ধানের দামে কৃষকের লোকসান ॥ লাভবান ব্যবসায়ীরা

রাজশাহী অফিস : রাজশাহী অঞ্চলে ধানের দামে উৎপাদন ভালো হলেও দাম পাচ্ছেন না কৃষকেরা। ফসল উৎপাদন করে তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। অন্যদিকে কম দামে ধান কিনে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এসময় রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে চলছে ধান কাটার উৎসব। ঘরে নতুন ধান উঠলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। একদিকে উৎপাদনে খরচ বেশি, অন্যদিকে বিক্রির বেলায় দাম কম। কিন্তু ধান কিনে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন ঠিকই। রাজশাহী কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মূলত স্বর্ণা আমন উঠছে। রাজশাহী অঞ্চলে এবার ৭৫ হাজার ১৬৬ হেক্টর জমিতে এই ধানের চাষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার শেষ হিসেব মতে ৩২ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এর গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৭.৫৭ টন।
এবারের  মওসুমে বৃষ্টিপাত যথেষ্ট না হওয়ায় অনেকটাই সেচ ব্যবস্থার উপর নির্ভর ছিলো আমন চাষ। কৃষকদের বিভিন্ন উপায়ে জমিতে সেচ দিয়ে ধান চাষ করতে হয়। ফলে আগের চেয়ে এবছর ধান চাষে বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। সেই তুলনায় ধান বিক্রিতে সুবিধা করতে পারছেন না কৃষকরা। কৃষিবিদরা বলছেন, বৃষ্টিপাত কম হলেও কৃষকরা সেচ দিয়ে ধান চাষ করেছেন। গত বছরের তুলনায় এবছর ধানের ফলনও ভালো। পবা এলাকার একজন কৃষক জানান, তিনি সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে স্বর্ণা ধান চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর বিঘাপ্রতি সাত থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয় ধান চাষে। এবছর বর্ষণ না থাকায় সেচ দেয়ার কারণে খরচ বেড়েছে। তিনি আরো জানান, ‘ধার-দেনা করে ধান চাষ করেছিলাম। ধান বিক্রি করে টাকা পরিশোধের কথা ছিলো। এখন ঘর থেকে টাকা পরিশোধ করতে হবে।’ অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা আমন ধান কৃষকদের থেকে ৬৭৫ থেকে ৭শ’ টাকা মণ (৪০ কেজি) দরে কিনছেন। তারা অল্প দামে ধান কিনে চাল করে দ্বিগুন দামে বিক্রি করছে। গোদাগাড়ীর একজন ব্যবসায়ী জানান, ১৫ দিন আগে থেকে নতুন ধান বেচা-কেনা শুরু হয়েছে। নতুন ধান উঠায় বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। বাজারে ‘সুমন স্বর্ণা’ বা ‘স্বর্ণা-৫’ কৃষকদের থেকে কেনা হচ্ছে ৭শ’ টাকা মণ দরে, ৫১ ধান ৬৯০ টাকা ও গুটি স্বর্ণা ৬৭০ টাকা থেকে ৬৭৫ টাকা মণ দরে কেনা হচ্ছে। অপর এক কৃষক জানান, বর্তমানে খুব ভালো ধান প্রতি কেজি সাড়ে ১৭ টাকা দরে আড়তদাররা কিনছেন। সেই তুলনায় ধানের থেকে চালের দাম বেশি। এতে ব্যবসায়ীরা ধান কিনে লাভবান হচ্ছেন। আর কৃষক হাড় ভাঙা পরিশ্রম করেও দু’পায়সার মুখ দেখতে পাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, বর্তমানে শ্রমিকের মুজরি ও সারের দাম বেশি। তাই উৎপাদন খরচ বেশি। আর বিক্রির সময় দাম কম। এতে করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে উৎপাদন খরচ বিবেচনায় বাজার মনিটরিং করে ধানের দাম নির্ধারণ করা উচিত বলে জানান এই কৃষক।

Check Also

২০২৫-২০২৬ সেশনের কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের ০৯টি ইউনিয়নের আমীরগণের শফথ গ্রহণ

ড. মিজান সাংবাদিক কালিগঞ্জ: আজ ২২ ডিসেম্বর বিকাল ০৪ টায় উপজেলা জামায়াত অফিসে ০৯ টি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।