাইন, ওয়ার্ল্ড ভিশন ইউএসএ’র সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার লাউরা বর্মন।
অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ও ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. জিয়া উদ্দিন।
জন সিফটন বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এক সংকটময় মুহূর্তে উপনীত হয়েছে। এবারের নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু হবে বলেও আশা করা কঠিন। কারণ বিরোধী দলের বহু নেতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারাগারে রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে রয়েছেন। এছাড়াও ১৯ জন বিএনপি নেতা গুম হয়েছে। প্রায় হাজারের মতো মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক কতজন লোক রাজনৈতিক কারণে কারাগারে আছেন তা নিরূপন করা কঠিন।
তিনি আরো বলেন, সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি এতই নাজুক যে, তা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা কঠিন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে আসছে। স্কুলছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে কথা বলায় সাংবাদিক শহিদুল আলমকে কারান্তরীণ করা হয়েছে।
এসময় তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মানবাধিকার পরিস্থিতির উত্তরণে ইতোমধ্যেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসই পারে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে সরকারকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধ্য করতে। কারণ কংগ্রেসের এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এখন ডেমোক্রেটদের রয়েছে।
ওয়ারিশ হিউস্টন বলেন, নির্বাচনকে সামনে নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার আশংকা রয়েছে যেমনটি আগের নির্বাচনগুলোতে দেখা গিয়েছে। এছাড়াও তিনি কওমী সনদের স্বীকৃতি ও হেফাজতে ইসলামের কাছ থেকে সংবর্ধনা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। অবশ্য, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।