সাতক্ষীরা জেলা শহরে চুরির হিড়িক : আতঙ্কে শহরবাসী

 

অনলাইন ডেস্ক ::

আজ এ পাড়ায় তো কাল ও পাড়ায় চুরির ঘটনা ঘটছেই। শহরে থেমে নেই চুরি। চোরের উপদ্রপ বেড়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। এতে করে শহরবাসি ভুগছে চোর আতঙ্কে। কিন্তু যে বাড়িতে চুরি হচ্ছে সে বাড়ির মালিকের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হচ্ছে না বিধায় পুলিশও চুরির কিনারা করতে পারছে না। এমনই তথ্য পাওয়া গেছে পুলিশ ও এলাকাবাসির কাছ থেকে।
এলাকবাসি জানান, দিন-রাত চুরির আতঙ্কে শহরবাসির ঘুম হারাম হতে বসেছে। প্রতিদিন শহরের কোন না কোন এলাকায় চুরি হলেও এসব চুরির কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এমন কি এসব চুরি মামলা গ্রহণ না করা, অভিযোগে সঠিক তদন্ত না করা, দিনে ও রাতে পুলিশের টহল বৃদ্ধি না করা, এলাকার চিহ্নিত চোরদের আটক না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে শহরবাসির মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি শহরে বেশ কয়েকটি চুরি সংগঠিত হয়েছে। গত ৮নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার শহরস্থ মুনজিতপুর এলাকার টিএন্ডটি অফিসের পূর্ব পার্শ্বে জেলা জজ কোর্টের এড. শেখ আজিজুর রহমানের নিজস্ব বাসভবনে চুরি হয়। এসময় চোরেরা আলমারী ও শোকেজের ড্রয়ার হতে নগদ টাকাসহ দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার এবং একটি ল্যাপটপ চুরি করে নিয়ে যায়। একই দিন সুলতানপুর এলাকায় সাংবাদিক আনিসুর রহিমের চাচাত ভাই আজিজুল হক বিরু ও পরের দিন মোতাসিম বিল্লাহর বাড়িতে চুরি হয়। সাতক্ষীরা সদর থানায় অভিযোগ জানানোর পর দু’জন পুলিশের এসআই সরেজমিনে দেখার পরদিনই আবারো দোতলার গ্রীল কেটে চোর ঢুকে পড়ে। সুলতানপুর সাহাপাড়ার কালিপদ নন্দীর বাড়িতে একইভাবে গ্রীল কেটে ও তালা ভেঙে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। সুলতানপুর পৌলসাহার বাড়িতেও বড় ধরনের চুরি হয়। সেখান থেকে চোরদের ব্যবহৃত ২৪ ইঞ্চি সেলাই রেঞ্জ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে জুম্মার নামাজের সময় পুলিশ কর্মকর্তা মহিদুলের বাসার তালা ভেঙে ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, নগদ টাকাসহ দামী সামগ্রী চুরি করে নিয়ে যায়। তিনি সুলতানপুর বিএম রাজ্জাকের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। একই এলাকার জেলা ও দায়রাজজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু সুফিয়ানের বাড়ির দোতলার ভাড়াটিয়া সরদার আবু সাঈদের বাসায়ও চুরি হয়। বাটকেখালি এলাকার এড. মিজানুর রহমানের বাড়িতেও ঘটেছে দু:সাহসিক চুরির ঘটনা।
সুলতান ঝিলপাড়ার শাহিনের বাড়িতে সকাল ৯টার পর দরজা ভেঙে নগদ দেড়লাখ টাকাসহ স্বর্ণালংকার চুরি হয়। সুলতানপুর আতি শেখের বাড়ির পাশের জিন্নাতের বাড়ি থেকে দিনের বেলায় নগদ টাকা ও স্বর্ণলংকার চুরি করে নিয়ে যায়। গড়েরকান্দার নূর ইসলামের বাড়িতে চোর দিনের বেলায় একইভাবে চুরি করে। এরআগে শহরের মর্নিং সান প্রি ক্যাডেট স্কুল, সাতক্ষীরা ছফুরননেছা মহিলা কলেজ, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়, বে-বার্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুল, জিএন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহরের মুনজিতপুরে উত্তরণ অফিস, শহরের মুন্সিপাড়ার রাশিদা স্কুল এ্যান্ড কলেজ, নবারুণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দিবা-নৈশ কলেজ, ফিংড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুনসিপাড়ার জনৈক ইনামুলের বাড়ি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদের বাসভবন, শহরের কামালনগর উদয়ন গার্লস হাইস্কুল ও আকিজ ফুডস্ অফিস, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানী এবং আরএসপিএল হেলথ্ বিডি লি. ও এশিয়ান কনজুমার কেয়ার প্রাইভেট লি. এর পরিবেশক স্বপন কুমার দেবনাথের আলিপুর স্টোর, ইটাগাছায় আফনান ফুডস্ অফিস, শহরের রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক শাহীনের কার্যালয়, শহরের মুনজিতপুর এলাকায় আব্দুর রশিদের বাড়ির ভাড়াটিয়া রাজিয়া সুলতানার বাসাসহ শহরের রাজারবাগান, মুনজিতপুর, কামালনগর, সুলতানপুর, পলাশপোলে বেশ কয়েকটি চুরি সংঘটিত হয়েছে। এসময় চোরের নগদ টাকা, স্বর্ণের গহনা, মোবাইল, ল্যাপটপসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়।
চুরি হওয়া কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা দিনের বেলায় বাসা ফাঁকা রেখে কর্মস্থলে গেলে চুরি সংগঠিত হচ্ছে। কিন্তু এ চুরির বিষয়ে মামলা করতে গেলে পুলিশ সরাসরি মামলা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ তাদের। জিডি নিয়ে তদন্ত করছে। কিন্তু সে তদন্তও তেমন কার্যকরী হচ্ছে না। আজ পর্যন্ত শহরের একটি চুরিরও মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি কোন চোরকেও আটক করা যায়নি।
তারা আরও বলেন, চুরি হলে প্রথম দিন তদন্ত করতে ঘটনা স্থলে যায় পুলিশ। তারপর আর কোনখোজ থাকে না। এমনকি শহরের রাতে যে পরিমান পুলিশ আগে টহল দিতে দেখা যেত এখন সে পরিমান টহল দিতে দেখা যায় না। এ সব কারণে বর্তমানে চুরি বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন ভুক্তভোগিরা।
তারা আরও বলেন, আমাদের মোবাইল, ল্যাপটপ এবং স্বর্ণে জিনিসপত্র চুরি যাচ্ছে। এগুলো কোন না দোকানে বিক্রয় করছে। তাছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ট্রাকিং করে চোর ধরা যেতে পারে সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা মোস্তাফজুর রহমান বলেন, আমরা দুটি অভিযোগ পেয়েছি। সে অভিযোগ দুটির মামলাও রেকর্ড করা হয়েছে। তাছাড়া চুরি ঢেকাতে ইতোমধ্যে টিম মাঠে কাজ করছে।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা যে সকল অভিযোগ পাচ্ছি সে সকল অভিযোগের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে চুরির ঘটনায় অভিযোগ আসছে কম। যাদের চুরি হচ্ছে তারা যদি এ বিষয়ে অভিযোগ করে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সুবিধা হয় বলে তিনি জানান।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।