সাতক্ষীরার চারটি আসন ধরে রাখতে চাই জামায়াত: এখনো ঝুলছে নৌকার বিলবোর্ড: লেভেল প্লেয়িংফিল্ডের দাবী

ক্রাইমবার্তা রিপোট:সাতক্ষীরা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার চারটি আসনে শক্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। প্রথীরা হলেন, সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিঠির সদস্য সচিব, সাবেক জেলা আমীর মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে সাতক্ষীরা জামায়াতের সাবেক আমীর কেন্দ্রীয় নেতা জননেতা মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ আসনে জামায়াতের বর্তমান জেলা আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাসার ও সাতক্ষীরা কর্মপরিষদ সদস্য, সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর) আসনের সাবেক এমপি মজলুম জননেতা মুক্তিযুদ্ধা গাজী নজরুল ইসলাম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার সবকটি আসনে জামায়াতের প্রার্থীর সাথে অন্যপ্রার্থীদের তুমুল প্রতদন্ডিতা হবে বলে সকলের ধারণা। কারণ এ জেলাতে দলটির রয়েছে শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান। এরই মধ্যে জোটের শরিক বিএনপির কাছে তারা জেলার সবকটি আসন দাবী করেছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়াতে এবার তারা জোটের প্রতিক বা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে জামায়াত নেতারা জানান। সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর হাফেজ রবিউল বাশার জানান, জেলার সবকটি আসনে জামায়াতের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। বিগত নির্বাচন গুলোতে তারা জনগণের বিপুল সমর্থন পেয়েছে। তাই জোটের কাছে জেলার সবকটি আসনের দাবী দলটির এ নেতার।
সূত্র জানাই সারা দেশে দলটির যে কটি শক্তিশালি নির্বাচনি আসন রয়েছে তার মধ্যে সাতক্ষীরার চারটি আসনই অন্যতম। ২০০১ সালের নির্বাচনে জেলার তিনটি আসনে জামায়াত প্রার্থীরা বিজয়ী হন। অবশ্য ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদেও অল্প ভোটে জেলার চারটি আসনে পরাজিত হন কাছে । ৫ জানুয়ারির নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত সাতক্ষীরার চারটি আসনে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এসময় সরকার দলীয় প্রশাস,দলীয় ক্যাডার বাহিনীর হাতে জামায়াত শিবিরের ৩০ জন নেতাকর্মী শাহাদাত বরণ করেন বলে দলীয় সূত্র জানায়। বন্দুক যুদ্ধে নামে জামায়াতের কয়েক জনকে হত্যা করা হয়। আটকের পর দু,পায়ে গুলি করা হয় এমন সংখ্যাও অনেক। দলটির নেতাকর্মীদের নামে মামলা করা হয় প্রায় ৫ হাজেরর মত। এসব রাজনৈতিক মামলায় আটক করা হয় প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে। দলটি বলছে সংখ্যা আরো বেশি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অফিস গুলোতে এখনো তঅলা ঝুলছে। এত কিছুর পরও বিগত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে সাতক্ষীরায় জামায়াতের প্রতিরোধ দেশবাসির নজরে আসে। জনসমর্থন বাড়ে দলটির প্রতি। পরবর্তিতে উপজেলা ও ইউনিয়নপরিষদ নির্বাচনে জামায়াত বিপুল ভোট পাই। উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইসচেয়ারম্যান সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াতের প্রার্থীরা জয়ী হন। তাই সাতক্ষীরার চারটি আসনের জয়-পরাজয়েই জামায়াতের উপর অনেকটা নির্ভরশীল।
গত কয়েক বছর ধরে জেলাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেই। আ’লীগের দলীয় কোন্দল মেটাতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাতক্ষীরাতে সফরও করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রয়েছ চরম দলীয় কোন্দল। রয়েছে দলের ত্যাগী নেতাদের মুল্যায়ন না হওয়ার অভিযোগ।
অন্যদিকে ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বও জেলা শিল্পকলাতে বিএনপির বর্ধিত সভা চলাকালে জেলা মৎস্যজীবী দলের সাবেক সম্পাদক সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ভিপি আমানউল্লাহ আমানকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। ওইদিন রাতে তার মা ফাতেমা খাতুন বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা করেন। ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর সদর থানার এস.আই আবুল কাসেম ৮৯ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলায় জেলা বিএনপির অর্ধশতাধীক নেতাকর্মীকে কারা ভোগ করতে হয়েছে। দলীয় কোন্দল মেটাতে হিমশিম খাই দলটি।
এদিকে বিগত দশম জাতীয় সংসদ (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী) নির্বাচনে সাতক্ষীরার চারটি আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের তিনজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, সরকারি বিদ্যালয়ে নাইটগার্ড নিয়োগ এবং বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক, কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ-দুর্নীতি, কাবিখা ও কাবিটা এবং সোলার প্যানেল বাণিজ্যেও ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জেলার চারজন এমপি’র মধ্যে তিন জনের আমালনামা খুবই খারাপ। তারা এলাকায় চরমভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। এদেরকে আবারও চৌদ্দদলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে তাদের জয়ী হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। তাদের জনপ্রিয়তায় রিতিমতো ধস নেমেছে।
সাতক্ষীরায় ইতোমধ্যে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ এমপিরা শিক্ষা খাতে যে নিয়োগ বাণিজ্য করেছে তা আকাশ ছোঁয়া, নজীর বিহীন। লাখ লাখ টাকা ছাড়া পিয়ন পর্যন্ত কেউ চাকরি পায়নি। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় নিয়োগ দেওয়া , বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিং বরাদ্দের নামে কোটি টাকার ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এদের কারো কারো বিরুদ্ধে। চিহ্নিত এসব দুর্নীতিবাজরা আবারও চৌদ্দদলীয় মনোনয়ন পেতে লাখ লাখ টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু এবার চৌদ্দদলীয় জোটের মনোনয়ন পাওয়া তাদের জন্য কঠিন। আর মনোনয়ন দেওয়া হলেও তারা জামানাত বাঁচিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে ফিরে আসতে পারবেন না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের তৃণমুল থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা।
সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগ জোটের একাধিক নেতা জানায়, কোন এমপি কি পরিমান দুর্নীতির সাথে জড়িত তা সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে স্পষ্ট। কেই মুখে বলুক আর নাই বলুক দুর্নীতিবাজ এমপিরা সাতক্ষীরার মানুষের কাছে চিহ্নিত। যারা ৫ বছর আগেও এই শহরে রিক্স-ভ্যানে চলাচল করতো, এমপি হওয়ার পর তারা এখন কোটি টাকার মালিক।
বিগত নির্বাচনে জেলাতে জামায়াতের সাথে মহাজট প্রার্থীদের প্রতিদন্ডিতা হয়ে ছিল। এর মধ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসনে জামায়াতে ইসলামীর আবদুল খালেক মন্ডল ১,১৪,৫১৭, সাতক্ষীরা-৩ আসনে রিয়াসত আলী বিশ্বাস ১,৩৩,৮০২, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ভোট পান ১,১৭,৬৭৫ । সিমীত ভোটে পরাজিত হন দলটির প্রাথীরা। ১৯৭৯ সালের (জিয়াউর রহমানের আমলে) জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরার তিনটি আসনে মুসলিম লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে জামায়াতের এড. শেখ আনসার আলী এবং সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে কাজী শামছুর রহমান নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও জামায়াতের প্রাথী হিসেবে তিনি সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরার পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনেই জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে একমাত্র সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে কাজী শামছুর রহমান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে আবার সাতক্ষীরা ২, ৩ ও ৫ এই তিনটি আসন পায় জামায়াত। ২০১৩ সালের ইউপি নির্বাচনে জেলার সাতটি উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬টি, বিএনপি ৩০টি, জামায়াত ২৭টি এবং জাতীয় পার্টি পাঁচটিতে নির্বাচিত হয়। ২০১৩ সালের সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের একজন এবং বিএনপি-জামায়াতের ১৩ জন চেয়ারম্যান ছিল। তালায় ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ, বাকি ১০টিতে জামায়াত-বিএনপির সমর্থকেরা চেয়ারম্যান। কলারোয়ার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনটি, বাকি নয়টিতে জামায়াত-বিএনপির সমর্থকেরা চেয়ারম্যান। দেবহাটায় পাঁচটির মধ্যে আওয়ামী লীগের দুজন ও জামায়াতের তিনজন চেয়ারম্যান। কালীগঞ্জে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে জামায়াত-বিএনপির নয়জন এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির তিনজন চেয়ারম্যান। শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০ জন জামায়াত-বিএনপি ও দুজন আওয়ামী লীগের সমর্থক চেয়ারম্যান রয়েছেন। আশাশুনিতে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটিতে আওয়ামী লীগ এবং বাকি চারটিতে জামায়াত-বিএনপির চেয়ারম্যান।
এবার

