পর্যবেক্ষণে অনীহা বিদেশীদের:বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিদেশীদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। বিদেশী পর্যবেক্ষকদের এখন পর্যন্ত তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কিছু বিদেশী সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ দেখিয়ে যোগাযোগ করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেনি। ইসির জনসংযোগ শাখা সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য। তবে দেশী সংস্থাগুলো নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ দেখিয়ে প্রতিনিয়তই ইসির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারত ও নেপাল থেকে সর্বোচ্চ চারজন পর্যবেক্ষক এসেছিল বলে ইসির তথ্যে জানা গেছে। স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিতর্কিত হওয়ার আশঙ্কায় তারা পর্যবেক্ষণ করতে আসতে চাইছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছে।
সূত্রে জানায়, গত বছরের অক্টোবরে আগ্রহী পর্যবেক্ষক সংস্থার কাছ থেকে নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করে ইসি। একই বছরের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ইসির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৯টি সংস্থা আবেদন করে। পরে যাচাই-বাছাই শেষে চলতি বছর জুনে ১১৯টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় ইসি। কিন্তু শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে পর্যবেক্ষক সংস্থা অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। এমন অবস্থায় দেশী ১১৮টি সংস্থা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে বলে আশা করছে ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা। নিবন্ধিত ১১৮টি সংস্থা ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবে।
কতটি বিদেশী সংস্থা এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, কিছু কিছু বিদেশী সংস্থা এরই মধ্যে আগ্রহ দেখিয়ে ইসির সাথে যোগাযোগ করেছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারব।
ইসির অন্য একটি সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তারা পর্যবেক্ষণ করবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে, তার দেশের কেউ এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ইউএসএইডের বাঙালি কর্মকর্তাদের একটি ক্ষুদ্র টিম কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করবে বলে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে। একই কারণে, ইউএনডিপির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমেও কোনো বিদেশী প্রতিনিধি থাকবে না।
ইসির তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ যাবৎকালের সবচেয়ে কম বিদেশী (চারজন) নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসেন। এর মধ্যে ভারত থেকে দু’জন আর নেপালের দু’জন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশী পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি বিদেশী সংস্থার ৫৯ জন, ৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৩৩টি সংস্থার ২৬৫ জন, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩২টি দেশের ২১৫ জন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ৫৯৩ জন বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।
নির্বাচন বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদারের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে তারা কোনো বিতর্কিত নির্বাচন দেখতে আসবে না। কারণ ২০১৪ সালে একতরফা বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনপ্রক্রিয়া যেভাবে চলছে এতে অনেক বিদেশী পর্যবেক্ষক সংস্থার ধারণা এবার একতরফা না হলেও, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা কম।