ক্রাইমবার্তা রিপোট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ড. কামাল হেসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে সংবিধানের লঙ্ঘন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ইভিএম সংক্রান্ত এক সেমিনারে ঐক্য ফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব এই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সংবিধান লঙ্ঘন হবে ইভিএম ব্যবহার করলে। সংবিধানের বিরোধিতা হবে, রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে। এটা রাষ্ট্রীয় অপরাধ, সাংবিধানিক অপরাধ। এটা যদি নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে ব্যবহার করতে যায় আমরা আমাদের নেতা সংবিধান প্রণেতা আইন বিশেষজ্ঞ প্রবীন রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করবো। আমরা ইভিএম ব্যবহার করতে পারবে না, করতে দেবো না। ভোটার ও জনগণ করতে দেবে না।
গুলশানে লেকশোর হোটেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে ‘ইভিএমকে না বলুন, আপনার ভোটকে সুরক্ষিত করুন’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়। সেমিনারে ইভিএমে কিভাবে ভোট কারচুপি করা যায় মেশিনে প্রায়োগিক ব্যবহারে ভোট প্রদান করে তার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সেমিনারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের এমএ রকীব, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নুর হোসাইন কাশেমী, মুফতি মো: ওয়াক্কাস, মহিউদ্দিন ইকরাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, পিপিবি’র শামসুল হক, সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, তাজমেরী এস ইসলাম, অধ্যাপক অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শাকিল ওয়াহেদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শামীমুর রহমান শামীম, তাবিথ আউয়াল, বেবী নাজনীন, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের ২ (এ) ধারা উল্লেখ করে আ স ম রব বলেন, সেখানে বলা আছে, সংসদ গঠন হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। মেশিনে প্রত্যক্ষ করা যায় না। সংবিধানের বলা আছে ডাইরেক্ট। প্রশ্নবিদ্ধ ইভিএম এই শর্ত পূরণ করে না।
তাই সংবিধান সংশোধন করা ছাড়া ইভিএম ব্যবহার করা যাইবে না। প্রত্যক্ষ ভোটের একটি প্রধান শর্ত যে ভোট প্রদান থেকে শুরু করে সর্বশেষ ভোট গণনা পর্যন্ত সকল নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জনগণের কাছে উন্মুক্ত থাকতে হবে। ইভিএমের বর্তমান প্রস্তাব ও কাঠামো বাংলাদেশে মতো দেশে প্রচন্ডভাবে অগণতান্ত্রিক। জনগণের কাছে এই মেশিনের স্বচ্ছতা নেই, উন্মুক্ত নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা কোনো রাজনৈতিক দল, ভোটার ও জনগণ চায়নি ইভিএম ব্যবহার। আমরা যারা নির্বাচনের অংশী, যারা নির্বাচন করবো, করাবো, ভোট দেবো, জয়লাভ করবো, সরকার গঠন করবো, আমরা কেউ চাইলাম না। আপনি নির্বাচন কমিশন এতো উদ্যোগী কেনো? আসলে ঘটনা হলো আপনি গতবারের ১০ হাজার টাকার মেশিন এবার ২ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন। হারামটা জায়েজ করার জন্য, টাকাটা খাওয়ার জন্য। বিশ্বের জার্মানী, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে ইভিএম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেন আ স ম আবদুর রব। ইভিএমের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনেরা ভোট জালিয়াতি করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইভিএমে ভোট করতে দেয়া হবে না, আপনারা করতে পারবেন না। আমি নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, এটা সংবিধান বিরোধী, রাষ্ট্র বিরোধী, মামলা হবে জেলে যাবেন। আমরা ছাড়বো, দেশের ১৮ কোটি মানুষ ছাড়বে না।
একাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে ঐক্য ফ্রন্টের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনে আমরা যাবো, জাতি নির্বাচনে যাবে। সেই নির্বাচনকে অবশ্যই জনগণের রায়ে পরিণত করতে জনগণই যুদ্ধে লড়বে, ভোটের যুদ্ধে লড়বে। সেখানে কোনো কিছুই তাদেরকে আটকিয়ে রাখতে পারবে না। ভোট বিপ্লব হবে, জনগণ সেই ভোট বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার কাছে মনে হয়, বর্তমান সরকার এবার ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে বলে আমার সন্দেহ আছে। ইভিএমের এই রকম প্রেজেনেটশন আরো সব জায়গায় দেয়া দরকার। এতে মানুষ আরো সাহসী হবে। মূলত আমাদের দরকার মানুষকে সাহসী করে তোলা।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ভোটের দিন ভোটের মাঠে ভোট দিতে যান। এবার স্লোগানটা দিতে হবে নিরাপদ ভোট চাই, নিরাপদ ভোট কেন্দ্র চাই। আমরা একটা শঙ্কামুক্ত, প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন চাই। এই নির্বাচনের জন্য আমরা আমাদের দাবি উপস্থাপন করেছি। সর্বশেষ আমাদের দেশের জনগণের অভ্যুত্থান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আশা হারাবার কোনো কারণ কোনো নেই। এজন্য লড়াইটা চালাতে হবে আমাদেরকে। সর্বাত্মকভাবে সর্বাংশে মন-প্রাণ দিয়ে সবাইকে অংশ করতে হবে। কারণ যারা ক্ষমতায় বসে আছে- দেয়ার রাইডিং অন এ রানিং টাইগার। কোনো ছাড় দেবার উপায় নেই।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে জনগণের ভোট ডাকাতি করা। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, ভোট ডাকাতির পরিণতি হবে ভয়াবহ। এজন্য জনগণ এই সরকারকে কখনোই ক্ষমা করবে না।