এদিকে জেলাতে ভোটের আমেজ শুরু হলেও গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতেরও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে কোনো সময়ে গ্রেফতার হতে পারেন বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। এ আশঙ্কা থেকে অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। এড়িয়ে চলছেন জনসমাগম। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে নির্বাচনী ইমেজ প্রবাহিত হলেও বিএনপি ও জামায়াত অনেকটা নিরব ভূমিকা পালন করছে।
সরকারী নির্দেশ অমান্য করে জেলা ব্যাপি এখনো নৌকার বিল বোর্ড, ব্যানার ও পোস্টারে পরিপূর্ণ। লেভেল প্লেয়িংফিল্ডের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা ভিন্ন। বিএনপি জামায়াতের কোন নেতা কর্মীরা এখনো ভোটের মাঠে দেখা মিলেনি। নির্বাচনে ‘লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ)’ দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তার দেখা নেই বলে বিএনপি জামায়াতের অভিযোগ ।
এর পরও জেলার ভোটের মাঠ ও ভোট কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ রাখতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দলটি বলে সূত্র জানায়। দলটির নেতাকর্মীদের দাবী কোন ভাবে কেন্দ্র দলখ করে ভোট ডাকাতি করতে দেয়া হবে না।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেলা প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান জানান, জেলাতে নির্বাচনি পরিবেশ নেই। পুলিশ এখনো বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। যখন সরকার দলীয় লোকেরা সভা সমাবেশ সহ যাবতীয় কর্মসূচি নির্বিগ্নে পালন করে যাচ্ছে। তখন বিএনপি জামায়াত তাদের দলীয় অফিস খুলতে পারছে না। এমন কি পুলিশ প্রতিদিন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি সহ অর্থবাণিজ্য করে চলেছে। নির্বাচন কমিশন সব দলের জন্য নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টির কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটাই আশাকরছেন জামায়াতের এ নেতা। –

Check Also

তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।